ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের চিন্তা

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জোরালো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জোরালো হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান থাকলেও আজও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি। তবে এবার প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো দাবি উঠছে। ইসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের চিন্তভাবনা করা হচ্ছে। বিষয়টি জটিল হওয়ায় তা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিক হিসেবে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক অধিকার ‘ভোটাধিকার’ প্রয়োগ করতে পারছেন না বছরের পর বছর। সময় এসেছে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্য ইসির প্রতি অনুরোধ জানান তারা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩১ জুলাই থেকে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে তারা। এছাড়া রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রয়েছে। এসব সংলাপে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি এবং প্রস্তাব পেশ করা হলেও প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন। তারা উল্লেখ করেন দেশে প্রায় ১ কোটি লোক দেশের বাইরে থাকেন। এদের বড় অংশ ভোটার। তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা থাকলেও নির্বাচনের সময় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারা দুঃখজনক। অথচ দেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা সে দেশের জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন। আইন জটিলতার কারণে দেশের প্রবাসীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত । বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে এখনই আইনী প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। ভোটারদের বিরাট একটি অংশ ভোট থেকে বিরত রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। যত তাড়াতাড়ি এই প্রক্রিয়া শুরু করা যায় ততই দেশের জন্য মঙ্গল। তবে ইসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলা হলেও বিষয়টি জটিল মনে করছেন তারা। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা এ বিষয়ে বলেন, প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের যে পরামর্শ এসেছে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। তারপরও ইসি একটি প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এবং নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত নির্দিষ্ট কিছু ভোটার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু প্রক্রিয়াটি জটিল। দেশে এবং বিশেষ করে বিদেশে অবস্থানরত সব ভোটারকে সহজ পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়ার বিষয়গুলো আইনী কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নিয়ে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহও নির্বাচনে প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের উপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন আমাদের প্রায় এক কোটি ভোটার দেশের বাইরে রয়েছে। কিন্ত নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। প্রায় এক কোটি ভোটারকে নির্বাচনের সময় ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একই ধরনের মত দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ। তিনিও বলেন, যারা অভিবাসী তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত ১৬ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছে। এসব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সেনা মোতায়েন এবং নির্বাচনকালী সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ভিন্নœমত পোষণ করা হলেও প্রবাসী ভোটাধিকারের বিষয়ে তারা একমত পোষণ করেছেন। এ বিষয়ে ইসিকে উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান তারা। তবে ইসির কর্মকর্তারা বলেন এ বিষয়ে ইসি একমত পোষণ করলেও প্রক্রিয়া জটিল। এ বিষয়ে কি ধরনের পক্রিয়া নেয়া যায় তা নিয়েই ইসির পক্ষ থেকে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রবাসীরা যাতে প্রবাস থেকে ভোট দিতে পারেন, সে লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত এর কোন বাস্তবায়ন নেই। প্রবাসে অবস্থানরতরা বিভিন্ন সময় থেকেই সরকারের কাছে ভোটাধিকারের বিষয়ে দাবি জানিয়েছে আসছে। কিন্তু কোন কার্যকর ফল পায়নি তারা। জানা গেছে, শামসুল হুদা কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছুটা উদ্যোগ নেয়া হলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান কমিশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত জোরালো কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তবে তারা বলছেন বিষয়টিকে আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যে কিভাবে আনা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকেরা যদি সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এদেশে বসেই ভোট দিতে পারেন, তাহলে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকরা কেন বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। তারা বলছেন আইন সংশোধনের মৌখিক উদ্যোগ নয়, প্রবাসীরা যাতে প্রবাসে থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন আগ থেকেই সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে আইনী কিংবা কারিগরি ঘাটতির দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারা বলেন, সংবিধানে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে। যা ভোটার হওয়ার প্রশ্নে কোন অন্তরায় নয়। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক বৈধ নাগরিকের ভোটাধিকার স্বীকৃত হলে কেন প্রবাসীদের ভোটাধিকার নেই এবং ভোট দিতে পারছেন না? জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত ‘ভোটার তালিকা সংশোধন আইন ২০০৯ এর ৬নং আইন মোতাবেক কোন ভোটার এলাকা বা নির্বাচনী এলাকার রেজিস্ট্রেশন অফিসার, কমিশনের তত্ত্বাবধান, নির্দেশন এবং নিয়ন্ত্রণাধীনে, উক্ত ভোটার এলাকা বা নির্বাচনী এলাকার জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করিবেন। যাহাতে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত থাকিবে যিনি, যোগ্যতা অর্জনের তারিখে- (ক) বাংলাদেশের একজন নাগরিক হন; (খ) আঠারো বৎসরের কম বয়ষ্ক নহেন; (গ) কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতস্থ বলিয়া ঘোষিত নহে এবং (ঘ) উক্ত ভোটার এলাকা বা ক্ষেত্রমত, নির্বাচনী এলাকার অধিবাসী বা অধিবাসী বলিয়া গণ্য হন। একই আইনে (৬) উপধারা (১) এ যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বাংলাদেশী নাগরিক বিদেশে বসবাস করিলে, তিনি সর্বশেষ যে নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করিয়াছেন অথবা তাহার নিজ বা পৈত্রক বসতবাড়ি যে স্থানে অবস্থিত ছিল বা আছ তিনি সেই এলাকার অধিবাসী বলিয়া গণ্য হইবেন। তারা বলেন, একজন নাগরিক কেবল একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই অংশগ্রহণ করে না, রাজনৈতিক কর্মকা-েও অংশগ্রহণ করে। প্রতি নাগরিকের প্রধান রাজনৈতিক অধিকার ও কর্তব্য হচ্ছে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করা। কিন্তু নাগরিক হিসেবে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক অধিকার ‘ভোটাধিকার’ প্রয়োগ করতে পারছেন না বছরে পর বছর। সময় এসেছে এ বিষয়ে কর্যকর উদ্যোগ নেয়ার। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আইনী প্রক্রিয় গ্রহণের জন্য ইসিনর প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
×