ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ করতে চায় আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় কোম্পানির সঙ্গে

প্রতিযোগিতা আনতে গ্যাস কূপ খননে বাপেক্স যৌথ উদ্যোগ নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রতিযোগিতা আনতে গ্যাস কূপ খননে বাপেক্স যৌথ উদ্যোগ নিচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ তেল গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলন কোম্পানি (বাপেক্স)। সম্প্রতি দেশের চারটি কূপে গ্যাস উত্তোলনে উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয় কোম্পানিটি। তাদের দর বাপেক্স-এর দরের কাছাকাছি হওয়ায় সরকার কোম্পানিটির কাছ থেকে আরও সহযোগিতা গ্রহণের চিন্তা করছে। জ¦ালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, তুলনামূলকভাবে সকার এর তেল-গ্যাস উত্তোলনের খরচ বেশ কম। এজন্য সকার কোন কোন ক্ষেত্রে বাপেক্সকে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হকের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজারবাইজান সফর করেছেন। ওই প্রতিনিধি দলে জ¦ালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও বাপেক্স-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম, লেজিসলেটিভ ও সংসদ, অর্থ, জ¦ালানি বিভাগ এবং বাপেক্স-এর কর্মকর্তারা আজারবাইজান সফর করেন। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, রিগ ভাড়া ধরলে বাপেক্স-এর একটি গ্যাস কূপ খনন করতে ১০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয়। যেহেতু সরকার বাপেক্সকে রিগ কিনে দিয়েছে তাই বাপেক্স নিজস্ব রিগে কূপ খনন করায় খরচ কমে আসে। সকার বলছে তাদের দর ১১ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গ্যাজপ্রম দেশে যে কূপ খনন করছে তার দর ১৮ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ১৫ টি কূপ খনন করেছে গ্যাজপ্রম। রাশিয়ান এই কোম্পানিটি নিজেরা কাজ পেলেও তারা তৃতীয় পক্ষ একটি চীনা কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করায়। জ¦ালানি বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্যাজপ্রমকে দিয়ে কাজ করানোর পর কূপের আনুষঙ্গিক সকল বিষয় দেখে রাখতে চাইলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক বিষয়ে কোম্পানিটি গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে বাপেক্স-এর একাধিক বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সূত্র জানায়, ভারসাম্য আনার জন্যই আজারবাইজানের কোম্পানিকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এখন দেশে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমই এককভাবে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে। কম দামে অন্য কোন কোম্পানিকে দিয়ে গ্যাস কূপ খনন করানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে একটি ভারসাম্য আসবে। সেক্ষেত্রে তুলনামূলক অনেক কম দামে কাজ করানো সম্ভব হবে। বাপেক্স সূত্র জানায়, দুই দেশের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পর্যায়ে চুক্তিটি সই হবে। দেশের কোথায় কোথায় সকার বাপেক্সকে সহায়তা করতে পারে তা নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে। সম্প্রতি সকারের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তাতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট। এখন আজারবাইজানের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। দুই পক্ষের আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ ভারত, চীন, মালেশিয়াসহ বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করার জন্য সরকারী পর্যায়ে সমঝোতা (এমওইউ)। কিন্তু জ¦ালানি বিভাগে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে খনিজ উত্তোলন অনুসন্ধান কাজে কোন সমঝোতা নেই। তবে জ¦ালানি (এলএনজি) আমদানিতে কাতার এবং ইন্দেনেশিয়ার সঙ্গে জ¦ালানি বিভাগের এমওইউ রয়েছে। এর আগে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য তিন কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে নতুন তিনটি কূপ খনন করতে সকারের সঙ্গে পৃথক চুক্তি হয়েছে। কূপগুলো হলো সেমুতাং দক্ষিণ-১, মাদারগঞ্জ-১ ও বেগমগঞ্জ-৪ অনুসন্ধান কূপ খননের জন্যে ইতোমধ্যে বাপেক্স চুক্তি করেছে সকারের সঙ্গে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থায়নে ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ সময়ের জন্য বাপেক্স বিশেষ উদ্যোগের ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় কূপগুলো খনন করা হবে। সকার আজারবাইজান ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করে। একই সঙ্গে তারা আজারবাইজানে গ্যাস বিতরণও করে থাকে।
×