ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন মেটাতে বিশ্ব ব্যাংকের ‘সহায়তা নেবে’ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ১২ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন মেটাতে বিশ্ব ব্যাংকের ‘সহায়তা নেবে’ বাংলাদেশ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারে থেকে আসা রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা নেবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই সহায়তার পরিমাণ ও ধরণ কী হবে- তা ঠিক হবে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে। ওয়াশিংটন ডিসিতে বুধবার বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম দিন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সনের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। বিশ্ব ব্যাংকও রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে চায়, সহায়তা করতে চায়। “আমরা তদের সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারা কী পরিমাণ সহায়তা দেবে, সে সহায়তার কতোটা অনুদান হবে; কতোটা ঋণ হবে, না পুরোটাই ঋণ হবে তা তা আমরা দুপক্ষ বসে ঠিক করব।” মুহিত জানান, শিগগিরই বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে যাবে। তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এবং বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি -আইডিএ ‘রিফিউজি ফান্ড’ নামে নতুন একটি তহবিল গঠন করেছে, যার উদ্দেশ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের সহায়তা দেওয়া। এই তহবিলের আকার ২০০ কোটি ডলার। যে কোনো দেশ প্রয়োজনে সেখান থেকে তিন বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ডলার ঋণ নিতে পারে। তবে সেজন্য সুদ দিতে হয়। মোট অর্থের একটি অংশ বিশ্ব ব্যাংক অনুদান হিসেবেও দিতে পারে। বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান চিমিয়াও ফান গত ২৭ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তহবিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ঋণ দেওয়ার বিষয়টি প্রথম সামনে আনেন। বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গাদের সহায়তার ব্যাপারে তারা খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।… বাংলাদেশ এই তহবিলের কী পরিমাণ পাবে; শর্ত কী হবে সেসব বিষয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত হবে।” বিশ্ব ব্যাংক সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়ে বাংলাদেশ যে ভূমিকা রেখেছে তার জন্য আমরা সম্মান জানাই এবং প্রশংসা করি। আমরা বাংলাদেশের সহায়তার জন্য যা করা সম্ভব তার পুরোটাই করব। আমাদের একটি রিফিউজি সহায়তা উইনডো আছে; সেখান থেকে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারলে আমরা সম্মানিত বোধ করব।” স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি কেউ যাতে সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়ে ‘যৌক্তিক বিবেচনার’ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পরে বিশ্ব ব্যাংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, লাখ লাখ রোহিঙ্গার ভার সামাল দিতে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে এবং বিশ্ব ব্যাংক এই সঙ্কটে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত আছে। ওই সহায়তার পরিমাণ কী হবে তা এখনও নির্ধারণ করা না হলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং সড়ক অবকাঠামোর মত বিষয় এর আওতায় আসতে পারে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। অ্যানেট ডিক্সনকে উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হয়, “আমরা আশা করব, রোহিঙ্গারা শিগগিরই তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবে। কিন্তু তার আগে তাদের জরুরি মানবিক সহায়তার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পাশে থাকতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। এ জন্য যা করা সম্ভব তার সবই আমরা করব।” মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত দেড় মাসে প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের সহায়তায় জোর তৎপরতা চালাচ্ছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দাতা ও উন্নয়ন সংস্থা। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সমালোচনা হবে কিনা- এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, “যে সহায়তা তারা দেবে সেটা অনুদান না ঋণ- তা তো এখনও ঠিক হয়নি। আর যদি ঋণ নিয়ে আমরা রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেই, তাতে দোষ কী? আমরা তো মানবতার জন্য এই কাজ করছি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি…। যারা সমালোচনা করবে তারা রাবিশ।” অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের এই সহায়তার কিছু অংশ যদি ঋণও হয়, তার সুদের হার হবে ‘খুবই সামান্য’। এটা নিয়ে ‘বিচলিত হওয়ার মত কিছু’ তিনি দেখছেন না।
×