আমি কবিতা লিখতে চাইনি, কবিতাকে লিখতে চেয়েছি। আমি শেকড়কে আঁকড়ে ধরে আমার কবিতার লেখার জগৎ তৈরি করতে চেয়েছি। অর্থাৎ যতটুকু আন্তরিকতা সব আমার সৃষ্টির মধ্যে। আমি বারবার কবিতায় আমার বেড়ে উঠার আশপাশের চিত্রকলা,ভাষা, শব্দের একটু গন্ধ হলেও রাখতে চেয়েছি যেন আমাকে চিনতে কারও অসুবিধে আর না হয়... আমি মনে করি, কবিতা আধ্যাত্মিকতার চাষবাস। কবিতা লিখতে চায়লেও লেখা হয় না,এটার জন্য একটা ভাবের ‘খোঁচা’ লাগে। এতে একটা স্পেস তৈরি হয় আর এ স্পেসে ধ্যানের নিবিড়তার মধ্যে কবিতার জন্ম। এভাবে নিজের মধ্য থেকে তৈরি হওয়া খোঁচাটা লেখা হওয়ার পর সবার খোঁচা হয়ে উঠে। কবি তোমার,তুমি কবি’র এমন খেলার দিনশেষে কবি হয়ে উঠে সবার। এখানেই কবির যত আরামবোধ ও স্বার্থকতা...
চিতার গান
আমি তোমার খেলার লাডুম -
ঘুরিয়ে দাও
অষ্টপ্রহর সূর্যদিঘীর মাতাল ঝাঁঝি।
কাঠের বুকে লোহার গুঁতা
নটীবালা ভেঙ্গেচুরে নাগর ডোরে
মেঘসিঁদুর আর উলুধ্বনি।
অট্টহাসির চারণ ভূমে
বেলাশেষে আমায় না হয় মুক্তি দিও -
পুড়িয়ে ফেলে...
**পরকীয়া
সদ্যমৃত মাছের তলে
লাল পলিথিনে
বৃষ্টি ঝরছে বিক্রেতার আঙ্গুলে।
বাল্বের আলো তাড়িয়ে
বুনে যাওয়া মাংসল অন্ধকারে
চুড়ি ভাঙনের শব্দ
রক্তবর্ণ জানোয়ার,
সিগারেটের আগুনে
মনের বাজার পুড়ে গেলো
হলদে গেন্দার মিথ
মাহমুদ নোমান
ধানের তোড়ে ঘাস ফড়িং
লটকে থাকে...”
ধোঁয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে তোমার মুখ
বিউটি পার্লারের কাঁচের গ্লাসে
ধলি বগার মতো নিসঙ্গ
কচুরিপানার বিলে
এখন আর তোমায় দেখি না।
যুবকও ভুলে গেছে খুশবো
হলদে গেন্দার,
যেদিন থেকে ব্যালকনির টবে ফুটেছে
**বেসাহারা
কত পথ উড়ে একটি অরলি হাঁস
আত্মহারা হয়ে ডুব দেয় কারো পুকুরে
ঠোঁটে আনে পুঁটিমাছ
সে সকালে,
আমার ঘর ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিল।
কুয়াশার চাদর উল্টাতে উল্টাতে
পেরুতে পারিনি রাস্তাখানি
আর দেখা হয়নি শেষ মুখ।
আমি শুধুও অরলি হাঁসটি উড়ে যেতে দেখি
*নস্টালজিক রোদে
ধানপাতায় জমে থাকা বাসি শিশিরে
তাকিয়ে দেখি -
সূর্য নগ্ন!
ফের তোমাতে তাকিয়ে দেখি -
তুমিও বিষণ্ন তার জ্যামিতি আঁকছো
তোমার মেয়ের অঙ্কের খাতায়!
ভাবছি, গতরাতে ঘুমের ঔষধটি কী খেলাম!
*মৃত্যুদ্বারে দাঁড়িয়ে
একটি রুমাল, শুকিয়ে যাওয়া গেন্দাফুল
নদীতে ভেসে চলে মধ্যাহ্নের জোয়ারে
ভাটায় খুঁজে পাই না
দু’চোখের বেঁড়িবাঁধ ভেঙেছে কবে
সবে, মিথ্যে বলা বলছি না
একটু ঘুমের জন্য মৃত্যু প্রয়োজন।
*একতরফা প্রেম
ছায়া হাঁটছে টর্চের আলোর আগে,
চাঁদও কি বেশরম
ঘষাঘষি করছে বাঁশপাতা;
বাদুড় লটকে গেছে
জ্যাম্পারের ভিতরে...
দৌড়তে দৌড়তে
তোমার কাছে এসে
যে ঝুঁকলাম,
তুমি চোখ উল্টে ফেললে!