ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রসমূহ সম্প্রসারণে সংসদে বিল উত্থাপন

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রসমূহ সম্প্রসারণে সংসদে বিল উত্থাপন

সংসদ রিপোর্টার ॥ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রসমূহ সম্প্রসারণ ও বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে মানবদেহে ’অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) বিল-২০১৭’ উত্থাপন করা হয়েছে। বুধবার রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিলটি উত্থাপন করেন। বিলে আত্মীয়-স্বজনদের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাটানো হয়েছে। বিলে কোন হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না বলে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংযোজনের অনুমতির জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সরকারের বরাবরে আবেদন করতে হবে। নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত পূরণ করলে হাসপাতালকে অনুমতি দেওয়া হবে। বিলের বিধান কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে উক্ত অনুমোদন নিতে হবে। কোন হাসপাতাল এ বিধান লংঘন করলে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা যাবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্থাপিত বা প্রতিষ্ঠিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন সংক্রান্ত হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রে অনুমতির প্রয়োজন হবে না। বিলে সুস্থ, স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন কোন জীবিত ব্যক্তির এমন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্তির কারণে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টির আশংকা না থাকলে তা কোন নিকট আত্মীয়ের দেহে সংযোজনের জন্য দান করতে পারবেন বলে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে শর্ত থাকে চক্ষু ও অস্থিমজ্জা সংযোজন বা প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয় হবার প্রয়োজন হবে না। বিলে কোন ব্যক্তি জীবদ্দশায় স্বেচ্ছায় তার কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ লিখিতভাবে দান করলে তা উক্ত ব্যক্তির ব্রেইন ডেথ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য কোন ব্যক্তির দেহে সংযোজনের উদ্দেশ্যে বিযুক্ত করা যাবে বলে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে ব্রেইন ডেথ ঘোষণা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দাতা, গ্রহীতার যোগ্যতা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্রেইন ডেথ ঘোষিত ব্যক্তির ক্যাডাভেরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বয়স ২ বছরের কম অথবা ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে তা সংগ্রহ করা যাবে না বলে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে চক্ষু ও অস্থিমজ্জা সংযোজন বা প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না। জীবিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বয়স ১৮ বছরের কম অথবা ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে পুনঃউৎপাদনশীল টিস্যুও ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা রক্ত সম্পর্কিত ভাই-বোন হলে অথবা চক্ষু, অস্থিমজ্জা সংযোজন বা প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া মৃত্যুর পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানে লিখিত আপত্তি করলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কার্যকারিতা কোন কারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, চক্ষু, অস্থিমজ্জা ও যকৃত প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্র ব্যতিত অন্যান্য ক্ষেত্রে, এইচ বি এস এ জি, এন্টি এইচ সি বি অথবা এইচ আই ভি পজেটিভ থাকলে, মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক অযোগ্য ঘোষণা করা হলে, চর্ম বা মস্তিষ্কের প্রাইমারি স্টেজ ক্যান্সার ব্যতিত অন্য যে কোন ধরনের ক্যান্সার, কিডনি সংক্রান্ত রোগ, এইচ আই বি বা হেপাটাইটিস ভাইরাস, মেলিগন্যান্ট হাইপারটেনশন, জীবাণু সংক্রান্ত জনিত রোগ থাকলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদানে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না বলে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে বয়স ২ বছরসথেকে ৭০ বছর সীমার মধ্যে না হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন না। তবে শর্ত থাকে ১৫ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বয়সসীমার ব্যক্তি কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যক্তিগণ গ্রহীতা হিসেবে অগ্রাধিকার পাবেন। আরো শর্ত থাকে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বা প্রতিস্থাপনে মেডিকেল বোর্ড গঠন ও এর কার্যাবলী প্রত্যয়ন বোর্ড গঠন ও এর কার্যাবলী, ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটি গঠন ও এর কার্যাবলী, ক্যাডাভেরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন পদ্ধতি, রেজিস্ট্রার সংরক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে উল্লেখিত বিধান লংঘনের যে কোন ব্যক্তি ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পৃথক দন্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
×