ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী মুহিত

রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্রুত সমাধানে সার্বিক সহযোগিতা চাই

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্রুত সমাধানে সার্বিক সহযোগিতা চাই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। এই সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের যা করণীয় সেটা তারা করে চলেছে। সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় অর্থমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ, ইউএনডিপির প্রশাসক আকিম স্টেইনার ও ইউএন-ওএইচআরএলএলএসের প্রধান ও জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিজ ফেকিতামইলোয়া কাতোয়া ইউটোইকামানুর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের কার্যালয়ে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিউল আজম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম ও বাংলাদেশ মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুনসহ ৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। অত্যন্ত হৃদ্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সাক্ষাতের সময় অর্থমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ অনুযায়ী একটি ‘সেফ জোন’ গঠনসহ এ সঙ্কটের দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মহাসচিব গুতেরেজ জানান, বিষয়টি তিনি সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। অধিক জনসংখ্যার দেশ হয়েও বাংলাদেশ এই বিশাল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দীর্ঘদিন ধরে মানবিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে যা তাকে মুগ্ধ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গুতেরেজ এই মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। মহাসচিব জানান, শরণার্থী বিষয়ক পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বর্তমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এ সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের যা করণীয় তা তারা করে যাচ্ছে। তিনি বিশেষ করে এ বিষয়ে তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার নিশ্চয়তা দেন। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনের হাই লেভেল সপ্তাহে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আলাপচারিতার কথা তিনি উল্লেখ করেন। সাক্ষাতকালে অর্থমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য আন্তোনিও গুতেরেজকে অভিনন্দন জানান। তিনি বিশ্বব্যাপী চলমান সঙ্কট, সহিংসতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, পরিবেশগত উন্নয়ন এবং মানবিক সহযোগিতা প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান মহাসচিবের গতিশীল নেতৃত্বে জাতিসংঘ আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। অর্থমন্ত্রী জাতিসংঘ সংস্কার কার্যক্রমকে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ উল্লেখ করে এর সাফল্য কামনা করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে জাতিসংঘের সংস্কার বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন। এ সংস্কার স্বল্পোন্নত দেশসমূহের অগ্রগতি ও উত্তরণের ক্ষেত্রে যাতে সহায়ক হয় তা নিশ্চিত করার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশসহ এলডিসি থেকে পরবর্তী ধাপে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নসহ সম্পদের যথাযথ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন গতিধারা সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি জানান, এসডিজি ঘোষিত হওয়ার আগেই এর লক্ষ্যসমূহ নিয়ে বাংলাদেশ নিজস্বভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করে আসছিল যা এসডিজির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে একধাপ সামনে এগিয়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে মর্মে অর্থমন্ত্রী মহাসচিবকে অবহিত করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেজ অর্থমন্ত্রীকে ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এসডিজি বাস্তবায়ন, ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস, দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা তৈরিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে মহসচিব গুতেরেজ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশসমূহকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে জাতিসংঘের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে মর্মে অর্থমন্ত্রীকে জানান। অর্থমন্ত্রী ইউএনডিপির সদর দফতরে ইউএনডিপির প্রশাসক আকিম স্টেইনারের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে ইউএনডিপির প্রশাসক রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নসহ উন্নয়নমূলক কর্মসূচীতে ইউএনডিপি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে মর্মে ইউএনডিপি প্রশাসক অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করেন। মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেছেন।
×