ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ ॥ শেখ হাসিনাই প্রকৃত শান্তির দূত -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৩:২৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ ॥ শেখ হাসিনাই প্রকৃত শান্তির দূত -স্বদেশ রায়

দুটো বিষয় নিয়ে রাজনীতির পানি ঘোলা করার চেষ্টা করেছিল বিএনপি। শেষ অবধি দুটোতেই তাদের চুপসে যেতে হলো। এ দুটোর পেছনে অনেক বড় ষড়যন্ত্র আছে। যারা এ মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে বেকায়দায় ফেলতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে কাজ করছেন তারা এর সঙ্গে আরও একটি বিষয়কে টেনে এনেছিল- তা হলো বন্যা। অতিবর্ষণ ও দেশের কিছু চরাঞ্চলে পানি ওঠার মতো বন্যাকে তারা ৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কেন তারা এসব কাজ করেছিলেন তা ভবিষ্যত বলবে। বাস্তবতা হচ্ছে শেখ হাসিনা এই তিনটিকেই অতি সহজভাবে মোকাবেলা করেছেন বা করে চলেছেন। প্রথমটি এসেছিল ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে মি. সিনহার অবজারভেশনগুলো নিয়ে। ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছিল প্রধান বিচারপতির চেয়ার থেকে যদি সিনহা এই কথাগুলো বলেন তাহলে শেখ হাসিনার সকল অর্জন শেষ হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা গত আট বছরে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও উন্নয়নকে দৃশ্যমান করেছেন। সাধারণ মানুষও সরাসরি তার সুফল পাচ্ছেন। সেখানে কোনরূপ ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া শেখ হাসিনার বদান্যতায় প্রধান বিচারপতি হয়ে এমন কোন কেউ কেটা হওয়া যায় না যে তিনি অবজারভেশন দিলেই ঝুর ঝুর করে শেখ হাসিনার অর্জনগুলো ভেঙ্গে পড়বে। এমনটি ভাবার আগে তাদের রবীন্দ্রনাথের পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি একটু স্মরণে নেয়া উচিত ছিল। এই লেখা যখন লিখছি, তা প্রকাশের আগেই সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত আসবে। তাই এ নিয়ে বেশি কিছু লেখার নেই এ মুহূর্তে। তবে মিডিয়ায় তার দৃশ্যমান দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পরে তিনি এখন যেভাবে করুণা ভিক্ষা করছেন নানা জনের কাছে, তাতে প্রমাণ করে শেখ হাসিনা ওই ষড়যন্ত্রকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন। অন্যদিকে এক আধ জন কলামিস্ট ছাড়া বাদবাকিরা তার দৃশ্যমান দুর্নীতির অভিযোগ দেখার পরে নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। এ ধরনের দৃশ্যমান দুর্নীতির অভিযোগ দেখার পরে আর যাই হোক কেউ যে বিচারপতি থাকার নৈতিক শুধু নয়, আইনগতভাবেও কোন অধিকার রাখেন না তা সকলে জানেন। তাছাড়া সরকার যদি ব্যবসায়ীদের একটু মুখ খোলার সুযোগ দেয় তাহলে এই ব্যক্তিকে ঘিরে যে ষড়যন্ত্রের জাল তৈরি করা হয়েছিল তা বালির বাধের মতো ভেসে যাবে। অন্যদিকে বিভিন্নভাবে তার পক্ষ নেয়া যে চার পাঁচ জন সম্পর্কে যে সব তথ্য আসছে তাদের যদি আইনের আওতায় আনা হয় তাহলে দেখা যাবে এই ষড়যন্ত্রের মূল কোথায়? কত কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি সেখানে হয়েছে। যিনি ষড়যন্ত্রের দৃশ্যমান নায়ক তিনি কত অবৈধ টাকা নিয়েছেন। তার সঙ্গীরাও বা তার পক্ষে যারা কথা বলছেন তারাও কত অর্থ পেয়েছেন। তাই যারা বিচার বিভাগ, বিচার বিভাগ বলে চিৎকার শুরু করেছিলেন তারা এখন দেখতে পাচ্ছেন বিষয়টি বিচার বিভাগের নয় এক ব্যক্তির দুর্নীতির। বিএনপি যে এ সব খবর জানে না তা নয়। জানে বলেই তারা চুপ হয়ে গেছে। চুপ হয়ে গেছে সেই সব পত্রিকা– যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রে রে করে উঠেছিল। তবে এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রোহিঙ্গা সমস্যা এসে পড়ে শেখ হাসিনার ওপর। বিএনপি মনে করেছিল এটা তাদের জন্য পোয়াবারো হবে। