ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল আলোয়। এবারই প্রথমবারের মতো নিজস্ব জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে বিজয় উৎসবের কর্মসূচী। পুরো জাদুঘর প্রাঙ্গণজুড়ে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। রবিবার থেকে সেখানে শুরু হয়েছে ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। জাদুঘরের চারটি ভিন্ন প্রাঙ্গণে একযোগে হচ্ছে এবারের আয়োজন। পাশাপাশি ১৪ ডিসেম্বর থেকে জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এদিন বিকেলে স্পন্দনের শিল্পীদের নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে সুবচন নাট্য সংসদ মঞ্চস্থ করে পথনাটক ‘বোধোদয়’। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে ইস্পাহানী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ‘মানবাধিকার’ বিষয়ক বক্তব্য রাখেন এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, আগের পৃথিবী আর এখনকার পৃথিবীর কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে বিচারের পথ সুগম ছিল না। এখন মানুষ অধিকার আদায়ে সোচ্চার। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছি। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেছি। যার ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, যারা দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে, তাদের পক্ষে মানবাধিকার অর্জন দুঃসাধ্য। তাত্ত্বিকভাবে আমরা বলছি সবাই সমান, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আমাদের এখন এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। যে অধিকার অপূর্ণ আছে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠা ও অর্জন করতে হবে। তার বক্তব্যের পর সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মিতা হক, আবৃত্তি পরিবেশন করে ঢাকা স্বরকল্পন, দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে ব্রাইট স্কুল এ্যান্ড কলেজ ও ক্যালিক্স প্রি-ক্যাডেট স্কুল। সন্ধ্যায় ভাস্কর্য অঙ্গণে বাউল গান পরিবেশন করে কুষ্টিয়ার আরশিনগর বাউল সংঘ।আজ সোমবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন বিকেল তিনটায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে পথনাটক ‘বুদ্ধি’ পরিবেশন করবে নাট্যযোদ্ধা ও পথনাটক ‘গর্ত’ পরিবেশন করবে প্রাচ্যনাট। কেটেছে অনিশ্চয়তা- বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব শুরু হচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর ॥ অনিশ্চয়তার ধুদ্রজাল ছিন্ন করে এ মাসের ২৬ তারিখ শুরু হচ্ছে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৭’। স্থান বরাদ্দ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে উৎসবের ষষ্ঠ অধিবেশন হবে কিনা এই নিয়ে নানান প্রশ্ন ছিল অনেকের মনে। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উৎসবের চূড়ান্ত ঘোষণা দিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু। রাজধানীর আবাহনী মাঠে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস, আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান ও স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী। এবারে উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে গবেষক, চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামানকে। উৎসব উপলক্ষে রাজধানীর এক হোটেলে রবিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম। বিনামূল্যে এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে সীমিত সময়ের জন্য।www.bengalclassicalmusicfest.com থেকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। অনলাইনের বাইরে ধানমণ্ডির ৭/এ সড়কের ৬০ নম্বর বাড়ির জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ ও এয়ারপোর্ট রোডের খিলক্ষেতের বেঙ্গল সেন্টারে সরাসরি নিবন্ধন করা যাবে। আবুল খায়ের লিটু বলেন, ভেন্যু সমস্যায় শঙ্কায় ছিল এবারের উৎসবটি। অবশেষে সবার সমর্থন ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত উৎসব হতে যাচ্ছে। আমরা খুব আনন্দিত। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি এবার আরও বেশি জমজমাট হবে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। এবারের উৎসবে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন পদ্মবিভূষণ পণ্ডিত যশরাজ, গ্রামি বিজয়ী পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট, বিদুষী কালা রামনাথ, গ্রামি জয়ন্তী পদ্মভূষণ বিদ্বান ভিক্কু বিনায়করাম, বিশিষ্ট ওডিশি নৃত্যশিল্পী সুজাতা মহাপাত্র, সেতার বাদক পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখার্জি, সাসকিয়া রাও, বিদূষী পদ্মা তলওয়ালকার, পণ্ডিত রনু মজুমদারসহ বিশ্ব বিখ্যাত বহু শিল্পী। আয়োজনে মধ্যমণি হিসেবে উপস্থিত হবেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, স্তাদ রশিদ খান, ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান প্রমুখ। বিদেশী শিল্পীদের পাশাপাশি থাকছে বাংলাদেশী শিল্পীদেরও পরিবেশনা। এছাড়াও থাকবে কাজাখস্তান থেকে আসা ৫৮ সদস্যের আস্তানা সিম্ফনি ফিলহারমানিক অর্কেস্ট্রার সঙ্গে ভারতের বিখ্যাত বেহালা শিল্পী এল সুব্রামনিয়ামের যুগল বাদন। বাংলা একাডেমিতে রোকেয়া দিবসের আলোচনা ॥ রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত একক বক্তৃতায় অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, রোকেয়া তার ঐতিহাসিক বস্তুবাদী এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক নারী-ভাবনায় ইতিহাসে উপেক্ষিতা নারীকে নতুন মর্যাদা দান করেছেন। নারীর বিকাশের পথে মানসিক অধস্তনতাকে তিনি অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রবিবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে রোকেয়া দিবস ২০১৭ উদ্যাপন উপলক্ষে তিনি ‘জ্ঞানতত্ত্ব ও নারীমুক্তি ॥ আমাদের পথিকৃৎ (উনিশ ও বিশ শতক)’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক পারভীন হাসানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, লিলি হক প্রমুখ। অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, উনিশ ও বিশ শতকে সাবিত্রী দেবী ফুলে, পন্ডিতা রমাবাঈ, সরলা দেবী ও রোকেয়া নারীমুক্তির নানামাত্রিক বৈপ্লবিক পথরেখা নির্ধারণ করে দেখিয়েছেন পৃথিবীতে নারীর অনগ্রসরতার নেপথ্যে কাজ করে দর্শনগত দারিদ্র্য। এর ফলে আমাদের প্রচলিত সমাজ নারীপুরুষ বিভাজনের সংস্কৃতি চালু করে। রোকেয়া বাঙালী মুসলমান সমাজের পরিসরে অবস্থান করে এই বিভাজনের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক উভয় দিক থেকে লড়াই করেছেন। পারভীন হাসান বলেন, রোকেয়া তার ব্যক্তি ও সাহিত্যজীবনে ছিলেন চিন্তাশীল এবং বাস্তবানুগ। তাই রক্ষণশীল সমাজের ভেতর অবস্থান করেও সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ সাপেক্ষে নারীদের সামনে তাদের অবনত অবস্থা তুলে ধরেছেন এবং এই অবস্থার অবসানকল্পে শাস্ত্রের উদাহরণ দিয়েই শাস্ত্রভীরু পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রয়াস পেয়েছেন। রোকেয়ার কালজয়ী আদর্শের পথ ধরেই আমরা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একটি মাঙ্গলিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো। শামসুজ্জামান খান বলেন, রোকেয়া নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে দিয়ে গেছেন সম্মুখযাত্রার দিশা। রংপুরের প্রত্যন্ত পায়রা বন্দরে রোকেয়া নারীমুক্তির যে আলোর শিখা জ্বেলে দিয়ে গেছেন তা আজও আমাদের সার্বিক মুক্তির পথে অনিঃশেষ প্রেরণা দিয়ে চলেছে।
×