ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতু

মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সেতুর কাজ অবশেষে শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১৯ আগস্ট ২০১৭

মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সেতুর কাজ অবশেষে শুরু

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল ॥ মাওয়া প্রান্তে সেতুর সংযোগ কাজ শুক্রবার অবশেষে শুরু হয়েছে। এই প্রান্তে ১৭২টি পাইল বসবে। অপর প্রান্ত জাজিরায় এই সংযোগ সেতুর ১৯৩টি পাইলের মধ্যে ১৫৫টি পাইল বসে গেছে। মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর কাজ পয়লা আগস্ট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মংলা পোর্ট থেকে যন্ত্রপাতি খালাসে সময় লাগায় ১৭ দিন বিলম্বে কাজ শুরু হয়। দু’তীরের সংযোগ সেতুর মোট পাইল ৩৬৫টি। এই পাইল বসানোর কর্মকা-ের পাশাপাশি মূল সেতুর অন্যান্য কাজেও অগ্রগতি রয়েছে। সেতুর এখন মূল দেখার বিষয় ৩৭ ও ৩৮ এবং ৩৯ নম্বর পিলার। এই ৩টি পিলারের খুঁটি উপরে উঠতে শুরু করেছে। রড বাঁধাইয়ের পর এখন একের পর এক খুঁটি ঢালাই হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই তিন পিলারের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। প্রথমে ৩৭ ও ৩৮ শেষ হবে। এই দু’পিলারের ওপর প্রথম সুপারস্ট্রাকচার (স্প্যান) বসবে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে স্প্যান বসানো হবে। এই সুপারস্ট্রাকচার বসানোর চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে এখন। এছাড়া জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিলারে ১৬টি পাইলের কংক্রিটিংও শুরু হয়ে গেছে। তীরের এই পিলারটির খুঁটিও উপরে উঠতে শুরু করেছে। এদিকে ১৯ কিলোজুল ক্ষমতার হাইড্রোলিক হ্যামারটি ১৩ আগস্ট মাওয়ায় পৌঁছেছে। হ্যামারটি ব্যবহার উপযোগী করার কাজ চলছে এখন। এই কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী কাল রবিবার ১৪ নম্বর পিলারে পাইলিং ড্রাইভ শুরু করার কথা রয়েছে। ১৯শ’ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন জার্মানির এই হ্যামার ২২ জুলাই সিঙ্গাপুর থেকে রওনা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের উদ্দেশে। ৩০ জুলাই মংলাবন্দরে পৌঁছার কথা থাকলেও এ হ্যামারটি ৭ আগস্ট মংলাবন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে রওনা হয়ে রবিবার মাওয়ায় প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলী জানিয়েছে, বর্তমানে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বড় হ্যামারটির টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় তার সংস্কারমূলক কাজ করা হচ্ছে। তাই ২৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামারটি দিয়েই এখন পাইলিং চলছিল। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পাইলিং কাজের জন্য প্রথম আনা ২৪০ টন শক্তি সম্পন্ন ২৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতার হাইড্রোলিক হ্যামারটির মবিল পরিবর্তমনসহ নিয়মিত সংস্কার কাজ চলছে গত ২ দিন ধরে। আরও সপ্তাহ খানেক এটির এই সংস্কারে সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। তাই গত ২ দিন ধরে পাইল ড্রাইভ হচ্ছে না। প্রকৌশলীরা জানান, প্রতিটি পিলারের জন্য পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে আড়াআড়িভাবে ১০৩ মিটার থেকে ১১৭ মিটার পর্যন্ত স্থানভেদে ৬টি করে পাইল বসানো হচ্ছে। প্রথমে ৬টি কেসিন নিয়ে একটি ব্যাজের ওপর জোগান গেড়ে প্লাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। ১০ ফুট ব্যাসের পাইপগুলো রড, সিমেন্ট ও পাথরের ঢালাই পূর্ণ করেই পাইলিং করা হচ্ছে। এগুলোই হবে সেতুর পিলারের ভিত্তি। এভাবেই সেতুর পিলার পয়েন্টে একের পর এক পাইলগুলো বসানো হচ্ছে। ফলে নদীর বুক চিড়ে জেগে উঠছে একের পর এক পাইলের প্ল্যাটফম। এ পাইলিং কাজ চলছিল ২৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতার এস মডেলের মেনক হাইড্রলিক হ্যামার দিয়ে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির জার্মানির হ্যামার বিশেষজ্ঞের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, শক্তিশালী হ্যামার দিয়ে প্রতিটি পিলারের জন্য ১০৩ মিটার গভীরতার লক্ষ্য নিয়ে মিনিটে ৩৭ বার করে মোট ২৭০ বার চাপ দিয়ে এক নাগারে হ্যামারিং করা হচ্ছে। এ কাজগুলো সম্পূর্ণ মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে কম্পিউটার মনিটরে হ্যামরিংয়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হচ্ছে। এখনও হ্যামার সঙ্কটেই পাইল স্থাপনে বিলম্বের কথা সংশ্লিষ্টরা জানিয়ে বলেন, যেহেতু নতুন একটি হ্যামার এসছে এবং উচ্চ ক্ষমতার (সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল) আরও একটি হ্যামার আনার কাজ চলছে, তাই এই সঙ্কট থাকছে না। পদ্মা এখন বেশ উত্তাল। পানি বেড়েছে স্রোতের তীব্রতাও ভয়ঙ্কর। এরই মধ্যে সেতুর কাজ চলছে। শুক্রবার বিকেলে উত্তাল পদ্মায় কাজ চলাকালে সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেন, পদ্মার মতো অস্থির নদীতে সেতু নির্মাণ চ্যালেঞ্জ সফলতা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি অর্জন। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের অনেক নতুন নতুন ধারণা এখানে প্রয়োগ করা হয়েছে। যার ফলে দ্রুত সেতুটির বাস্তবায়ন হচ্ছে। যাতে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য বদলে দিবে।
×