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছিল, তাদের ধারণা শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের পক্ষে দাঁড়াবেন না। কেন তাদের এমন একটি ধারণা হয়েছিল তা তারাই ভাল জানেন। অবশ্য বিএনপির রাজনীতির দিকে তাকালে তাদের এই মনে করার কারণটি বোঝা যায়। বিএনপি রাজনীতি করে কেবল ক্ষমতায় যাবার জন্য আর তাদের নেত্রী ও তার ছেলের একমাত্র উদ্দেশ্য ক্ষমতা ভোগ করে অর্থ রোজগার করা। তাছাড়া রাষ্ট্রক্ষমতা, রাজনীতি এগুলোতে কোন মানবিক দিক তাদের কাছে স্থান পায় না। তারা বুঝতে পারেন না বঙ্গবন্ধুকে, তারা বুঝতে পারেন না শেখ হাসিনাকে। যে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কাছে মানুষই সব থেকে বড় সত্য এটা আর যাই হোক বিএনপি বা বাংলাদেশের ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই রোহিঙ্গা নিয়ে বিএনপিসহ সকল ষড়যন্ত্রকারীর হিসেবে ভুল হয়ে গেছে। আমাদের দেশের অনেক মানুষের শরণার্থী জীবনের অভিজ্ঞতা আছে। ’৭১ সালে আমরা সাড়ে সাত কোটির এক কোটি শরণার্থী ছিলাম। সেদিনের অনেক স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই কাদামাটিতে শরণার্থীদের পাশে মহীয়সী ইন্দিরা গান্ধীকে। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে শেখ হাসিনার মুখ দেখে ’৭১ থেকে ২০১৭তে এসে মনে পড়ল সেই ইন্দিরা গান্ধীর মুখ। সেই মমতাময়ী মায়ের মুখ। একজন মা ও একজন বোন হিসেবে শেখ হাসিনাকে যারা কাছ থেকে দেখেননি তারা আসলে বুঝতে পারেন না কি বিশাল মাতৃ ও বোনের হৃদয় নিয়ে শেখ হাসিনা দেশ চালান। মানুষের জন্য নিজেকে কীভাবে তিনি উৎসর্গ করেছেন। শেখ হাসিনার এই হৃদয় অনেকের কাছে অপরিচিত বা অনেকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন বলেই তারা মনে করেছিলেন শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবেন না। তাদের সকল ধারণা ভুল প্রমাণিত করে, শেখ হাসিনা শুধু তাদের আশ্রয় ও খাদ্য দেননি। তিনি একজন গৃহস্থ ঘরের মায়ের মতো বলেছেন, ১৭ কোটিকে যদি খাওয়াতে পরাতে পারি তাহলে আর সাড়ে সাত লাখকেও খাওয়াতে পরাতে পারব। তাই বলে কোন মানব সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারব না। শেখ হাসিনা বিষয়টি শুধু আবেগ দিয়ে দেখেননি, রাষ্ট্রনায়ক ও বিশ্বমাপের নেতার দৃষ্টি দিয়েও দেখেছেন। তিনি আগে তাঁর পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস করিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া, তাদের জন্য বিশ্ব জনমত গড়ে তোলা ও সসম্মানে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা। এখানেও শেখ হাসিনার ভাষণ শুনতে শুনতে একাত্তরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের ইন্দিরা গান্ধীর কথা মনে পড়ছিল। তিনি বলেছিলেন, বিশ্ব মানবতা যাতে শরণার্থীদের পক্ষে এসে দাঁড়ায় সেই কাজ করব এবং খুব শীঘ্রই শরণার্থীরা সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাবে। শেখ হাসিনাও একই কথা বলেছেন। তিনি বিশ্ব জনমত গড়ে তুলবেন এবং অচিরেই রোহিঙ্গারা সসম্মানে তাদের দেশে ফিরে যাবেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আমাদের ’৭১-এর পার্থক্য এক জায়গায়। আমরা ছিলাম নির্বাচিত একটি সরকারের অধীনে স্বাধীনতা ঘোষণা করা একটি স্বাধীনতা যুদ্ধরত দেশের মানুষ। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি মূলত পাকিস্তানীদের তৈরি একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। শেখ হাসিনা সেটা স্পষ্ট বলেছেন, তিনি যেমন কোন এথনিক ক্লিনজিং মেনে নেবেন না তেমনি কোন সন্ত্রাসী কর্মকা-কে প্রশ্রয় দেবেন না। