ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অঙ্গীকারাবদ্ধ, কারও প্রতি দুর্বলতা নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ আগস্ট ২০১৭

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অঙ্গীকারাবদ্ধ, কারও প্রতি দুর্বলতা নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনে আনতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার কোন উদ্যোগ নির্বাচন কমিশন নেবে না। মধ্যস্থতা করা নির্বাচন কমিশনের কাজও নয় বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি কেএম নুরুল হুদা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন কোন দলের চাওয়া বা না চাওয়ার উপর নির্ভর করবে না। সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। পরিবেশ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন মনে করলে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। প্রয়োজন না হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে না বলে উল্লেখ করেন সিইসি। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নুরুল হুদা। তিনি বলেন নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সত্তা। আমরা শপথ নিয়েছি দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালনের। যত চাপ আসুক, নতি স্বীকার করব না। কারও কাছে আমাদের যাওয়ার দরকার নেই। কারও কাছে যাবও না। এটাই যথেষ্ট। বিগত নির্বাচনে বিদেশীদের মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংলাপের প্রসঙ্গে টেনে বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক মেডিয়েটর এসে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে সমঝোতায় আনতে পারেননি। সেখানে কমিশন কেন রিস্ক নিতে যাবে। তিনি বলেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছি এটা শুধু সংলাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। নির্বাচন নিয়ে কমিশন তাদের কথা শুনবে। আমাদের কথাও তারা শুনবে। এ নিয়ে কে আসবে না আসবে তা নিয়ে কমিশনের কোন ইস্যু থাকবে না। নির্বাচন নিয়ে কমিশন কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে না। এর সুযোগ নেই। কারও কাছে যদি আত্মসমর্পণ করি, তাহলে এটা কমিশনের দুর্বলতা। এটা আমরা করব না। ইসি সম্পূর্ণ স্বাধীনসত্তা। চাপের মুখেও ‘কম্প্রোমাইজ’ না করার অঙ্গীকার যদি থাকে, তাতেই কাজ হবে বলে উল্লেখ করেন। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না তা কোন দলের চাওয়া বা না চাওয়ার ওপর তা নির্ভর করবে না। ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। বর্তমান পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূল রয়েছে দাবি করে কেএম নুরুল হুদা বলেন, ‘বর্তমানে আমরা অনুকূল ও আস্থাশীল অবস্থানে আছি। কেউ আমাদের বিরক্ত করেননি। কমিশনে কেউ তার দাবি-দাওয়া নিয়ে আসেননি। আমরা এখনও পর্যন্ত আস্থাশীল আছি এবং থাকব। নির্বাচনের সময় কী ধরনের সরকার থাকবে সে বিষয়ে কমিশনের কোন ভূমিকা নেই। ইসি একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান। সরকার যে নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করে দেয় সেভাবেই আমাদের ভোট কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। নির্বাচনের সময় কোন ধরনের সরকার থাকবে সে বিষয়ে ইসির কোন ভূমিকা থাকার কথা নয়। আমরা তা নির্ধারণ করতে পারিও না। সিইসি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। কারও প্রতি আমাদের দুর্বলতা নেই। নেই কোন শত্রুতাও। কারও প্রতি কোন আর্কষণ নেই, কারও প্রতি বিকর্ষণও নেই। যেটা রয়েছে তা হলো নির্বাচনী আইনের প্রতি। নির্বাচনের মাঠের সমস্যা ও জটিলতা রয়েছে স্বীকার করে বলেন, অন্য দেশের তুলনায় এই সমস্যা আমাদের বশি। কারণ গণতান্ত্রিক আয়ুষ্কাল এখানে কম। কখনও হ্যাঁ-না ভোট, কখনও নির্বাচনী সরকারের অধীনে নির্বাচন, একব্যক্তির অধীনে নির্বাচন; এই অবস্থায় চলেছি। টানা তিনটি নির্বাচন একই নিয়মে করতে পারিনি আমরা। কাজেই সমস্যা তো রয়েছেই। বৃহস্পতিবার ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের সম্মেলন কক্ষে সকাল ১০টায় শুরু হয় এ সংলাপ। দ্বিতীয় দিনে সংলাপে অংশ নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা আগামী নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন। তারা বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও নির্বাচনে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তারা। সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচনের এখনও দেড় বছর বাকি। নির্বাচনে সেনাবাহিনী লাগবে নাকি আনসার বাহিনী দিয়েই হবে, তা আমরা এখনও জানি না। কিন্তু এত আগে সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ তুলে ধরার মধ্যে কোন মতলব আছে কিনা ভাবতে হবে। এটি সেনাবাহিনীর গৌরবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা কিনা চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান, আইন-বিধি বিধান অনুযায়ী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইন প্রয়োগ ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখলে সবার প্রশংসা পাবে কমিশন। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ফলাফল প্রকাশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষণার আগে যেন কেউ প্রকাশ না করে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারাও যেন দ্রুত ফল জানিয়ে দেন তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের সময় মাঠপর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের নিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু জানান, ভোটে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনীর ব্যবহার রাজনৈতিক কারণে হলে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। ইসিকে নিরপেক্ষভাবে আইন-সংবিধানের ভেতরে থেকে কাজ করতে হবে। সব দলকে আলোচনা, ঐকমত্য, সংলাপের জন্য দরকার নেই। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। নির্বাচনে কে এল না এল তা দেখার বিষয় নয় ইসির। ভোটের দিন ইসির নিজস্ব ওয়েবে দ্রুত এবং সঠিক ফলাফল প্রচার, দেশের ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজাও, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ইসির কাজ নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তাদের দায়িত্ব হলো নির্বাচনে যারা আসবে তাদের সমান সুযোগ দেয়া। ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের হাতে থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় না জড়িয়ে আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করেন তিনি। ভয়েস অব আমেরিকার আমির খসরু বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী ভূমিকা পালন করে সেই অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এজন্য জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন জরুরী। কেবল আইন করলেই হবে না। তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা কমিশনের আছে কিনা তাও ভাবতে হবে। কেবল নিরপেক্ষতার কথা বললেই হবে না। ইসিকে তার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষতার প্রমাণ আগেই দেখাতে হবে। তাদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে হবে। বর্তমানে মাঠে যারা আছে তারা সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার ২৬ প্রতিনিধি অংশ নেন। সংলাপ শেষে সিইসি বলেন, আগামী ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে। সংলাপে কারও ভোটে আসার না আসার বিষয়ে আলোচনা হবে না। দ্বিতীয় দিনের ইসির সংলাপে যেসব সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসির তালিকার ক্রমানুসারে বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, এনটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক খায়রুল আনোয়ার, এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, বাংলা ভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ, সময় টিভির বার্তা প্রধান তুষার আবদুল্লাহ, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন, মাছরাঙা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, চ্যানেল ২৪ এর এডিটর ইনপুট তালাত মামুন, দেশ টিভির হেড অব নিউজ সুকান্ত গুপ্ত অলোক, যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ফাহিম আহমেদ, নিউজ টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হাসনাইন খুরশিদ, ডিবিসি নিউজের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, মোহনা টিভির বার্তা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান, মাই টিভির বার্তা সম্পাদক খান মোহাম্মদ সাদেক, এসএ টিভির বার্তা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, দীপ্ত টিভির বার্তা সম্পাদক মাহমুদুল করিম চঞ্চল, এশিয়ান টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক বিল্লাল হোসাইন বেলাল, রেডিও টুডে’র বার্তা প্রধান সেলিম বাশার, ভয়েস অব আমেরিকা বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমির খসরু, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালীন নোমানী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এসএম হারুন-উর-রশীদ।
×