ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজয় দিবস উদযাপনের জোর প্রস্তুতি

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান, লাল সবুজের দোলা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান, লাল সবুজের দোলা

মোরসালিন মিজান ॥ যেদিকে চোখ যায় লাল সবুজ। প্রাণের পতাকা উড়ছে। ৯ মাস যুদ্ধ করে পাওয়া পতাকার রঙে সাজছে শহর নগর গ্রাম। দেখে বোঝা হয়ে যায় এখন ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে নতুন করে প্রাণ পেয়েছে বাঙালী। ১৬ ডিসেম্বর উদ্যাপনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কতশত উৎসণ্ড অনুষ্ঠান! এসব উৎসব-অনুষ্ঠান থেকে সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্রের ভাষায় সম্মান জানানো হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। একাত্তরের শহীদদের স্মরণ করা হবে বিনম্র শ্রদ্ধায়। প্রতিবারের মতো এবারও বিজয় দিবস উদ্যাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজধানী ঢাকা। এরই মাঝে দৃশ্যমান হয়েছে লাল সবুজের শহর। উৎসব-অনুষ্ঠান চলছে। তবে মূল আয়োজন থাকবে ১৬ ডিসেম্বর। সেভাবেই চলছে প্রস্তুতি। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বর্ণাঢ্য কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসব আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে। রাজধানীর ৮টি মঞ্চে চলবে অনুষ্ঠান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিকেলে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এখানে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালা চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিজয় দিবসের সকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বের হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ১৪ ডিসেম্বর থেকে সরব হবে অন্য ৭ মঞ্চ। ধানম-ির রবীন্দ্রসরোর, উত্তরার রবীন্দ্র সরণি, মিরপুর ৬, রায়েরবাজার, বাহাদুর শাহ পার্ক ও দনিয়ায় ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বিজয় উৎসব। ১৯৯০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জোটের বিজয় উৎসব। তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে উৎসব আয়োজন করা হয়। আয়োজনটি আরও বিস্তৃত ও বর্ণাঢ্য হয়েছে। এবার উৎসবের স্লোগান, ‘৭ই মার্চ মুক্তি ও স্বাধীনতার ডাক বাংলার ঘরে ঘরে/৭ই মার্চ সম্পদ আজ বিশ্ব-মানবের তরে।’ জোটের অন্তর্ভুক্ত ২০০ সাংস্কৃতিক সংগঠনের ৩ হাজার শিল্পী উৎসবে যোগ দেবেন। সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, পথনাটক ও চলচ্চিত্রের ভাষায় শিল্পীরা কৃতজ্ঞতা জানাবেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনে চলছে সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসব। ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক উৎসব গত ১০ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলছে অনুষ্ঠান। জাদুঘরের চারটি মঞ্চে চলছে বিজয় দিবসের আয়োজন। সপ্তাহব্যপী অনুষ্ঠানমালার চতুর্থ দিন আজ বুধবার বিকেল তিনটায় উন্মুক্ত মঞ্চে পরিবেশিত হবে পথনাটক ‘ফিল্মি কারবার।’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে মিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও শেরেবাংলা নগর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল পাঁচটায় প্রধান মিলনায়তনে নৃত্য পরিবেশন করবে নৃত্যম। সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শারমিন সাথী ইসলাম ময়না। দলীয় আবৃত্তি করবে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে মঞ্চে থাকবে হেরিটেজ স্কুল। সন্ধ্যা সাতটায় ভাস্কর্য অঙ্গনে ‘রাসযাত্রা’ পরিবেশন করবে মনিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্সের শিল্পীরা। জাদুঘর পরিচালিত জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ প্রাঙ্গণে থাকছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। ১৪ ডিসেম্বর শুরু হয়ে চলবে হবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাঙালী সংস্কৃতির বাতিঘর ছায়ানট প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিজয় উৎসবের আয়োজন করে। এবারও চলছে প্রস্তুতি। বড় পরিসরে আয়োজন। বহু শিল্পী সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবেন। এখন চলছে মহড়া। চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হবে বিজয় মেলার। এখানে খোলা চত্বরে নির্মাণ করা হচ্ছে মঞ্চ। লাল সবুজের মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন বাংলার শিল্পীরা গাইবেন। বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে থাকবেন এই প্রজন্মের শিল্পীরা। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘরের মতো সরকারী প্রতিষ্ঠানও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা চূড়ান্ত করেছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও উদ্যাপন করা হবে বিজয় দিবস। এদিকে, বিজয় দিবস মানেই লাল সবুজ রঙের পোশাক। ঐতিহাসিক দিনে এবারও ছেলে-বুড়ো সকলে জাতীয় পতাকার রঙে সেজে ঘর থেকে বের হবেন। এখন চলছে কেনাকাটা। শহর ঢাকার মার্কেট শপিংমলে বিজয়ের রং। ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া তৈরি করা হয়েছে। মেয়েদের জন্য শাড়ি। থ্রিপিস। বাচ্চাদের পোশাক দেখেও দারুণ একটা অনুভূতি হয়। বিজয়ের দিন কেউ পরিবারের সদস্যকে নিয়ে বের হবেন। কেউ পথ চলবেন বন্ধু-সুহৃদের হাতটি ধরে। উৎসব অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তারা। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার শপথে উদ্যাপিত হবে বিজয় দিবস।
×