ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচিত্র তথ্য

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১০ নভেম্বর ২০১৭

বিচিত্র তথ্য

গাছের পাতা দিয়ে গাউন প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের পরেই বসন্ত। আসছে পাতা ঝরার দিন। সেই ঝরাপাতা আমরা অবলীলায় পা দিয়ে মাড়িয়ে যাই। কিন্তু এই তুচ্ছ পাতা দিয়েও যে অভিনব কিছু করা যায় প্রমাণ করলেন চীনের কয়েকজন শিক্ষার্থী। কোন রকম যন্ত্রের সাহায্য না নিয়ে শুধু হাতের সাহায্যে ঝরেপড়া ছয় হাজার পাতা দিয়ে সুন্দর একটি গাউন তৈরি করেছেন তারা। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় হিফেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের চারজন শিক্ষার্থী তাদের ক্লাস প্রজেক্ট হিসেবে এই কাজ শুরু করেন। তাদের প্রজেক্টের বিষয় ছিল প্রাণী অথবা গাছের যে কোন অংশ ব্যবহার করে অভিনব কিছু তৈরি করা। অনেক ভেবে তারা এই প্রজেক্ট গ্রহণ করেন। দুইজন ছাত্র এবং দুইজন ছাত্রীর সমন্বয়ে গড়া এই দলটি দীর্ঘ ছয় মাস পরিশ্রম করে এই প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করেছেন। অনেক ধৈর্য এবং সংযমের পরিচয় দিতে হয়েছে তাদের। কারণ পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পাতা তারা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে সংগ্রহ করলেও বেশ কিছু পাতার জন্য তাদের পাহাড়ে চড়তে হয়েছে। তাছাড়া সংগৃহীত পাতা সংরক্ষণেও তাদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। কারণ পাতা দ্রুত শুকিয়ে যায়। শুকিয়ে যাওয়া রোধে তারা ক্ষার ও সোডিয়াম দ্রবণের সহায়তা নিয়েছেন। এরপর এই পাতা দিয়ে দীর্ঘ ছয় মাস পরিশ্রম করে একটি গাউন তৈরি করেছেন। সম্প্রতি গাউনটি তারা জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন। গাছের পাতা দিয়ে তৈরি পোশাকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। সংগ্রামী নারীর পাহাড় জয় লুয়ো ডেনপিং। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী মিয়াও জনগোষ্ঠীর একজন নারী। দুই সন্তানের জননী এই নারীকে সংসারের ভার বইতে প্রতিদিন দুইবার খাড়া পাহাড়ে চড়তে হয়। এটি তাকে করতে হয় পাহাড়ে চড়ার আনুষঙ্গিক যন্ত্র বা রশি ছাড়া শুধু হাত এবং পায়ের সাহায্যে। কোনকিছুর সাহায্য ছাড়াই উঁচু বিল্ডিং বা পাহাড়ে ওঠার নজির পৃথিবীতে অনেক থাকলেও চীনে একমাত্র লুয়ো ডেনপিং এ কাজটি করেন। লুয়ো ডেনপিং যখন মাকড়শার মতো খাড়া পাহাড়ে ওঠে তখন পাহাড়ের পাদদেশে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। পর্যটকদের আনন্দ দিতেই তাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দুইবার কয়েক ’শ ফুট উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয়। বিনিময়ে এই নারী মাসে বেতন পান মাত্র তিন হাজার ইউয়ান। এটাই তার জীবিকা, স্বামী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিন্তু এত এত কাজ থাকতে কেন তিনি এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বেছে নিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আপনাকে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে ফিরে যেতে হবে কয়েক শতাব্দী পূর্বে। তখনও আধুনিক চিকিৎসা সেবার কোনকিছুই আবিষ্কার হয়নি। পৃথিবীতে বসবাসকারী আদিম মানুষেরা চিকিৎসার জন্য ভেষজ উপাদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের বিশ্বাস পাহাড়ের শীর্ষদেশ থেকে ভেষজ উদ্ভিদ এনে খাওয়ালে অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই তারা মিয়াও জনগোষ্ঠীর লোকেদের অর্থের বিনিময়ে পাহাড় থেকে ভেষজ উদ্ভিদ আনার জন্য অনুরোধ করতো। কারণ খালি হাত এবং পায়ের সাহায্যে উঁচু উঁচু সব পাহাড়ে চড়তে পারার অবিশ্বাস্য দক্ষতা ছিল তাদের। কালের পরিক্রমায় চিকিৎসা বিজ্ঞান অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়েছে। এখন আর মানুষ চিকিৎসার জন্য ভেষজ উপাদানের ওপর অতটা নির্ভরশীল নয়। ফলে মিয়াওদের কদর আগের মতো নেই। অনেকে পূর্ব পুরুষের এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ছেড়ে দিয়ে নতুন পেশায় যোগ দিয়েছেন। তবে কিছু মিয়াও এখনও বংশ পরম্পরায় পাহাড়ে চড়ার এই অভ্যাস ধরে রেখেছেন। লুয়ো ডেনপিং তাদেরই একজন। তবে তিনিই মিয়াও সম্প্রদায়ের কয়েক ’শ বছরে পাহাড়ে চড়ার ইতিহাসে একমাত্র নারী যিনি এই পেশায় এসেছেন। পনের বছর বয়স থেকে লুয়ো ডেনপিং এই পেশায় নিয়োজিত। তবে এখন যেহেতু উঁচু পাহাড় থেকে ভেষজ উদ্ভিদ আনতে হয় না তাই তিনি পাহাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের নিজের এই অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখিয়ে আনন্দ দেন। শাহিদুল ইসলাম
×