ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক চাপ সৃষ্টি করছে

প্রকাশিত: ০১:১৫, ২০ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক চাপ সৃষ্টি করছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন বাম দলের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা, নির্যাতন, ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, গণহত্যার মধ্য দিয়ে যে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘটছে, আমরা বাংলাদেশের মানুষ তা শুধু প্রত্যক্ষই করছি না, তার বিশাল ভার বহন করতে হচ্ছে আমাদেরকে। রোহিঙ্গা সমস্যার উৎস এবং সমাধান দুটোই মিয়ানমারে। তাই সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করারও দাবি জানিয়েছেন তারা। শুক্রবার পুরানা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবি-বাসদ, বাম মোর্চা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাসদ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। আগামী ২২ অক্টোবর সকাল ১১টায় জাতিসংঘের ঢাকাস্থ বাংলাদেশ কার্যালয়ে এ পর্যন্ত সংগৃহীত লক্ষাধিক গণস্বাক্ষর জমা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই আমরা বামপন্থীরা রাজপথে সোচ্চার রয়েছি। সিপিবি-বাসদ, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ১১ সেপ্টেম্বর টেকনাফ-উখিয়া অঞ্চলে শরণার্থী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। দুর্গত রোহিঙ্গাদের প্রতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের জনগণ। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ৫টি দাবিতে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে স্মারকলিপি পেশের জন্য সারাদেশে সিপিবি-বাসদ, বাম মোর্চা গণস্বাক্ষর অভিযান পরিচালনা করে। গণস্বাক্ষর অভিযানে জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া লক্ষ করা গেছে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক চাপ সৃষ্টি করছে। সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে উসকে দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি করছে। এ ব্যাপারে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্টী সোচ্চার। কিন্তু আমরা প্রগতিশীল মানুষ সেরকম সোচ্চার নই। আমাদের মাথা ব্যথা কম। আমরা চুপ থাকলে মৌলবাদী গোষ্টীর মাঠ নিরাপদ হয়। তারা ইচ্ছেমত ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পায়। বাস্তবতা হলো, তাদের সুযোগ দিয়ে দেশকে অনিরাপদ করতে দিতে পারি না। নেতৃবৃন্দ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক মনোভাব উসকে দেয়া রোধে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতে সরকার কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। এমনকি প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে বাধাও দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা বিষয়টি এখন আর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। এটি একটি বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সরকার কূটনৈতিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের কিছু কিছু বক্তব্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই আমরা চাই সরকার এ বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াবে। প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগ করবে। যে কোন মূল্যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পক্ষে আনতে হবে। অন্যথায় চলমান এই বিপদ থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না।
×