ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টার্কি পালনে সফল আলাউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১১ নভেম্বর ২০১৭

টার্কি পালনে সফল আলাউদ্দিন

শখেরবশে টার্কি পালন করে এখন সফলতার মুখ দেখছেন সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের বোয়ালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন। সংসারিক কাজের ফাঁকে টার্কি খামার গড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি। আলাউদ্দিনের টার্কি খামারের সফলতা দেখতে ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই শত শত টার্কি খামের উৎসাহী লোকজন ছুটে আসছেন। উপজেলার বোয়ালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল হকের ছেলে আলাউদ্দিন বসত বাড়ির আঙ্গিনায় বাণিজ্যিকভাবে চার শতাধিক আমেরিকান টার্কি মুরগি নিয়ে গড়ে তুলেছেন টার্কি খামার। টার্কি মুরগি বিক্রি, বাচ্চা উৎপাদন ও ডিম বিক্রি করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। টার্কি মুরগির পাশাপাশি বসতবাড়িতে তিনি তিতি মুরগি, ফ্রান্সের দেশী মুরগি, দেশী ও বিদেশী জাতের কবুতরের খামারও গড়ে তুলেছেন। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী মিনা আক্তার। জানা গেছে, ২০১৫ সালে পৈত্রিক ২০ শতাংশ জায়গার ওপর বোয়ালী পশ্চিপাড়া গ্রামে নিরিবিলি পরিবেশে আলাউদ্দিন টার্কি ফার্ম নামে একটি টার্কি মুরগির খামার গড়ে তোলেন বিদেশ ফেরত আলাউদ্দিন। প্রথমে তিনি ঢাকা থেকে ২শ’ বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন। দেড় বছরের মাথায় প্রায় ৪শ’ টার্কি মুরগি আছে এ খামারে। প্রতিটি টার্কি মুরগি একটানা ২২টি পর্যন্ত ডিম দেয়। দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমির শাক, বাঁধাকপি ও সবজি জাতীয় খাবার খায় টার্কি মুরগি। ৪ মাস পর থেকে খাওয়ার উপযোগী হয় টার্কি মুরগি। একটি টার্কি মুরগির ওজন ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়। এখানে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হয় ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকায়। এক মাস বয়সী বাচ্চা বিক্রি হয় জোড়া প্রতি প্রায় তিন হাজার টাকা। প্রতি হালি ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ৮শ’ টাকা। টার্কি একটি বড় আকারের গৃহ পালিত পাখি। টার্কি ময়ূরের মতো পাখা মেললে অনেকটা ময়ূরের মতোই দেখা যায়। সুস্বাদু এই মুরগির রোগ বালাই তেমন হয় না। এর মাংসে অধিক পরিমাণে প্রোটিন ও কম পরিমাণে চর্বি রয়েছে। অনেকটা খাসির মাংসের মতোই এ মুরগির মাংসের স্বাদ হওয়ায় এটির মাংসও বাজারে একই দামে বিক্রি করা হচ্ছে। জানা গেছে, ১৭শ’ সালে যুক্তরাজ্য ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে টার্কি মুরগির জাত উৎপাদন করা হয়। উত্তর আমেরিকা টার্কি মুরগির উৎপত্তিস্থল। ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন টার্কি মুরগি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশে পশু-পাখি পালন অন্য দেশের তুলনায় সহজ। টার্কি প্রাণী সেরকম একটি সহনশীল জাত, যেকোন পরিবেশ দ্রুত এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। টার্কি ফার্ম মালিক আলাউদ্দিন বলেন, টেলিভিশনে বিভিন্ন সময় টার্কি মুরগির ওপর প্রতিবেদন দেখতাম। এতে আমার উৎসাহ বেড়ে যেত। ২০১৫ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে ঢাকা থেকে প্রথমে ২শ’ টার্কির বাচ্চা এনে খামার গড়ে তুলি। এখন আমার খামারে প্রায় ৪শ’ ছোট-বড় টার্কি মুরগি রয়েছে। কলমির শাক, বাঁধা কপি টার্কিদের বেশি পছন্দ। মাংস উৎপাদনের জন্য তাদের দানাদার খাবার দেয়া হয়। টার্কির রোগাবালাই খুবই কম। ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দিতে শুরু করে। ৬ মাস বয়সী একটি মেয়ে টার্কির ওজন হয় ৬/৭ কেজি আর পুরুষ টার্কির ওজন হয় প্রায় ৮ কেজি। সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এই খামারের পরিকল্পনা ছড়িয়ে দিতে তিনি নিজেও এখন অন্যদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ও উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি মনে করেন, বেকারত্ব দূর করতে টার্কি পালন খুবই ভাল পরিকল্পনা। তিনি তাঁর ফার্মের পরিধি ও বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা করতে সরকারী ঋণ সহায়তা দাবি করেন। সখীপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ওকিল উদ্দিন জানান, আলাউদ্দিনের দেখাদেখি সখীপুরে এখন অনেকেই টার্কি মুরগি পালনে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। রোগবালাই ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এটি পালন করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে
×