ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর প্রমাণ পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর--

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর প্রমাণ পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর--

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাসদস্যদের গণহত্যা চালানোর প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার আয়োজন দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বলে জাদুঘর পরিচালিত এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। জাদুঘরের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড এ্যান্ড জাস্টিস (সিএসজিজে) শনিবার বিকেলে এ গবেষণার সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে। ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং রোহিঙ্গা জেনোসাইড ইন রাখাইন’ শীর্ষক ওই গবেষণায় রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা ৬৭ জনের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। গত ১৩ ও ১৪ অক্টোবর ১২ জনের একটি গবেষক দল কক্সবাজারের কুতুপালং, বালুখালী ও ঠ্যাংখালীর বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে এসব রোহিঙ্গার অডিও সাক্ষাতকার নেয়। সাক্ষাতকারদাতাদের মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের ৩২ জন পুরুষ ও ৩৭ জন মহিলার (১০ মেয়ে শিশু) বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এদের সবাই রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার ও বর্বরতার সাক্ষী। এসব সাক্ষাতকারে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গণহত্যার যে ক’টি উপাদান রয়েছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনা ও নির্যাতন চিহ্ন সেগুলো প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভবন মিলনায়তনে গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস ঘোষণার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিবছর দিনটি পালন করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান গণহত্যা আন্তর্জাতিক পরিম-লে তুলে ধরে এর বিচারের পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরা, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাসহ পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন সময় সংঘটিত গণহত্যা স্মরণ করতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করেন সিএসজিজের গবেষণা সহযোগী নওরিন রহিম। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে অক্সফামের পরিচালিত বিখ্যাত ’দ্য টেস্টিমনি অব সিক্সটির...’ আদলে এ গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ও সিএসজিজের পরিচালক মফিদুল হক। বিশ্বব্যাপী গণহত্যার রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করেন গণহত্যা অধ্যয়নে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ আর্জেন্টিনার ইরিনা মাসিমিনো। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন এ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইডে গণহত্যার পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ আছে। কোন গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিসাধন, জীবনমানের প্রতি আঘাত ও শারীরিক ক্ষতিসাধন, জন্মদান বাধাগ্রস্ত করা এবং শিশুদের অন্য গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়া- এই পাঁচটি উপাদানের কোন একটি থাকলেই কোন ঘটনা গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে। রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে এসব উপাদান বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে আলোচনায় মফিদুল হক বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাঙালী জাতির ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। কিন্তু তারা তা আজও স্বীকার করেনি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর একই ধরনের গণহত্যা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। তাই দেশটির ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং গণহত্যার যাতে বিচার হয় সেজন্য জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। ইরিনা মাসিমিনো বলেন, গণহত্যার সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বিংশ শতাব্দীকে গণহত্যার শতক বলা যায়। পৃথিবীজুড়ে এ সময় যেসব গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, আর্থিকভাবে দরিদ্র ও আর্থিক অধিকারবঞ্চিত জাতি গোষ্ঠী এসবের শিকার। গণহত্যা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন। আলোচনা শেষে ব্যান্ড দল অবসকিওর গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-চেতনামূলক গান শোনায়। এর মধ্যে দলটির নতুন গান ‘স্টপ জেনোসাইড’ প্রথমবারের মতো গাওয়া হয়।
×