মোঃ মামুন রশীদ ॥ টানা তিন বছর ধরে বাংলাদেশ দলকে ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এবার নেতৃত্বের ফিফটিও পূর্ণ হয়েছে তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে। কিন্তু এত বাজে কোন সিরিজ কাটাননি মাশরাফি এই তিন বছর। নিউজিল্যান্ড সফরে যদিও দল হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল কিন্তু প্রতিপক্ষের কাছে এত লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টানা তিন ম্যাচেই রেকর্ড ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ দল। আর এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার পর বাংলাদেশের ওয়ানডে ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত বোধ করছেন মাশরাফি। তিনি মনে করেন এই সফর বাংলাদেশ দলকে বার্তা দিয়েছে ভবিষ্যতে কিভাবে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা করে এগোতে হবে। আগামী বিশ্বকাপের আগেই নিজেদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে সমাধান বের করা জরুরী বলেও দাবি করেন মাশরাফি।
হঠাৎ করেই চরমভাবে ছন্দপতন ঘটেছে বাংলাদেশ দলের। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ২৭৮ রান করেও ১০ উইকেটে পরাজয়ের বিশ্বরেকর্ড হয়েছে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০৪ রানে পরাজয়ের পর তৃতীয় ম্যাচে আরও বাজেভাবে ২০০ রানে হেরেছেন মাশরাফিরা। সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া নতুন ঘটনা নয়। তবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচগুলো খেলে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই দলটির এমন নাজুক পরিস্থিতি সত্যিই বিস্ময়কর! শেষ দুই ম্যাচেই সাড়ে তিন শতাধিক রান করেছে প্রোটিয়ারা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে চতুর্থ দল হিসেবে প্রতিপক্ষকে ১০০০ রানের বেশি করতে দিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। এর আগে তিন ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ড, ভারত ও জিম্বাবুইয়ে ১০০০ রান দিয়েছিল। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বাজে বোলিং গড় ছিল বাংলাদেশ দলের। সিরিজের শুরুতে দুই ম্যাচের টেস্ট থেকেই এই বোলিং দৈন্য ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। আরও বেশি সতর্কভাবে এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার সমাধান বের করা জরুরী বলে মনে করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘এই সফরটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড় ধরনের সঙ্কেত। অনেক দ্বিপাক্ষিক সফর এগিয়ে আসছে এবং বিশ্বকাপও এগিয়ে আসছে। সুতরাং এই বিষয়গুলো বেশ সতর্কভাবে তত্ত্বাবধান করে দ্রুত সম্মিলিত একটি দল হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।’ টানা দুর্দান্ত খেলার পরও এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এমন বাজে নৈপুণ্য দেখাবে বাংলাদেশ দল সেটা ছিল সকলেরই ভাবনাতীত। জয়-পরাজয় মুখ্য ব্যাপার নয়, কিন্তু নিজেদের সেরাটা দিয়ে প্রচেষ্টা চালানোই প্রত্যাশিত ছিল। সেটাও পারেনি বাংলাদেশ দল। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা ব্যাটিং-বোলিং করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। আমরা কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারিনি। কিন্তু এটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হয়নি। আমাদের দ্রুতই এ বিষয়টিতে উন্নতি করতে হবে, নতুবা বাইরের দেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ভবিষ্যতে খুব কঠিন হয়ে পড়বে।’ শুধুমাত্র বোলিং ব্যর্থতাই নয়, শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংও ছিল একেবারে বেহাল। এ কারণে উভয় বিভাগেরই ত্রুটি দেখছেন মাশরাফি,‘ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার কেউ দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি। আমার মনে হয় নির্দিষ্ট খেলোয়াড় অনুসারে আমাদের বিষয়টা খুঁজে বের করতে হবে যে কেন আমরা ভাল খেলতে পারলাম না। আমার মনে হয় না শুধুমাত্র প্রচুর অনুশীলন করে এর সমাধান করা সম্ভব হবে। এটা দীর্ঘমেয়াদী একটা প্রক্রিয়া। আমাদের এ ধরনের উইকেটে খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যখন পরবর্তীতে আমরা বিদেশ সফর করব।’
মাশরাফির নিজের নৈপুণ্যটাও বেশ বাজে গেছে এবার। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম কোন তিন ম্যাচের সিরিজে তিনি উইকেটশূন্য থেকেছেন। তিনি এক্ষেত্রে বল হাতে খুব বেশি আক্রমণাত্মক হতে না পারাটাকেই দুষেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন,‘খুব কঠিন একটা সফর ছিল এটা। আমরা যদি উইকেট নেয়ার বিষয়টিকে বিবেচনা করি, তাহলে বলব আমি কিছুটা দুর্ভাগাও ছিলাম। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য সহায়ক হবে ভবিষ্যতে। আমার আরও বেশি আক্রমণাত্মক মেজাজের হতে হবে, যেমনটা আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ছিলাম।’
মাশরাফি মনে করেন বোলারদেরই ভাবতে হবে যেসব উইকেটে নিয়মিত প্রচুর রান হয় এবং ব্যাটিং বান্ধব উইকেট- সেসব স্থানে কিভাবে বোলিং করতে হবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে সাধারণত এই ধরনের ফ্ল্যাট উইকেটগুলোই বানানো হয়। তাই যেসব উইকেটে নিয়মিত ৩০০/৩৫০ রান হয় সেখানে কিভাবে বল করতে হবে সেটা বোলারদেরই ভেবে বের করতে হবে।’