ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৎ সরকারপ্রধান হিসেবে তৃতীয় স্থান অধিকার করায় সংসদে বক্তব্য

জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছি ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছি ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জীবনকে বাজি রেখে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সততা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে নিজের জীবনে অর্থ-সম্পদ, টাকা-পয়সা কী আছে না আছে, এ নিয়ে আমি কখনও চিন্তাও করি না। ওটা নিয়ে আমার কোন দুশ্চিন্তাও নেই। তাই নিজে কী পেলাম বা পেলাম না সেটি বড় কথা নয়, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কতটুকু কাজ করতে পারলাম সেটিই আমার কাছে সবচেয়ে বড়। সততাই আমার মূল শক্তি। কিছু নিতে নয়, আমরা দেশকে দিতে এসেছি। দেশের জন্য আমার বাবা-মা, ভাইসহ সবাই জীবন দিয়ে গেছেন। আমিও জীবনবাজি রেখে দেশের মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি, যতদিন বেঁচে আছি করে যাব। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন উন্নত-সমৃদ্ধ হয়, বিশ্ব দরবারে যেন মর্যাদার সঙ্গে চলে- এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সৎ সরকারপ্রধান হিসেবে সারাবিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটুকু বলতে পারি মাথায় (সরকারপ্রধান) পচন নেই, যদি গায়ে (সরকারের মন্ত্রী) কিছু ঘা হয় তা আমরা সারিয়ে ফেলতে পারব। সরকারে ওই রকম দুর্নীতি হলে দেশের প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে হতো না। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হতো না। আমরা দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। তিনি বলেন, ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না। মানুষকে মরতে হয়। সব রেখে চলে যেতে হয়। তবু মানুষ অবুঝ হয়ে সম্পদের লোভে অস্থির হয়ে পড়ে। এটা মানুষের একটা প্রবৃত্তি, এই প্রবৃত্তিটা যিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, সেই দেশ ও জনগণকে কিছু দিতে পারেন। আমরা জনগণকে কিছু দিতে দিতে এসেছি। এত রাস্তাঘাট, এত বড় বড় প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি, দুর্নীতি হলে এত অল্প সময়ের মধ্যে সেটা আমরা করতে পারতাম না। তাই রিপোর্টটা যাই দিক, আমার নিজের মর্যাদার থেকে বাংলাদেশের মর্যাদাটা তো উন্নত হয়েছে, সেটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম সম্প্রতি পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্স নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা রিপোর্ট সংসদে তুলে ধরে বলেন, গবেষণা সংস্থাটি ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ওপর জরিপ চালিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে সৎ সরকারপ্রধান হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এতে প্রথম হয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মের্কেল, দ্বিতীয় হয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী। অসম্ভব সৎ এবং সর্বক্ষেত্রে সততার পরিচয় দিলেও তার সরকারে কিছু দুর্নীতি না থাকলে হয়ত প্রধানমন্ত্রী সারাবিশ্বের মধ্যে প্রথম সৎ সরকারপ্রধান হতেন। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুভূতি এটা আগেও বলেছি এখনও বলব- কী পেলাম, কী পেলাম না সেই হিসাব মেলাতে আমি আসিনি। কেউ আমাকে রিকগনাইজ (স্বীকৃতি) করল কি করল না সেই হিসাব আমার নাই। আমার একটাই হিসাব এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কতটুকু কাজ করতে পারলাম, সেটাই আমার কাছে বড়। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাদের দেশে জনসংখ্যা কত? আর আমার দেশের জনসংখ্যা কত? এইটা যদি তারা একটু তুলনা করতেন তাহলে হয়ত অন্য হিসাব আসত। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের ভূখ- ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে ১৬ কোটির ওপর মানুষ বসবাস করে। তার ওপর আবার এখানে অন্য যারা আছেন তাদের কিন্তু জীবনে বাবা-মা, ভাই-বোন আপনজনকে হারাতে হয়নি বা অত্যাচারিত-নির্যাতিতও হতে হয়নি। জেলের ভাতও খেতে হয়নি, মিথ্যা মামলায়ও জর্জরিত হতে হয়নি আর আমাদের দেশের পরিবেশটা একটু আলাদা। আমরা যত ভাল কাজই করি না কেন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা, মিথ্যা অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করা হয়। জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করা এমনকি আমাকে বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশ্বের প্রথম দিকে স্থান সরকারপ্রধানের মধ্যে একজনকেও কিন্তু ২১ আগস্টের মতো গ্রেনেড হামলার শিকার হতে হয়নি। ৭৬ কেজি বোমা দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়নি। বার বার আমার জীবনের ওপর যে আঘাত এসেছে এ রকম যদি বিশ্বের অন্যান্য সরকারপ্রধানের ওপর হতো তাহলে অনেকেই ঘরে বসে যেতেন। সরকারপ্রধান আরও বলেন, আল্লাহ জীবন দিয়েছে, জীবন তো একদিন চলেই যাবে। আমাকে কিন্তু বাবা-মা, ভাইসহ আত্মীয়-পরিজন হারিয়ে বিদেশে রিফুজি হয়ে থাকতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তারা নেই। যারা জরিপটি চালিয়েছেন তারা যদি এই বিষয়গুলো একটু বিবেচনা করতেন হয়ত রেজাল্টটা (ফলাফল) অন্য রকমও হতে পারত। তিনি বলেন, আমাদের যে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সেই অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হয়নি। আর আমাদের দেশে কখনও ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল না। প্রতিবারই বাধা এসেছে আবার আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। সেই গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়েই কিন্তু আজকে দেশের এত উন্নতি। মাত্র ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে ১৬ কোটি মানুষ। যদি অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের দেশ চালাতে হতো তাদের অবস্থা যে কী হতো সেটা বোধহয় আপনারা চিন্তাও করতে পারেন না আর কাজের ক্ষেত্রে আমার ১৮ ঘণ্টা, ১৪ বা ১২ ঘণ্টার হিসাব নাই। অনেক সময় এমনও দিন যায়, রাতে ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারি কিনা সন্দেহ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই কাজ আসে সেটা করে যাই, তার কারণ আমি কাজ করি মনের টানে। আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে গেছেন। তাঁর একটা স্বপ্ন ছিল ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। তিনি তাঁর স্বপ্ন সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে জীবন দিতে হয়েছে আমার পরিবারকে। তাই আমার একটাই চ্যালেঞ্জ, যে কাজটা আমার বাবা করে যেতে পারেননি, সেই অধরা কাজটা আমি সম্পন্ন করে যেতে চাই। দেশকে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তবুও বলব যারা হিসাব-নিকাশ (গবেষণা) করেছেন তারা তাদের মতো করেছেন। এ জন্য ধন্যবাদ। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ (সামরিক স্বৈরতন্ত্র) চলে, যে দেশে গণতন্ত্রের অভাব থাকে, যে দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকে- সেই দেশে দুর্নীতিটা শিকড়ে গেড়ে যায়। সেই শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়। ’৭৫-এর পর থেকে ২১টা বছর এই অবস্থাই দেশে বিরাজমান ছিল। মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ ও তাদের অনিয়ম-অবিচার-অত্যাচারের কারণে দুর্নীতি নামক দুর্নামের ভাগীদার এখনও আমাদের হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি নিজে সততার সঙ্গে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি আর একটা কথা সবাই মনে রাখবেন, মাথায় পচন ধরলে সারা শরীরেই ধরে। যেহেতু মাথায় পচন নাই, শরীরের কোথাও যদি একটু ঘা-টা থাকে ওগুলো আমরা সেরে ফেলতে পারব। অবশ্যই সেটা পারব। তিনি বলেন, ওই রকম যদি দুর্নীতি হতো তাহলে দেশের জিডিপি ৭ দশমিক ২৮ ভাগে উন্নীত হতো না। ওই রকম দুর্নীতি যদি হতো মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হতো না। এত রাস্তাঘাট, এত বড় বড় প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি, দুর্নীতি হলে এত অল্প সময়ের মধ্যে সেটা আমরা করতে পারতাম না। তাই রিপোর্টটা যাই দিক, আমার নিজের মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের মর্যাদাটা তো উন্নত হয়েছে, সেটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকা-ের অন্যতম ॥ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা/আরাকানের মুসলমানদের ওপর পরিচালিত হত্যাযজ্ঞসহ সকল কর্মকা- পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকা-ের অন্যতম। মিয়ানমারে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষিতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত লাখো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় প্রদানের ফলে আমাদের উদ্যোগ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন ও তাদের অধিকারের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠিত হয়েছে। এ সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে হওয়ায় মিয়ানমারকেই এ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে নিরাপদে ও সসম্মানে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মোছাঃ সেলিনা জাহান লিটার দুটি পৃথক প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী সকল মিয়ানমার নাগরিককে মিয়ানমারে তাদের নিজ আবাসভূমিতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টারই