ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা-তারেকসহ সব নেতাকর্মীর মামলায় রুখে দাঁড়াতে হবে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

খালেদা-তারেকসহ সব নেতাকর্মীর মামলায় রুখে দাঁড়াতে হবে ॥  ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি করেছে বিএনপি। রবিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি শুরু করে বিজয়নগর নাইটেঙ্গেল মোড়, কাকরাইল ও শান্তিনগর হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে এ র‌্যালি শেষ হয়। বাদ্যের তালে তালে নানা রঙের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন বহন করে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এতে অংশ নেয়। এ সময় তাদের হাতে শোভা পায় জাতীয় পতাকা, ধানের শীষ এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতাদের ছবি সম্বলিত প্লাকার্ড। এ ছাড়া র‌্যালিতে শোভা পায় অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ ও ধানক্ষেতের ডিসপ্লে। আর মাইকে বাজানো হয় বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান। র‌্যালি উদ্বোধন করতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মামলা দিয়ে কারাবন্দী করা হয়েছে। তাদের কারাগার থেকে বের করে আনতে হবে। কারাগার ভেঙ্গে গণতন্ত্র মুক্ত করতে হবে। বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি শুরু হয়। আর র‌্যালির পেছনের অংশ মালিবাগ মোড়ে পৌঁছে বিকেল সাড়ে ৪টায়। র‌্যালিতে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলেন ওই এলাকা। বিএনপির পূর্বঘোষিত বিজয় র‌্যালিতে অংশ নিতে দুপুর ১টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে রং-বেরঙের পোশাক পরে দলে দলে স্লোগান দিয়ে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে জড়ো হতে থাকে। বিশেষ করে মহিলা দলের নেতাকর্মীরা যায় লাল পাড়ের সবুজ শাড়ি পরে। র‌্যালির সামনে ছিল মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। এরপর ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে র‌্যালির সামনে ও পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া র‌্যালির পেছনে ছিল সাজোয়া যান ও জলকামান বিএনপি কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে র‌্যালি উদ্বোধনের আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণের ভোটের রায়ের ভিত্তিতে সরকার প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এর মাধ্যমে জনগণের রায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এই দাবিতে আজকের এই দিনে জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান করছি। বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব একাত্তরের শহিদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, একাত্তরে যে চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে, যে স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। আজকে ৪৭ বছর পরও আমাদের দুর্ভাগ্যের কথা বলতে হয়, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে মানুষ। কিন্তু গণতন্ত্রকামী মানুষ আজ খুন হয়ে যায়, গুম হয়ে যায়। আজকে শত শত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যোদ্ধাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, যিনি নয় বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তার বিরুদ্ধেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী আজ কারা অন্তরীণ। খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাকর্মীদের নামে মামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সমৃদ্ধ স্বপ্নের বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, মানুষ তার মত প্রকাশ করতে পারবে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে লিখতে পারবে, এই ধরনের মুক্ত বাংলাদেশ চাই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রখে দাঁড়াতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করতে সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে জনগণকে পদদলিত করতে চায়। তবে বাংলাদেশের মানুষকে কখনোই পদদলিত করে রাখা যায়নি, তাদের এবারও দাবিয়ে রাখা যাবে না। এ দেশের মানুষ অতীতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, এবারও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। এদিকে বিএনপির বিজয় র‌্যালিতে ৫৯২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন না। কিছু কেন্দ্রীয় নেতা অংশ নিলেও তাদের মধ্যে অনেকেই বিএনপি কার্যালয় থেকে সামান্য একটু সামনে এসেই র‌্যালি ছেড়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি ট্রাকে চড়ে র‌্যালিতে অংশ নিলেও পরে ট্রাক ছেড়ে তিনি একজনের মোটরসাইকেলে ওঠেন। আর মোটরসাইকেলে চড়ে তিনি দ্রুত মালিবাগ মোড়ে চলে যান। অবশ্য পায়ে সমস্যা থাকা দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ক’জন কেন্দ্র্রীয় নেতাকে সঙ্গে নিয়ে লাঠিতে ভর করে ঠিকই হেটে হেটে র‌্যালির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যান। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে একমাত্র গয়েশ্বর চন্দ্র রায় পায়ে হেটে র‌্যালির শেষ মাথা পর্যন্ত যান। বিএনপির বিজয় র‌্যালির কারণে রবিবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গুলিস্তান, পল্টন, ফকিরাপুল, কাকরাইল, শান্তিনগর ও মালিবাগসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত যানজট থাকায় এসব এলাকা দিয়ে চলাচলকারী লোকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করবে বিএনপি ॥ আজ সোমবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করবে বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ কর্মসূচী পালন করা হবে বলে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার এক অনুষ্ঠান থেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন। রবিবার র‌্যালি শুরুর আগেও এ কর্মসূচী পালনের কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
×