ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোস্টগার্ডে যুক্ত হবে ড্রোন হেলিকপ্টার, অফশোর পেট্রোল ভেসেল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কোস্টগার্ডে যুক্ত হবে ড্রোন হেলিকপ্টার, অফশোর পেট্রোল ভেসেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোস্ট গার্ডকে আরও আধুনিক করার পরিকল্পনা রয়েছে। আরও শক্তি বৃদ্ধি করতে বাহিনীটিতে যুক্ত করা হবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, অফশোর পেট্রোল ভেসেলসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি। স্বল্প জনবল নিয়েও বাহিনীটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ভৌগলিক নির্দেশক ইলিশ মাছ রক্ষা করে দেশবাসীর কাছে এবং বৈদেশিক মূদ্রা আহরণের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বাহিনীটি। বাহিনীটিকে নিয়মিত জনবল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা করে দেশের উন্নয়নে নানাভাবে অবদান রাখছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বুধবার শেরেবাংলা নগর কোস্ট গার্ড সদর দফতরে প্রধান অতিথি হিসেবে বাহিনীটির ২৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, কোস্ট গার্ডের নিজস্ব জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বাহিনীটির শক্তি আরও বাড়ানোর জন্য যা যা করণীয়, সবই করা হবে। কারণ কোস্ট গার্ডের কল্যাণে ইলিশ মাছ রক্ষা পাচ্ছে। যার সুফল পাচ্ছেন দেশের প্রতিটি মানুষ। বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা আসছে ইলিশ থেকে। এছাড়া চোরাচালান, মানবপাচার, নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে বাহিনীটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর তাতে সহায়তা করছে নৌবাহিনী। কোস্টগার্ডের কল্যাণে অন্তত ৪০ বছর পর বিশ্বের কাছে নিরাপদ বন্দর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে চট্টগ্রাম। ব্লু ইকোনমি যুগে প্রবেশ করতে দেশকে সহায়তা করছে কোস্ট গার্ড। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে কোস্ট গার্ড। রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মায়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ঢাকায় সফররত মায়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গা ও ইয়াবাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা চলছে। এরআগে মন্ত্রী কোস্ট গার্ডের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মারুফসহ (এনডি) ২২ কর্মকর্তা, ১৬ নাবিক ও ২ বেসামরিক কর্মকর্তা- কর্মচারীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ন কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পদক পরিয়ে দেন। এর আগে বাহিনীটির প্রধান রিয়ার এ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোস্ট গার্ড যেকোন প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে প্রস্তুত। এজন্য কোস্ট গার্ডের দরকার প্রয়োজনীয় উপকরণ। প্রয়োজনীয় উপকরণ পেলে বাহিনীটি এক সময় বিশ্বের অন্যান্য কোস্ট গার্ড বাহিনীর মত আন্তর্জাতিকমানের কোস্ট গার্ড বাহিনীর সমতূল্য হয়ে গড়ে উঠবে। বাহিনীর নিজস্ব জনবল নেই। নিজস্ব জনবল নিয়োগ জরুরী। কারণ কোস্ট গার্ড দেশের পুরো সমুদ্র এলাকা ও অভ্যন্তরীণ জলসীমার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। এজন্য কোস্ট গার্ডকে বলা হয় ‘গার্ডিয়ান এ্যাট সি’ অর্থাৎ সুমূদ্রের অভিভাবক। জলজ সম্পদ, চোরাচালান দমন, মানবপাচার রোধ, উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিত, পরিবেশ দূষণ রোধ, জীববৈচিত্র রক্ষা, জলদস্যু ও বনদস্যুতা এবং মাদকদ্রব্য প্রতিরোধই বাহিনীর প্রধান কাজ। সমূদ্র ছাড়াও দেশের সব নৌপথ, সুন্দরবনের ভেতরের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও বঙ্গোপসাগরে পতিত সব নদ-নদীর মোহনা থেকে উজানে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে বাহিনীটি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমূদ্র এলাকা পাওয়া যায়। জলসীমানায় নতুন অংশ যুক্ত হওয়ায় বাহিনীটির দায়িত্বও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই গত ৮ বছরে বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে ছোট বড় জাহাজ, বোট, প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সিজি বেইজ অগ্রযাত্রাসহ অনেক কিছু। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে কয়েকটি অত্যাধুনিক অফশোর পেট্রোল ভেসেল যুক্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা হলে গভীর সূমুদ্রের তেল-গ্যাস রক্ষা ও এসব সম্পদের খোঁজার কাজ করা যাবে। এতে করে দেশ লাভবান হবে। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে বাহিনীটি। বিশেষ করে মা ইলিশ মাছ রক্ষা ও জাটকা নিধনে গুরুত্বপূর্ন কাজ করে যাচ্ছেন তারা। মাদকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও সফলতা দেখাচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনসহ সামরিক ও বেসামরিক অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়াকে অন্য কারাগারে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেই ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি এ কথা বলেন, এতিমদের টাকা আত্মসাতের মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে স্থানান্তরের কোন পরিকল্পনা নেই। কারণ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সবচেয়ে নিরাপদ। কারাগারের পরিবেশ অনেক ভাল। ডেকেয়ার সেন্টারে রাখা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। সেখানেই ডিভিশনের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে কোস্ট গার্ডের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপির তরফ থেকে খালেদা জিয়াকে নোংরা ও অনিরাপদ পরিবেশে রাখার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। কারণ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে- কেয়ার সেন্টারে রাখা হয়েছে তাঁকে। তিনতলা ওই ডে-কেয়ার সেন্টারটির ভবন নতুন। সেখানে যথাসম্ভব ডিভিশনের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার অন্যান্য যেকোন কারাগারের চেয়ে বেশি নিরাপদ। এজন্য খালেদা জিয়াকে স্থানান্তরের কোন চিন্তাভাবনা নেই। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এতিমদের টাকা আত্মসাতের মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের এবং তার ছেলে তারেক রহমানকে দশ বছরের সাঁজা দেয় বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত। ওই দিন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই রায় পড়ে শোনানো হয়। এরপর আদালত থেকে খালেদা জিয়াকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। যদিও কারাগারটির কার্যক্রম প্রায় ২ বছর আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে নির্জন কারাগারটিতে খালেদা জিয়াই একমাত্র বন্দী হিসেবে রয়েছেন। যদিও খালেদা জিয়াকে রাখা উপলক্ষে কারাগারের ভেতরে ও বাইরের নিরাপত্তা আগের যেকোন সময়ের তুলনায় বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে। যদিও খালেদা জিয়াকে কারাগারের জেল সুপারের পুরনো অফিস ভবনেই প্রথম দুই রাত কাঁটাতে হয়েছে সাধারণ বন্দীর মতো। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের গ্রেফতারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের গ্রেফতারে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। ফাঁসকারীদের মধ্যে যদি কোন রাঘববোয়াল থাকে, তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দারা কাজ করে যাচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তারা গ্রেফতারের আওতায় আসবে। এদিকে ঈশ্বরদীতে বুধবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত দুইজন থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে।
×