ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ল্যাপটপ নিয়ে ঘরে ঘরে তথ্য আপা

গ্রামীণ নারীদের হাতে যোগাযোগ প্রযুক্তি, নবদিগন্তের সূচনা

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১১ নভেম্বর ২০১৭

গ্রামীণ নারীদের হাতে যোগাযোগ প্রযুক্তি, নবদিগন্তের সূচনা

সমুদ্র হক তথ্য আপা। ল্যাপটপ নিয়ে গ্রামের মানুষের ঘরের দুয়ারে যান। এই আপার কাছে পাওয়া যায় সব তথ্য। গ্রামের কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীদের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মমুখী করে তোলা এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। প্রথম পর্যায়ে ১৩ উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের সফলতার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশের সব উপজেলায় ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব মীনা পারভীন জানালেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও নতুন বিষয় যোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় কর্মসূচী ই-কমার্স। এর মাধ্যমে গ্রামীণ নারী নক্সি কাঁথাসহ তাদের উৎপাদিত হস্তশিল্প বিপণনের সব তথ্য পেয়ে ব্যবস্থা নেবে। ই-লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমে প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দল গঠন করতে পারবে তারা। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও অনলাইনে পরামর্শ এবং উন্নীতকরণ ওয়েব পোর্টালে ইন্টারনেট প্রটোকল উইমেন্স টেলিভিশন তাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। সব অনুষ্ঠান নির্মিত হবে নারীকে কেন্দ্র করে। যেখানে ভিডিও ও স্থির চিত্রের একটি আর্কাইভ থাকবে। ‘তথ্য আপা’ নারীর তথ্য আলোকবর্তিকায় নব দিগন্তের উন্মেষ ঘটাতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দিয়েছে। তথ্য আপা প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫শ’ ৪৫ কোটি টাকা। ৫ বছর পর প্রকল্পের সব কর্মসূচীর সফলতার ওপর ভিত্তি করে সরকারের এই প্রকল্প মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে। বর্তমানে প্রকল্পটি একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক মীনা পারভীন জানালেন দেশের ৪শ’ ৯০টি উপজেলায় তথ্য আপা কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এই কেন্দ্রে থাকবে হেল্প ডেস্ক ও কল সেন্টারসহ কয়েকটি কর্মসূচী। প্রকল্পের আওতায় তৈরি হয়েছে কয়েকটি উন্নতমানের সফটওয়্যার। যা শুধু গ্রামীণ নারী নয় শহর ও নগরীর সব নারীর তথ্য প্রবেশ ও জ্ঞান চর্চার দ্বার উন্মোচন করবে। নারী ও শিশুদের সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য দিতে কল সেন্টারে রাখা হবে একজন চৌকস তথ্য আপা। যিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা, জেন্ডার আইনে প্রশিক্ষণ নিয়ে কল সেন্টারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করবেন। দেশের যে কোন প্রান্তের নারী কেন্দ্রীয় কল সেন্টারে একটি বিশেষ নম্বরে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন। প্রকল্প পরিচালক জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রাথমিক কাজে তথ্য আপাদের নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষিত করে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই তারা মাঠপর্যায়ে নামবে। উপজেলা সদরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করা হবে। প্রতি উপজেলার তথ্য কেন্দ্রে ৩ জন তথ্য আপা সেবা প্রদান করেন। একজন থাকেন কেন্দ্রে। বাকি দু’জন তথ্য আপা ল্যাপটপ নিয়ে গ্রামের ঘরের দুয়ারে গিয়ে তথ্য সেবা দেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। সার্ভারের সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে তারা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লাইভ যোগাযোগ করে দিয়ে সমস্যার সমাধানে সহায়তা দেন। সেবা গ্রহীতারা সশরীরে না গিয়ে কল সেন্টারে ফোন করে সমস্যার সমাধান চাইতে পারেন। তা যদি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এবং ডেমেস্টিক ভায়োলেন্সও হয় তার জন্য কখন কোথার কি করতে হবে সেই পরামর্শ তারা পাবেন। বর্তমানে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সর্বজনীন। শিক্ষিত নারী সেল ফোনের এ্যাপলিকশনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে টেক্সট মেসেজের মাধ্যমেও সেবা নিতে পারন। তথ্য আপারা ঘরের দুয়ারে গিয়ে বিনামূল্যে ওজন মাপা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ যে পরীক্ষাগুলো প্রকল্পের কর্মসূচীর সফটওয়্যারে করা সম্ভব তাও করে দেবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করে দেবে। তথ্য আপা প্রকল্পটি সুদূরপ্রসারী ভাবনার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের সফলতা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) নারী উন্নয়নের যে কথা বলা হয়েছে তারও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। প্রকল্প পরিচালক মীনা পারভীন আশা করছেন দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশের সুবিধাবঞ্চিত অন্তত দেড় কোটি নারী তথ্য সেবা পেয়ে সমৃদ্ধ হয়ে জীবনমান উন্নীত করতে পারবে। তথ্য আপা প্রকল্পের সফলতার মধ্যে এমনও আছে গ্রামের এক নারী বিদেশে যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেন। তারপর তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেন না। বিষয়টি তথ্য আপার কাছে জানালে তিনি সব তথ্য দিয়ে তাকে বিদেশ যাওয়ার সরকারী পথ দেখিয়ে দেন। গ্রামীণ নারী কৃষি কাজ করে কীভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে তার পরামর্শ দেন তথ্য আপা। গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারী তথ্য আপাদাদের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে নিজেদের গড়ে নিতে পারছে। সূত্র জানায়, ২০১১ সালে তথ্য আপা প্রথম পাইলট প্রকল্প চালু হয়। চলতি বছর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হলো- যা চলবে ২০২২ সাল পর্যন্ত।
×