ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিছুতেই কাজ হচ্ছে না ॥ পদার্থ বিজ্ঞান ও ফিন্যান্সের প্রশ্নও ফাঁস

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কিছুতেই কাজ হচ্ছে না ॥ পদার্থ বিজ্ঞান ও ফিন্যান্সের প্রশ্নও ফাঁস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ্যাকশনেও বন্ধ হচ্ছে না প্রশ্ন ফাঁস। মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও যথারীতি পরীক্ষার আগ মুহূর্তে হোয়াটসএ্যাপে পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ মিলেছে। চট্টগ্রামে ফাঁসে জড়িত ৩৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আশ্বস্ত করে বলেছেন, একটু অপেক্ষা করুন। প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রকে ধরে ফেলব। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ বা ইন্টারনেট বন্ধ কোন সমাধান নয়। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে পদার্থবিজ্ঞানের বহুনির্বাচনি অভীক্ষার ‘গ সেট’র প্রশ্ন উত্তরপত্রসহ হোয়াটসএ্যাপে পাওয়া গেছে। এরপর তা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পরেই সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং-এর ‘ঘ’ সেট’র প্রশ্নপত্রও পাওয়া যায় হোয়াটসএ্যাপ গ্রুপে। পরীক্ষা শেষে এই দুই সেট প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে ফাঁস হওয়া সেটের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৯ দিনের পরীক্ষার প্রতিদিনই প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য মিললো। এদিকে মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, একটু অপেক্ষা করেন। প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রকে ধরে ফেলব। সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা রোজ এ্যারেস্ট করছি। যারা এর সঙ্গে লিঙ্ক আছে তাদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। সরকার বলছে না প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তবে ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রেফতার করার বিষয়টি সাংঘর্ষিক কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রেফতার করছি সঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছি, এরা এ কাজের সঙ্গে জড়িত, প্রশ্ন ফাঁস হলো কি-না সেটা শিক্ষামন্ত্রী জানেন। প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে বলে হইচই করছে, কিংবা পয়সার লেনদেন করছে, কিংবা ফাঁসের চেষ্টা করছে, সেগুলো আমরা দেখছি। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের ধরা হচ্ছে না-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটু অপেক্ষা করেন। যারা এ ধরনের ফাঁস করেন, কিংবা চেষ্টা করেন সেই চক্রকে আমরা ধরে ফেলব। আমার সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ নিয়ে যারা (প্রশ্ন ফাঁস) করছে তাদের ধরে ফেলব। এদিকে প্রশ্ন ফাঁসের অপরাধে গ্রেফতারও চলছে। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে রাজধানীতে সাব্বির আহমেদ (১৯) নামে একজনকে আটক করেছে র‌্যাব-২। আগারগাঁও তালতলা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। র‌্যাব-২ এর অপারেশন অফিসার এএসপি ফিরোজ কাউসার জানান, আটক সাব্বির ধামরাই এলাকার একটি সরকারী কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সে তালতলা এলাকার বাসিন্দা। ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসএসসির প্রশ্ন সরবরাহ করে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতো সাব্বির। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রামে বাসে প্রশ্ন, ৩৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ॥ ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, কড়াকড়ি আরোপ এবং কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে কারও কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে গ্রেফতারের নির্দেশনা জারির পরও ঠেকানো যায়নি প্রশ্নফাঁস। ফাঁস হয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র। প্রশ্নপত্র মিলেছে মোবাইল ফোনের হোয়াটএ্যাপ ডিভাইসে। এ ঘটনায় জড়িত মোট ৩৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ এলাকায় পরীক্ষার্থী বহনকারী একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ। শ্যামলী পরিবহনের এ বাসটি পটিয়া থেকে পরীক্ষার্থী নিয়ে আসছিল বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (বাওয়া) কেন্দ্রে। এরা সকলেই চিটাগাং আইডিয়াল স্কুলের পটিয়া শাখার শিক্ষার্থী। গোপন তথ্যে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোরাদ আলীর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতে একটি টিম ওই বাসে তল্লাশি চালায়। মোবাইল ফোন তল্লাশিতে ৭/৮ জনের সেটে পাওয়া যায় পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র। তারা এক ফোন থেকে অন্য ফোনে প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্র আদান প্রদান করছিল। তল্লাশিতে ধরা পড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই বাসের এক শিক্ষকসহ মোট ৫৬ জনকে আটক করে। পরে তাদের আলাদা কক্ষে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, ওই ৫৬ জনের মধ্যে