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে যে কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- স্থান পায় না তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। কোনরূপ সন্ত্রাসী বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না সেটা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা আগেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গা নিবন্ধন শুরু করিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের যে মুহূর্তে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছেন ও সংসদে প্রস্তাব পাস করিয়েছেন বিশ্ব দরবারে তাদের কথা তুলে ধরার জন্য বিএনপির পক্ষে এ কাজ মোটেই সম্ভব ছিল না। বেগম জিয়া ভারতের ভয়ে ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে যান। ১৯৭৮ সাল থেকে এই রোহিঙ্গা সমস্যা শুরু হলেও কোনদিন এভাবে পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আসার সাহস পাননি জিয়াউর রহমান। পাছে চীন কিছু মনে করে এই ভয়ে। আজ যদি খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতেন, কোন মতেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংসদে সিদ্ধান্ত পাস হতো না এবং তিনিও রোহিঙ্গাদের দেখতে শিবিরে যেতেন না। যেমন কোনদিন যাননি জিয়া বা খালেদা জিয়া। বরং পাছে কোন দেশ কিছু মনে করে সেই ভয়ে চুপ করে থাকতেন। ওই গঙ্গার পানির মতো তিনিও রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে যেতেন। তবে তিনি ঠিকই পাকিস্তানীদের কথামতো রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর গোপনে সুযোগ দিতেন। অন্যদিকে খালেদার মতো নিজ দেশের অন্যতম একটি সমস্যা ভুলে আছেন সুচি। সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী সুচির হাতে নয় ঠিকই। তবে সুচির হাতে তো জনগণ আছে। জনগণের শক্তি সব থেকে বড়। শেখ হাসিনাকে এ মুহূর্তে বিচার বিভাগের এক ব্যক্তির ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখতে হচ্ছে। কারণ, তার মূল শক্তি জনগণ। তিনি যখনই দেখেছেন তার বিরুদ্ধে আইনের মারপ্যাঁচে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তিনি সঙ্গে সঙ্গে জনগণের কাছে চলে গেছেন। সুচিও জনগণের কাছে যেতে পারতেন। তিনি অন্তত তার দেশের মানুষকে বলতে পারতেন, তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াক তবে কোন এথনিক ক্লিনজিং নন। যে কোন ধরনের এথনিক ক্লিনজিং রুখতে হবে। সুচি এ কথা বললে অবস্থার পরিবর্তন ঘটত। তবে সুচি যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন সে কাজটি বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষদের অর্থাৎ ডেসমন্ড টুটু, দালাইলামা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সকল শান্তিকামী নেতাকে এখন শেখ হাসিনাকে ঘিরে করতে হবে। তাদের এখন শেখ হাসিনার পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনা নিজ হাতে যে শান্তির পতাকা ধরেছেন ওই হাতের সঙ্গে এখন সকলকে হাত মেলাতে হবে। রোহিঙ্গা এথনিক ক্লিনজিং একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জেনোসাইড। প্রথমটি ঘটেছিল শ্রীলঙ্কায় দ্বিতীয়টি ঘটল মিয়ানমারে। শ্রীলঙ্কার তামিলদের বাঁচাতে ওই অর্থে কেউ দাঁড়ায়নি সেদিন। তবে রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে শেখ হাসিনা দাঁড়িয়েছেন। বিশ্ব বিবেককে এখন শেখ হাসিনার পাশে আসতে হবে। একটি গণহত্যা কবলিত মানুষকে বাঁচিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাই এ মুহূর্তে তিনিই বিশ্বের প্রকৃত শান্তির দূত। [email protected]
×