ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইরিগেশন প্রজেক্ট কৃষকের গলার কাঁটা

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১১ নভেম্বর ২০১৭

ইরিগেশন প্রজেক্ট কৃষকের গলার কাঁটা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ একই জমিতে একাধিকবার ধান চাষ আর মৎস্য চাষের সম্ভাবনা নিয়ে বরিশালের বিলাঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, নেদারল্যান্ড ও রাজস্ব খাতের ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গ্রহণ করা সাতলা-বাগধা সেচ প্রকল্প এখন কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তাদের অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ ও নামকাওয়াস্তে তা বাস্তবায়নের কারণে কৃষকের ভাগ্য বদল না হলেও অপচয় আর লুটপাট হয়েছে সরকারের কয়েক কোটি টাকা। বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চল তথা বৃহত্তর ফরিদপুরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বানারীপাড়া ও গোপালগঞ্জের বিলাঞ্চলের কৃষক ও মৎস্যজীবিদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তৎকালীন বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সেচ ও কৃষি মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ১৯৭৩-৭৪ সালে ১৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে “বরিশাল ইরিগেশন এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট” প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো একই জমির বহুমূখী ব্যবহার। যেমন, একই জমিতে দু’বার ধান চাষ ও পরবর্তীতে মাছ চাষ করে এলাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। এ লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, রাজস্ব খাত ও নেদারল্যান্ডের আর্থিক সহায়তায় ৪৩ কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় বরাদ্দ ধরে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন অর্ধকোটিরও বেশী কৃষক ও মৎস্যজীবি। ওই সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত আগৈলঝাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আইউব আলী মিয়া জানান, প্রথমদিকে প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কাল রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে রব সেরনিয়াবাত শহীদ হন। এর ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে। পরবর্তীতে ওই প্রকল্পের নামকরণ হয় “বরিশাল ইরিগেশন প্রজেক্ট” (বিআইপি)। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় থেকে অদৃশ্য কালো থাবায় বিলীন হয়ে যায় পূর্বের মূল নকশা। যার হদিস আজও মেলেনি। তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় বারের গ্রহণ করা প্রকল্প বিআইপিও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিআইপি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলেও খাদ্য শষ্যে বিলাঞ্চলে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পরতো। কিন্তু রাজনৈতিক অদুরদর্শীতা ও পূর্ববর্তী সরকারের ওপর নেতিবাচক মনোভাব সর্বোপরি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারনে দ্বিতীয়বার গ্রহণ করা বিআইপি প্রকল্প জনগণের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাষীদের অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারের সময় ক্ষমতাসীন নেতাদের বিত্তবান করা আর ঠিকাদার ও পাউবো’র বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য পাউবো বিভিন্ন অযৌক্তিক প্রকল্প গ্রহণ করে নামেমাত্র বাস্তবায়ন করেছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও অপচয় হচ্ছে।
×