ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তিন বাহিনীর আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তিন বাহিনীর আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা।’ পাকিরা আজ থেকে ৪৬ বছর আগে বাঙালীদের ওপর নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছিল। ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুটে নিয়েছিল। জল্লাদের হাত থেকে অনেক দামে কেনা মহান স্বাধীনতা। সেদিন বীর বাঙালী মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বর্বর পাকিদের হটিয়ে ছিনিয়ে আনে ১৬ ডিসেম্বর। ৪৬ বছর আগে আজকের এই দিনে ৯৩ হাজার সৈনিক নিয়ে আত্মসমর্পণের পর পাকি জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী মাথা নত করে পাকিস্তানে ফিরে যান। পাকিদের পক্ষে সেদিন বিশ্বের পরাশক্তি থাকলেও বীর বাঙালীর কাছে তাদেরও মাথা নত করে নাকে খত দিয়ে চলে যেতে হয়। পাকিরা সেই গ্লানি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে। তারা এখনও নানাভাবে প্রতিহিংসায় লিপ্ত রয়েছে ১৯৭১‘র পরাজয়ের শোধ নিতে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছে। তাদের রক্ষার জন্য নানা ষড়যন্ত্র এখন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাঙালী জাতির চেতনায় পাকিদের ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নেই। বিচারে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে বেশ কয়েক পাকি দোস্তকে। মহান স্বাধীনতা দিবসে গোটা জাতি পাকিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার দাবি তুলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সশস্ত্র বাহিনী নানা কর্মসূচী পালন করেছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে এই বাংলা এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা উড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাতি যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শনিবার মহান বিজয় বিদস উদ্যাপন করেছে। সকাল দশটায় জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ হয়। বাংলাদেশ মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনী প্রধান মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানান। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বৈদেশিক কূটনৈতিক ও গণ্যমান্য উপস্থিত ছিলেন। এবারের বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর লে. জেনারেল (অব) জয় ভগবান সিং জাদবের নেতৃত্বে ২৬ বীরযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিলেন। এছাড়াও রাশিয়া সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিবৃন্দও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক বাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অংশগ্রহণ করে। বিজয় দিবস প্যারেড-২০১৭ এর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৯ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ও সাভার এরিয়া কমান্ডার, মেজর জেনারেল মোঃ আকবর হোসেন এবং উপঅধিনায়কের দায়িত্বপালন করেন ৮১ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ হোসাইন আল মোরশেদ। এছাড়া যান্ত্রিক বহরের অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন ৯ আর্টিলারি ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যান্ত্রিক বহরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সংবলিত সুসজ্জিত গাড়ি বহর প্রদর্শিত হয়। এছাড়া এয়ারবোর্ন কন্টিনজেন্টের অংশগ্রহণ ও সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপাররা আকাশ থেকে অবতরণ করে কুচকাওয়াজ আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। বিভিন্ন যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনীর পরই শুরু হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে। বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্টের নেতৃত্ব দেন এয়ার কমোডর মোহাম্মদ মফিদুর রহমান। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য বেসরকারী টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করেছে। এবারের প্যারেড বিভিন্ন আঙ্গিকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন ও প্যারেডকে উপভোগ্য করতে সার্বিক সাজসজ্জায় নতুন মাত্রা যোগ করা হয়েছিল। বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার পথে সড়কগুলোতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় দিবসের চেতনা সংবলিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়। ঢাকা শহরে সার্ক ফোয়ারা থেকে জাহাঙ্গীর গেট, বিজয় সরণি, বিজয় চত্বর, গণভবন হতে রোকেয়া সরণি হয়ে আগারগাঁও ও রাসেল চত্বর হয়ে আমিন বাজার পর্যন্ত এসব এলাকায় ব্যানার ও বিলবোর্ড শোভা পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালী জাতির অমর ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। পোডিয়ামের উভয় পার্শ্বে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। প্যারেডগ্রাউন্ডের বিভিন্ন সাজসজ্জায় এবং পোডিয়ামের উভয় পাশে স্থাপিত বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ফেস্টুনে স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকার লাল ও সবুজের এ দুটি রংয়ের সংমিশ্রণে ফুটিয়ে তোলা হয়। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের শেষে এক মনোজ্ঞ ‘ডে ফায়ার ওয়ার্কসের মাধ্যমে ইতি টানা হয়। মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ সুষ্ঠু ও সার্থক করতে গণপূর্ত অধিদফতর, পিডিবি, ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, টিএ্যান্ডটি, ডেসকো, জনস্বাস্থ্য অধিদফতর, পিডব্লিউডি, গণযোগাযোগ অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতর নিরলসভাবে কাজ করেছেন। কুচকাওয়াজ শেষে রাষ্ট্রপতি প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সব কন্টিনজেন্ট কমান্ডারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
×