ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এতিম রোহিঙ্গা শিশু পাচ্ছে স্মার্ট কার্ড

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এতিম রোহিঙ্গা শিশু পাচ্ছে স্মার্ট কার্ড

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া পরিবার বিচ্ছিন্ন ও অনাথ রোহিঙ্গা শিশুদের আলাদা ক্যাম্পে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; এজন্য সরকারের কাছে জমিও চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এক হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা শিশুকে শনাক্ত করে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সমাজকল্যাণ সচিব জিল্লার রহমান বলেছেন, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সব এতিম ও পরিবার বিচ্ছিন্ন রোহিঙ্গা শিশুদের আলাদা করে স্মার্ট কার্ড দেবেন তারা। “এই রোহিঙ্গা শিশুদের আলাদা করে রাখতে সরকারের কাছে উখিয়া ও টেকনাফে ২০০ একর করে জমি চাওয়া হয়েছে। জায়গা পেলে অনাথ রোহিঙ্গা শিশুদের আলাদা ক্যাম্পে রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরিকল্পনা পাঠানো হবে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও সচিব জিল্লার রহমান। জিল্লার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অনাথ রোহিঙ্গা শিশুদের চিহ্নিত করে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার এই কাজ শুরু করেছেন তারা। এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা ১৮০০ শিশুকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা যাবে বলে তারা আশা করছেন। “১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সটা ভালনারেবল। তাদের যদি নরমাল এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাখা হয় হয়ত তারা অশান্তির কাজে জড়িয়ে যেতে পারে। এজন্য সরকারের বিবেচনা হচ্ছে, পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা।” জায়গা বরাদ্দ পেলে শূন্য থেকে সাত বছরের শিশুদের এক জায়গায় এবং ৮ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের আরেক জায়গায় রেখে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে তাদের পরিচর্যা করার পরিকল্পনার কথা জানান সমাজকল্যাণ সচিব। তিনি বলেন, “ওই শ্রেণির মানুষের (অপরাধী) সংস্পর্শে যেন শিশুরা না আসে। বাংলাদেশের শান্তিশৃঙ্খলা যেন বিঘ্নিত না হয় এবং এটা তাদের অধিকার।” এদিকে এতিম শিশুদের চিহ্নিত করে স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু হওয়ায় অনেক বাবা-মাও বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় তাদের সন্তানকে এতিম দেখিয়ে কার্ড নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের যে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে তার অর্ধেক অংশ জুড়ে ছবি, আর বাকি অর্ধেকে তথ্য থাকছে। কার্ড বিতরণে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১২০ জন কর্মচারী কক্সবাজারে কাজ করছেন। “কোনো রোহিঙ্গা শিশু খুব খারাপ অবস্থায় নেই, তাদের দেখাশোনা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি আন্তর্জাতিক চাপে তাদের দ্রুত ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা থাকছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সহযোহিতা করা হবে।” মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখের মত রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফের হিসাবে শরণার্থীদের মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশই শিশু। ইউনিসেফের কমিউনিকেশন্স স্পেশালিস্ট শাকিল ফয়জুল্লাহ জানান, গত বছর অক্টোবরে এক দফা রোহিঙ্গা প্রবেশ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ১৪ শ’র বেশি পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুকে তারা চিহ্নিত করেছেন। “আমাদের একটি চেষ্টা হল- এই শিশুদের পরিবারের সঙ্গে রিইউনাইট করা। ইউনিসেফ কর্মীরা ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে খোঁজ করে দেখছেন। আমরা এ পর্যন্ত ৫১টি শিশুকে তাদের পরিবারের সঙ্গে রিইউনাইট করতে পেরেছি।” পরিবার বিচ্ছিন্ন ও অনাথ রোহিঙ্গা শিশুদের আলাদা ক্যাম্পে রাখার সরকারি পরিকল্পনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শাকিল ফয়জুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইউনিসেফের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
×