ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাশরাফির আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ডাক

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

মাশরাফির আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ডাক

অনলাইন ডেস্ক ॥ ওয়ানডেতে ‘নিজেদের দিন’ বলে একটা কথা আছে। ‘নিজেদের দিন’ মানে এমন একটা দিন, যেদিন সবকিছু নিজেদের পক্ষে যাবে। প্রতিপক্ষের পক্ষে কিছুই নয়। খেলার মাঠে নিজেদের সেই দিনটার দেখা পেলে যেকোনো দলই জেতে। সে দক্ষিণ আফ্রিকা হোক, বাংলাদেশ হোক, অথবা বুরুন্ডি। নিজেদের দিনের দেখা পাওয়াটা আবার ভাগ্যের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। ভাগ্য ভালো তো আপনার দিন, ভাগ্য খারাপ তো প্রতিপক্ষের। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ভাগ্যের আশীর্বাদ পাওয়ার আশায় বসে থাকলে শূন্য হাতে ফেরার সম্ভাবনাই বেশি। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তাই ‘নিজেদের দিনে’র অপেক্ষায় থাকতে রাজি নন। দিন প্রতিপক্ষের হলেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে সেটাকে নিজেদের করে নিতে হবে, এই হলো তাঁর মন্ত্র। ডায়মন্ড ওভালে অনুশীলনে নামার আগে মাশরাফি দিলেন আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ডাক, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রক্ষণাত্মক ক্রিকেট খেলার প্রশ্নই ওঠে না। যদি এমন ভাবনা থাকে, নিজেদের দিনে আমরা ওদের হারাতে পারব, তাহলে আমরা সুযোগই পাব না। ব্যাটিং-বোলিং যা-ই করি এখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা।’ টেস্ট সিরিজে গো-হারা হারতে হয়েছে বলে ওয়ানডেতেও বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে, এমন ভাবার মতো ভিতু অধিনায়ক নন মাশরাফি। চিন্তাভাবনায় তিনি বরাবর এক পা এগিয়ে। কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ সবই প্রতিকূলে থাকলেও তাই জয়ের মন্ত্র আওড়ান অধিনায়ক, ‘নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেললে অবশ্যই জেতা সম্ভব। আমাদের চেষ্টা করতে হবে সব নেতিবাচক ব্যাপারগুলো বাইরে রেখে, ইতিবাচক ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা করা এবং মাঠে তা বাস্তবায়ন করা।’ বছরের শেষ দিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ আছে। তবে দেশের বাইরে এ বছর এটাই শেষ সিরিজ এবং মাশরাফির দৃষ্টিতে সবচেয়ে কঠিনও। একে তো দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে উপমহাদেশের কোনো দলেরই খুব ভালো কিছু নিয়ে ফিরে যাওয়ার স্মৃতি নেই, তারপর টেস্ট সিরিজের দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ খেয়েছে প্রচণ্ড ধাক্কা। সব সামলে ওয়ানডেতে স্বরূপে ফিরতে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাসের জোর। সতীর্থদের প্রতি তাই মাশরাফির পরামর্শ—টেস্টের হারের জ্বালা ভুলে ওয়ানডেতে যেন সবাই নতুন শুরু করে, ‘এ বছরের সবচেয়ে কঠিন সফর, যেটা আমরা এখন খেলছি। তবে এত কিছু চিন্তা করে খেলতে নামলে কাজটা কঠিন হয়ে যাবে। নতুন উদ্যমে, সতেজ মন নিয়ে খেলতে নেমে যদি শতভাগ লড়াই করা যায়, তাহলে যেকোনো কিছুই হতে পারে।’ টেস্টে মাশরাফি, সাকিব ছিলেন না। চোটের কারণে তামিম থেকেও ছিলেন অনুপস্থিত। ওয়ানডে সিরিজে এই তিন অভিজ্ঞের ফিরে আসাটা বড় সাহস জোগাবে বাংলাদেশ দলকে। তবে মাশরাফি চান শুধু সাকিব, তামিম বা অন্য সিনিয়রদের দিকে তাকিয়ে না থেকে দল হিসেবে ভালো খেলুক বাংলাদেশ, ‘আমাদের যতগুলো জয় আছে, সেগুলো দল হিসেবে ভালো খেলেই। সিনিয়রদের দায়িত্ব অবশ্যই বেশি। কিন্তু আমাদের যতগুলো জয় আছে, সেসবে জুনিয়রদের অবদানও কম নয়।’ দেশের মাটিতে যেকোনো সিরিজের আগেই এখন বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে অবধারিত প্রশ্ন, ‘সিরিজ জয় সম্ভব কি না’ বা ‘সিরিজ জয়ের কথা ভাবছেন কি না’। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের আগের এ রকম প্রশ্ন করাটা বাড়াবাড়িই হতো। মাশরাফিও সিরিজ শুরুর আগেই অত দূর চিন্তা করছেন না। আপাতত আজকের প্রথম ওয়ানডেতেই তাঁর দৃষ্টি, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। যখন আপনি তিন ম্যাচের সিরিজ খেলবেন তখন প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ থাকে। প্রথম ম্যাচ জিতলে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত সিরিজ জেতার সুযোগ থাকে।’ তাই বলে প্রথম ম্যাচটা জিততেই হবে, দলের ওপর এমন চাপ চাপিয়ে দিতে রাজি নন অধিনায়ক। তিনি বরং প্রক্রিয়াটা ঠিক রাখার পক্ষে। ব্যাটিংয়ে একটা ভালো শুরু, থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলে আসা, বোলারদের মৌলিক কাজগুলো ঠিকভাবে করা, ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ না ফসকানো—খেলোয়াড়দের কাছে অধিনায়কের চাওয়া বলতে এটুকুই। পুরো বিষয়টি মাশরাফি এককথায় বলে দিলেন, ‘আমরা যদি প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে পারি তাহলে বাকি সবও ঠিক থাকবে।’ মাশরাফি আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু আক্রমণাত্মক ক্রিকেট মানেই যে প্রতি বলে চার-ছক্কা মারতে যাওয়া নয়, সেটা নিশ্চয়ই বুঝবেন তাঁর ব্যাটসম্যানরা।
×