সকলেই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিল না। এর মধ্যে যারা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ মেলেনি। ওই বাসে থাকা বিজ্ঞান বিভাগের ২৪ শিক্ষার্থীর সকলকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া সরাসরি প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত অর্থাৎ যাদের মোবাইল ফোনে প্রমাণ মিলেছে এমন ৯ ছাত্র এবং ১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন ইনস্টিটিউটের ২ শিক্ষার্থী এবং ১ অভিভাবকের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছে। নগরীর বাইরে ফটিকছড়িতে মামলা দায়ের হয়েছে ৭ পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এদের বিরুদ্ধেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান জানান, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার প্রশাসনের। প্রশ্নপত্র ফাঁস করা একটি ফৌজদারি অপরাধ। জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রমাণসাপেক্ষে প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিলেটে এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ অথবা ইন্টারনেট বন্ধ করে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব নয়। বরং কী ভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। সিলেটের মীরের ময়দানে বিশ্ব বেতার দিবসের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ এর সঠিক সমাধান নয়। প্রশ্নফাঁসের মূল কারণ উদ্ঘাটন করে এর সমাধান করাটাই সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন। জাফর ইকবাল বলেন, এভাবে প্রশ্নফাঁস চলতে থাকলে এদেশে শিক্ষার কোন গুরুত্ব থাকবে না। সরকারকে এগুলো বন্ধ করতে হবে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে গত কয়েক বছর ধরেই সোচ্চার অবস্থানে থাকা এই লেখক বলেন, যখন তিনি শহীদ মিনারে বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন করেছেন, সরকার তখন প্রশ্নফাঁসের কথা স্বীকারও করেনি। এখন স্বীকার করা হচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ইন্টারনেট বন্ধের কথা না ভেবে প্রয়োজনে প্রশ্ন ছাপার বিকল্প জায়গা খোঁজার পরামর্শ দেন জাফর ইকবাল। বলেন, কী ভাবে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি দিতে হবে। আটক, বহিষ্কার, ধরা পড়ায় আত্যহত্যার চেষ্টা ॥ ঢাকার পাশে সাভারে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও নকল করার সময় ধরা পড়ায় কেন্দ্রের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়েছে এক ছাত্রী। অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনায় আহত ওই পরীক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়েটির (১৭) বাড়ি সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি এলাকায়। সে সাভার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা (উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) মোঃ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, মেয়েটি তার বাম হাতে লিখে আনা প্রশ্নোত্তর দেখে দেখে লিখছিল। বিষয়টি টের পেয়ে তার খাতা নিয়ে নেই। পরে সে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে তার এক বন্ধু রাতে কুষ্টিয়া থেকে এ উত্তর লিখে পাঠিয়েছে, যা প্রশ্নের সঙ্গে মিলে গেছে। মেজবাহ উদ্দিন বলেন, খাতা নিয়ে নেয়ার পরই সে ক্লাস থেকে বেরিয়ে দোতলা থেকে নিচে লাফ দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার সাবিহা সুলতানা বলেন, মেয়েটি পায়ে ও কোমরে আঘাত পেয়েছে। সে দাঁড়াতে এবং বসতে পারছে না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন পিটার গমেজ বলেন, ওই ছাত্রী ‘নকল’ করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে আর পরীক্ষা দিতে পারবে না। সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোসাম্মত কামরুন্নাহার বলেন, ওই ছাত্রীর এখন আর পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু তার হাতে নকল পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান বলেন, ওই ছাত্রীর হাতের মধ্যে লেখা থেকে নকল করার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তখন তাকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছিল। এরই মধ্যে সে লাফিয়ে নিচে পড়ে যায়। ইতিমধ্যে ওই ছাত্রীকে বহিষ্কার করে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়েটির মা বলেন, আমি বাসায় ছিলাম। হাসপাতাল থেকে ফোন করে আমাকে আনা হয়েছে, তবে কী হয়েছে এখনও আমি কিছু বুঝতে পারছি না। নীলফামারী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরে কেন্দ্রে প্রবেশের সময় মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রসহ এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া অসদুপায় অবলম্বন করায় বহিষ্কার করা হয়েছে এক ছাত্রকে। সকালে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের সময় জায়েদ আলী নামে এক পরীক্ষার্থীর দেহ তল্লাাশি করে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনে ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থাকায় তাকে আটক করেন সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ বজলুর রশীদ। সে লক্ষণপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্র। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ১০ শিক্ষককে আজীবনের জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কোটালীপাড়া উপজেলার বলিহার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত শিক্ষকরা হলেন- প্রশান্ত বাড়ৈ, মনিরা খানম, মনির হাওলাদার, কবিতা কির্তনীয়া, অশোক জয়ধর, শামীম আহম্মেদ, মোহসিন তালুকদার, লায়েকউজ্জামান, নিয়াজ মকদুম ও জয় প্রকাশ বিশ্বাস। ময়মনসিংহের ভালুকায় পরীক্ষা শুরুর আগে পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রসহ সবুজ (৩৫) নামে এক অভিভাবককে আটক করেছে পুলিশ। সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়ন সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ২নং গেটের সামনে থেকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্রসহ তাকে আটক করা হয়। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এসএসসি পরীক্ষার জন্য হলে প্রবেশের আগেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে চারজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও বহিরাগত একজনকে আটক করা হয়েছে। প ভূঞাপুর পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের বাইরে থেকে তাদের বহিষ্কার ও আটক করা হয়। আটক সিজেন খান ওরফে আব্দুল কাইয়ুম উপজেলার অর্জুনা গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে। এসময় প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা পাপ্পু পালিয়ে যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফ আহম্মেদ জানান, ভূঞাপুর পাইলট সরকারী বিদ্যালয়ের বাইরে কয়েকজন শিক্ষার্থী হলে প্রবেশ না করে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন দেখছিল। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলে প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা পাপ্পু পালিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় চারজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বহিরাগত ইব্রাহীম খাঁ সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী সিজেন খান ওরফে আব্দুল কাইয়ুমকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে। গলাচিপা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ ও অহেতুক ঘোরাঘুরির সময়ে হাতেনাতে আটক হয়েছেন দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুজন প্রধান শিক্ষক। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌছিফ আহমেদ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই দুজন শিক্ষককে সাতদিনের কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হচ্ছেনÑ উপজেলার পাড়ডাকুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল চন্দ্র শীল ও পানখালী পাঞ্জাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মোঃ আবুল কালাম মাঝি। নীলফামারীর সৈয়দপুরে পত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফাঁস করার অপরাধে সৈয়দপুরের ক্যান্ট. বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে থেকে জায়েদ আলী নামে এক পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে থেকে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বজলুর রশিদ ওই পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনসহ গ্রেফতার করে। আটক জায়েদ আলী উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারের গাজীউর রহমানের ছেলে। সে উপজেলার লক্ষণপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। দিনাজপুরের বিরামপুরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ৩ পরীক্ষার্থী আটক হয়েছে। দিনাজপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় দিনাজপুরের বিরামপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান গেটের সামনে থেকে বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী মনিরুজ্জামানের ছেলে নাজমুল সাকিব (১৭), তার ব্যবহৃত মোবাইলের নেটের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সার্চ করে দেখার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে হাতেনাতে আটক করে। এসময় ওই পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে আরও ২জনের নাম বললে তাদেরও আটক করা হয়। তারা হলেনÑ শৌলাহার গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে শামীম আহমেদ সবুজ (১৬) এবং মুকুন্দপুর ইউনিয়নের উড়ুম্বা গ্রামের প্রেমদাস চন্দ্রের ছেলে বিজয় চন্দ্র (১৬)। কুমিল্লা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মুরাদনগরে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করার অভিযোগে খাইরুল ইসলাম নামের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে দুটি স্যামসাং স্মার্ট মোবাইলের মধ্যে থাকা পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্রসহ তাকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে দু’বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। দ-প্রাপ্ত খাইরুল ইসলাম (২১) উপজেলার কামাল্লা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে। সে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট হতে সিভিলে ডিপ্লোমা পাস করেছে।
×