ফল। আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বাংলাদেশ সকল সময় যে কোন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়া ছিল আমাদের একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এ কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। আমরা এদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করাসহ এ সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিদ্যমান সমস্যার ক্ষেত্রেও আমরা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, অসহনীয় নির্যাতন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠন ও মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কূটনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে নাগরিক হিসেবে বসবাসের অধিকার এবং নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের জোরপ্রচেষ্টা চালানোর ফলে রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে আজ বিশ্ব জনমত গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি আজ সকলের দাবি। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও সকল রাষ্ট্র কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পক্ষে মত প্রদান করেছে এবং সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এ সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সংলাপ ও আলোচনায় পক্ষ-পাতহীন সহযোগিতার আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। মিয়ানমারের নাগরিকদের স্বদেশে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিকভাবে সকলের প্রত্যাশার অংশ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’পক্ষেই প্রত্যাবাসন চুক্তি দ্রুত সম্পাদন এবং নবেম্বরের মধ্যে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনে সম্মত হয়েছে। ডিসেম্বরেই সব রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সশস্ত্রবাহিনীর ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়ে গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর সঙ্গে পূর্বে অবস্থানরত প্রায় ৪ লাখসহ বর্তমানে ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সংসদ নেতা জানান, মিয়ানমার নাগরিকদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী মিয়ানমার নাগরিকদের নিবন্ধনের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। গত ২০ নবেম্বর পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬০ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। দৈনিক গড়ে ১১ হাজার মিয়ানমার নাগরিকের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হচ্ছে, সে বিবেচনায় আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়। তিনি জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করেছেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার গেছেন এবং এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে গোটা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশেষ ভূমিকা রাখছেন এবং বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বন্যায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ঘাটতি হবে না ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছরের বন্যায় ফসলের কিছুটা ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদনে তেমন ঘাটতি হবে না। খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বন্যা, অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ী ঢলে হাওড় অঞ্চলের ৬টি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য ১১৭ কোটি টাকার বিশেষ কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকদের কল্যাণে সদা সচেষ্ট। তাদের সাহায্যার্থে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলে বর্তমান সরকারের সময়ে কৃষি উৎপাদনে অসামান্য সফলতা অর্জিত হয়েছে। গত অর্থবছরে দেশে দানাদার খাদ্যশস্য (চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদিত হয়েছে ৩ কোটি ৮৮ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ক্ষতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর পথপ্রদর্শক। এ ব্যাপারে তেমন বৈদেশিক সাহায্য না পেলেও আমরা কারোর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকিনি। নিজস্ব অর্থায়নে এ সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে নিজস্ব অর্থায়নে ১৩৫টি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বাজেটে প্রতিবছর অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সারাবছর ফলানোর উপযোগী ফসল, ফল ও সবজিসহ অন্যান্য খাদ্য এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
×