ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনেকের চাকরির বয়স চলে গেছে

পরীক্ষার পর ২৬ মাস চলে গেলেও ‘অডিটর’ নিয়োগের ফল হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পরীক্ষার পর ২৬ মাস চলে গেলেও ‘অডিটর’ নিয়োগের ফল হয়নি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ পরীক্ষার পর দীর্ঘ ২৬ মাস চলে গেলেও ‘অডিটর’ নিয়োগের ফল প্রকাশ করতে পারেনি মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক বা বাংলাদেশ কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয়। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের করা মামলা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কবলে পড়ে ২৬ মাস ধরেই কাক্সিক্ষত চাকরির ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন হাজার হাজার পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে অনেকের চাকরির বয়স চলে গেলেও তারা এখন অপেক্ষা করছেন কবে জানা যাবে অডিটর নিয়োগের ফল? উদ্বিগ্ন চাকরিপ্রার্থীরা হতাশ হয়ে এবার আন্দোলনে নামার চিন্তা করছেন। তারা দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। তবে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছর দুই মাস চলে গেলেও শীঘ্রই ফল প্রকাশের সম্বাবনা কম। কর্মকর্তাদের অনেকেই বলছেন, যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে ফল প্রকাশ করতে আরও এক বছর যেতে পারে। পরীক্ষার্থীদের একজন আবকর হোসেন। গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করা এ চাকরিপ্রার্থী বলছিলেন, একটি পরীক্ষা দিয়ে যদি ২৬ মাস ধরে ফলের আশায় বসে থাকতে হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব? শুনেছি একটি মামলা ছিল, তাও নিষ্পত্তি হয়েছে। তবু ফল প্রকাশ হচ্ছে না। অফিসে গেলেও কোন সদুত্তর পাই না আমরা। কেউ ভালভাবে কথা বলেন না। এখন গণমাধ্যমের সহায়তা ছাড়া প্রায় আড়াই লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের অপেক্ষার অবসান কেউ ঘটাতে পারবে না। তাই আমরা সাংবাদিকদের সহায়তা চাই। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ২০১৫ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয় ও তার অধীন আন্যান্য কার্যালয়ের জন্য অডিটর নিয়োগ পরীক্ষা হয়। ২২৬টি পদের জন্য এ পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থী ছিলেন প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার। জানা গেছে, এ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় ছিল একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস করে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে টিকিয়ে আনার জন্য সক্রিয় ছিল একটি চক্র। এরা অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে প্রশ্নপত্র দেয়ার কথা বলে তৎপর হয়ে ওঠে। ওই সময় ঠিক পরীক্ষার আগের দিন ও পরীক্ষার দিন প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতাসহ ১৫ সদস্যকে আটক করেছিল র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-২। অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। ওই সময়ই র‌্যাব জানতে পারে অডিটর পদের পরীক্ষায় প্রশ্ন ও পরীক্ষার খাতা ফাঁসে তিনটি গ্রুপ সক্রিয় ছিল। পরিকল্পনা করে পরীক্ষায় পাসের নিশ্চয়তা দিয়ে লাখ লাখ টাকায় পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে তারা। এরপর সতর্কতার সঙ্গে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে প্রশ্নোত্তরপত্র সরবরাহ করে। এভাবে চক্রটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে। ওই ঘটনায় আটক করা হয়েছিল মোঃ জাকির হোসাইন (২৪), মোঃ হারুন মিয়া (৩২), রাদেশ কুমার সিংহ (২৯), মোঃ প্রিন্স (১৯), মোঃ মীর মোশারফ হোসেন (৩৫), মোঃ আবু সাইদ (২৮), মোঃ আশাউদ্দৌলা (৩১), মোঃ আব্দুল্লা আল মামুন (২২), মোঃ মোহানুর রহমান (২০), মোঃ হাসান (২২), ত্রিদেব চাকমা (৪২), মোঃ জনি (২৫), মোঃ নাহিদ (৩০), মোঃ কামরুল (২০) ও মোঃ বোরহান উদ্দিনকে (৩৮)। আটকের খবরের মধ্যেই ওই দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন হাজার হাজার প্রার্থী। রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ৭০ নম্বরের ঘণ্টাব্যাপী এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফল প্রকাশের পর থেকেই অপেক্ষা। সে অপেক্ষা আজও শেষ হয়নি দেখে হতাশ লক্ষাধিক প্রার্থী। চাকরিপ্রত্যাশী সাতক্ষীরা শহরের আব্দুল আজিজ জানান, তিনি ২০১৫ সালের ওই বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি তার ফল প্রকাশিত হয়নি। সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে কমপক্ষে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ পরীক্ষা নিয়ে যদি এভাবে প্রহসনমূলক আচরণ করা হয়, তবে তা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করা চাকরিপ্রার্থী নাবিলা জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করে বলছিলেন, এভাবে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীকে মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখা রীতিমতো অপরাধ। আমরা তো পরীক্ষা দিয়ে কোন অপরাধ করিনি। অনেকের অন্য চাকরিও হয়নি। বয়সও চলে যাচ্ছে। অপেক্ষা করছেন এ পরীক্ষার ফলের জন্য। আমরা এখন আন্দোলনের চিন্তা করছি। এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। কিন্তু কেন এ সঙ্কট? হাজার হাজার প্রার্থীর এ পরীক্ষা নিয়ে কেনইবা অবহেলা? বিষয়টি জানার জন্য প্রতিষ্ঠানটির এ্যাসিস্ট্যান্ট কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল (এক্সাম এ্যান্ড ইন্সপেকশন) আবু হাফেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি বেশিদিন হয়নি এখানে এসেছি। খুব ভাল জানি না বিষয়টি, তবে যতদূর জানি মামলার কারণেই ফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ কর্মকর্তা পরীক্ষার ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে নিয়োগ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অপর কর্মকর্তা এ্যাসিস্ট্যান্ট কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল (প্রসিডিউর) মোঃ আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, পরীক্ষার পর অনেক দিন চলে গেছে এটা ঠিক। কিন্তু একটি মামলার কারণেই এমন হয়েছে। একটি কুচক্রী মহল মামলা দিয়েছিল, যাতে পরীক্ষার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু কেন তারা সেটা করবেন? আর মামলার কারণেই কেবল এটা হয়েছে- এমন প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, দেখেন মামলার তদন্ত রিপোর্ট করতেই প্রায় নয় মাস সময় নিয়েছে পুুলিশ। সময় লাগছে। আমরা নিজেরাই সক্রিয় হয়ে কাজ করেছি মামলার বিরুদ্ধে। এখন মামলার বিষয়টি সমাধান হয়েছে। কিন্তু মামলার সমাধান হলেও কেন ফল প্রকাশ হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মামলা শেষ হলেও অনেক কাজ আছে। নিয়োগের মেয়াদ চলে গেলে আবার আমাদের সংশ্লিষ্ট কমিটির বৈঠক করে নতুন পদ অনুমোদন করতে হবে। এছাড়া আরও কাজ বাকি আছে। সব কাজ শেষ করতে কতদিন লাগতে পারে, শীঘ্রই হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে তেমন কোন আশার আলো দেখাতে পারছেন না এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কবে ফল প্রকাশ হবে। তবে হ্যাঁ, এক বছর তো লাগবেই। অপর এক প্রশ্নে তিনি চাকরিপ্রার্থীদের তথ্য জানার জন্য তাদের অফিসের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তারা যোগাযোগ করবে আমাদের সঙ্গে, পত্রিকা অফিসে কেন যায়?
×