ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতা ছাড়ছেন সৌদি বাদশাহ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

ক্ষমতা ছাড়ছেন সৌদি বাদশাহ

নাজিম মাহমুদ ॥ ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। ৮১ বছর বয়সী এই বাদশাহ তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাতে দায়িত্ব দিয়ে আগামী সপ্তাহে ক্ষমতা ত্যাগ করতে পারেন বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথের মতো আলঙ্কারিক পদে থাকবেন সালমান বিন আব্দুল আজিজ। তবে মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের জিম্মাদারীর পদে বহাল থাকবেন তিনি। চলতি মাসে দুর্নীতির দায়ে সৌদি আরবের ৪০ জন শাহজাদা, কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীকে আটক করার পর বাদশাহর এ সিদ্ধান্তকে ৩২ বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা আরও পোক্ত করার একটা কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। সৌদি আরবের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতায় বসার পর মোহাম্মদ বিন সালমান তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রধান শত্রু ইরানের দিকে দৃষ্টি ফেরাবেন। কেউ কেউ মনে করছেন, তেহরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপও নিতে পারেন তিনি। লেবাননে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ মিলিশিয়াদের প্রতিহত করতে ইসরাইলের সহায়তাও নিতে পারেন এই যুবরাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক সৌদি সূত্র জানিয়েছে, সালমান ইতোমধ্যে ইরান ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে সম্মত হয়েছেন। অবশ্য সৌদি রাজপরিবারের অনেক সদস্য এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। এসব কারণে কুয়েতের শাসক ব্যক্তিগতভাবে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘মত্ত ষাঁড়’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে চান সালমান। এ কাজে ইসরাইলী সেনাবাহিনীর সহায়তা আশা করছেন তিনি। ইসরাইলের সঙ্গে সখ্যের অংশ হিসেবে সৌদি আরব তেলআবিবের কয়েক বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিনিয়োগে সম্মতি দিয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, লেবাননে ইসরাইলের সহায়তা ছাড়া হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া কঠিন বলে মনে করেন যুবরাজ সালমান। পাশাপাশি সিরিয়ার হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধেও যুদ্ধের পরিকল্পনা রয়েছে তার। চলতি মাসের চার তারিখে রিয়াদের কাছাকাছি একটি ক্ষেপণাত্র হামলা ব্যর্থ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে তেহরানের সঙ্গে উত্তেজনায় জড়ায় রিয়াদ। সৌদি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, পাশের দেশ ইয়েমেন থেকে এই ক্ষেপণাত্র ছোড়া হয়েছিল। এ ঘটনার সঙ্গে ইরানের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি আরবের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদিল জুবায়ের বলেন, এই ক্ষেপণাত্র ইয়েমেন থেকেই ছোড়া হয়েছিল। এর জন্য ইরান দায়ী। আর ইরানের এই পদক্ষেপ যুদ্ধে জড়ানোর অংশ। ওদিকে সৌদি আরবের অপর এক সিনিয়র সূত্র বলেছে, যুবরাজ সালমান এখনই সৌদি আরবের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন এটি ঠিক নয়। বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ জীবিত থাকাবস্থায় এর সম্ভাবনা কম। ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের কার্যত কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে উভয় দেশ ইরান ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সহমত পোষণ করে। গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলের সিনিয়র কর্মকর্তা গাদি আইজেনকত একটি আরবীয় গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দেন। সাক্ষাতকারে তিনি ইঙ্গিত করেন যে, সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানবিষয়ক গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে তার দেশ সম্মত। উল্লেখ্য, চলতি মাসে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই দেশে তোলপাড় শুরু হয়। বর্তমান বাদশাহ সালমানের এক রাজকীয় ডিক্রীতে দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করা হয়। মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বহু শাহজাদা, চারজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও কমপক্ষে ২০ জন সাবেক মন্ত্রীকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে ধনকুবের ও সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী সদস্য শাহজাদা আল-ওয়ালিদ বিন তালালও আছেন। একই সঙ্গে সৌদি ন্যাশনাল গার্ড ও নৌপ্রধানের পদেও পরিবর্তন আনা হয়। আটক শাহজাদা তালালের মালিকানায় রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম কিংডম হোল্ডিং। পাশাপাশি তিনি মার্কিন টেক জায়ান্ট এ্যাপল ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারেরও শেয়ারহোল্ডার। একই সঙ্গে আল-ওয়ালিদ বিন তালালের ইউরো ডিজনি থিমপার্ক ও মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকের নিউজ কর্পোরেশনেও শেয়ার রয়েছে। সৌদি আরবের সাবেক অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-আসাফও গ্রেফতার হন। এসব আটকের মধ্য দিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের প্রভাব আরও সুসংহত করা হয় বলে মনে করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। আটককৃতদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে সেসব বিষয় এখনও স্পষ্ট করেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। আটকের পর সৌদি আরবের স্টক একচেঞ্জে লেনদেনে ধস নামে। আটক এসব শাহজাদা সৌদি আরবের রিজ কার্লটন হোটেলের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে সময় কাটাচ্ছেন বলে ছবি প্রকাশিত হয়। জেদ্দায় ২০০৯ সালের বন্যা ও ২০১২ সালে সৌদি আরবে মার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে দেশটিতে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। যুবরাজ সালমানের নেতৃত্বে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিটিকে গ্রেফতারি পরোয়ানার পাশাপাশি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষমতা দেয়ার পর শাহজাদাদের আটকের ঘটনা ঘটে।
×