ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দ্বিতীয় বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। দুদক পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি বিশেষ দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি। আবদুল হাই বাচ্চু বলেন, ‘তদন্ত চলা অবস্থায় দুদক যে অভিযোগগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে সেগুলোর উত্তর দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনবোধে আমি আরো সহযোগিতা করব। যেটুকু সম্ভব, তার উত্তর দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে, তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। কাজেই এ বিষয়ে বলা খুব মুশকিল। তদন্ত চলছে, দেখা যাক কী হয়।’ বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর সম্প্রতি ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। ঋণ কেলেঙ্কারির এ ঘটনায় দুদকের এই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে গত ২২ নভেম্বর থেকে। এর আগে রোববার পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন ১০ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করে দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় মোট আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। মামলায় ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আনা হয়।এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখার মাধ্যমে অনিয়ম করে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।এ ছাড়া কেলেঙ্কারির অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান। মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রযেছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণ গ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণ গ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, গ্রেপ্তার হওয়া মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি।তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সিএজি কার্যালয় ও খোদ বেসিক ব্যাংকের নানা প্রতিবেদনে এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুসহ অনেকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে শুনানিতে এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দুদককে। মূলত এরপরই দুদক থেকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মামলার তদন্তে দুদকের উপপরিচালক মোরশেদ আলম, মো. ইব্রাহিম ও ঋত্বিক সাহা, সহকারী পরিচালক শামসুল আলম, উপসহকারী পরিচালক ফজলে হোসেন ও মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলার তদারককারী কর্মকর্তারা হলেন পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেন। বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।
×