বিডিনিউজ ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে তিনস্তরের সমাধানের প্রস্তাব করেছে চীন; যার শুরুতে মিয়ানমারের রাখাইনে অস্ত্র বিরতি কার্যকর করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরির কথা বলা হয়েছে।
এশিয়া-ইউরোপের দেশের জোট আসেমের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় গিয়ে এই প্রস্তাব তুলে ধরেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি সোমবার আসেম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন, যেখানে এশিয়া ও ইউরোপের ৫১ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন। ঢাকা সফর শেষে নেপিডোয় পৌঁছে ওয়াং ই রবিবার বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ দুই দেশকেই চীন বন্ধুরাষ্ট্র বলে মনে করে। বেজিং বিশ্বাস করে, দুই দেশ মিলে পরস্পরের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানের পথ ঠিকই বের করতে পারবে।
চীনের প্রস্তাব
১. প্রথম পর্যায়ে রাখাইনে অস্ত্র বিরতি কার্যকর করতে হবে; যাতে শৃঙ্খলা আর স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয় এবং মানুষকে আর ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে না হয়।
২. অস্ত্র বিরতি কার্যকর হলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ তৈরি হয়।
৩. চূড়ান্ত ধাপে রোহিঙ্গা সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে মনোযোগ দিতে হবে, যেখানে দারিদ্র্য বিমোচনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, সব পক্ষের চেষ্টায় এই ফর্মুলার প্রথম ধাপ ইতোমধ্যে ‘অর্জিত হয়েছে’। এখন সেখানে যাতে নতুন করে কোন যুদ্ধের উস্কানি তৈরি না হয়, সেটা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরী।
আগস্টের শেষদিকে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ এই অভিযানকে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। পশ্চিমা অধিকার সংগঠনগুলো মিয়ানমারের নেত্রী নোবেল বিজয়ী সুচিরও সমালোচনা করে আসছে। তারা বলছে, সুচির সরকার রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে যথেষ্ট কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, রাখাইনের সঙ্কটের অবসানে তারা একটি গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। বেজিং যে ফর্মুলা প্রস্তাব করেছে, তার অনেক কিছু গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কথাতেও এসেছে। তবে তিনি রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের স্বাধীন তদন্তের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যা চীনের প্রস্তাবে নেই।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও শর্ত নিয়ে এখনও সমঝোতায় আসতে পারেনি দুই দেশ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: