ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ আজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৪ আগস্ট ২০১৭

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ আজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ শুরু হচ্ছে চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল সংলাপে অংশ নিতে পারবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন অনুযায়ী নিম্নক্রম থেকে সংলাপ শুরু করছে তারা। সে অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার সংলাপের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট( বিএনএফ) এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটকে সংলাপে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে জানা গেছে, সকাল এগারোটায় বিএনএফের সঙ্গে ইসির সংলাপ সময় নির্ধারিত থাকলেও হঠাৎই দলটির পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার সংলাপে উপস্থিত থাকতে অপারগতা প্রকাশ করে ইসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ফলে আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সঙ্গে প্রথম সংলাপে বসতে যাচ্ছে তারা। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের ষষ্ঠ তলায় নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেয়ার কথা বলে বৃহস্পতিবার সংলাপে আসতে পারবে না বলে বিএনএফ ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। চিঠিতে ২৪ আগস্ট নির্ধারিত তারিখের ১ মাস পর কমিশনের সুবিধাজনক নতুন সময়সূচী পুনঃনির্ধারণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, দলীয় কর্মসূচী থাকায় ২৪ আগস্ট কমিশনের সংলাপে থাকতে পারবে না বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তারা সংলাপের জন্য পরবর্তীতে সময় চাইবে বলে জানিয়েছে। পরবর্তীতে সময়ের জন্য আবেদন করলে কমিশন সেটি বিবেচনা করবে। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, ঈদের আগে আজ ২৪ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে সংলাপে উপস্থিত থাকার জন্য ছয়টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ঈদের পরে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও এই মতবিনিময় শুরু হবে। ঈদের পরে ছয়টি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে। সংলাপে বসার জন্য প্রত্যেকদিন দুই দফায় সকাল এবং বিকেলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের আগে যে ছয়টি দলকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে আজ বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)। যদিও দলটির পক্ষ থেকে আজকের সংলাপে উপস্থিত থাকতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে। ইসিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের তালিকায় সর্বশেষ রাজনৈতিক দল বিএনএফ। তাদের নিবন্ধন নম্বর ৪২। বিকেল তিনটা বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট)। দলটির নিবন্ধন নম্বর ৪১। আগামী ২৮ আগস্ট সোমবার সকাল এগারোটায় সংলাপে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল। বিকেল তিনটায় খেলাফত মজলিস। আগামী ৩০ আগস্ট বুধবার সকাল এগারোটায় সংলাপে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিকে। বিকেল তিনটায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপাকে। ঈদের পর ১০ সেপ্টম্বর থেকে পুনরায় সংলাপ শুরু হবে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর রবিবার সকাল এগারোটার সংলাপে উপস্থিত থাকার জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টকে এবং বিকেল তিনটার সংলাপে উপস্থিত থাকার জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেলা এগারোটায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বিকেল তিনটা ইসলামী ঐক্যজোটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বিকেল তিনটায় ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশকে ইসির সংলাপে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ইসি সূত্রে জানা গেছে, ক্রমঅনুযায়ী বিএনপির সঙ্গে আগে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। ইসিতে বিএনপির নিবন্ধন ক্রম রয়েছে ০০৭। অপরদিকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনক্রম রয়েছে ০০৬। ইসি সূত্রে জানা গেছে, দুটি দলের সংলাপ একদিনে হলে নিবন্ধন ক্রম অনুযায়ী সকালে বিএনপির সঙ্গে এবং বিকেলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ হবে। আর যদি আলাদা দিনে হয় তবে আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে। তারপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ হবে। তবে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ পাশাপাশি সময়ে হবে বলে জানা গেছে। নিবন্ধন ক্রম অনুযায়ী ইসিতে সবার আগে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)। তাদের নিবন্ধন ক্রম ০০১। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) নিবন্ধন রয়েছে ০০২ নম্বরে। এছাড়া সংসদের বিরোধী দল এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নিবন্ধন রয়েছে ১২ নম্বরে। ফলে দলটি বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের আগেই সংলাপে বসছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নিবন্ধন রয়েছে ০০৪ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির নিবন্ধন রয়েছে ০০৫ নম্বরের। এ দুটি দল আওয়ামী লীগের সংলাপের পরেই ইসির সঙ্গে সংলাপে বসছে। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নিবন্ধন রয়েছে ১০ নম্বরে। সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশের নিবন্ধন রয়েছে ১১ নম্বরে। হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের নিবন্ধন ১৩ নম্বরে এবং আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএডির নিবন্ধন রয়েছে ১৫ নম্বরে। জানা গেছে নিবন্ধনক্রম অনুযায়ী রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে বিএনপি এবং ্আওয়ামী লীগের আগেই সংলাপে বসছে ইসি। তবে আদালতের আদেশে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা হওয়ায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে ইসির পক্ষ থেকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। আদালতের আদেশে দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হলেও ইসির নিবন্ধনের তালিকা থেকে দলটির নাম বাদ দেয়া হয়নি। তবে নিবন্ধন তালিকার পাশে উল্লেখ করা হয়েছেÑমাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নম্বর ৬৩০/২০০৯ এর উপর আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জমায়াত ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। নিবন্ধনের তালিকায় দলটির ক্রম রয়েছে ১৪ নম্বরে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথম সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন। এরপর গত ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন করেছে ইসি। নির্বাচন আয়োজনকারী এই সংস্থা আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৪০ নিবন্ধিত দলের সঙ্গে বসবে। এছাড়াও আগামী অক্টোবরে পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং নারী নেতৃবৃন্দ এবং নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। এসব সংলাপের ওপর ভিত্তি করে নবেম্বরে সুপারিশমালার প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করা হবে। ডিসেম্বরে সুপারিশমালা চূড়ান্ত আকারে প্রকাশ করা হবে। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে গত ১৬ জুলাই দেড় বছরের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক ও নারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইসির এই মতবিনিময় শুরু হয়েছে।
×