ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান, আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ হজ সম্পৃক্ত স্থানসমূহ মক্কা-মিনা মুয্দালিফা-আরাফাত

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১১ আগস্ট ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ হজ সম্পৃক্ত স্থানসমূহ মক্কা-মিনা মুয্দালিফা-আরাফাত

হজের সঙ্গে যেসব স্থানের সম্পর্ক সুনিবিড় তা হচ্ছে মক্কা মুর্ক্রামা, মিনা বা মুনা, মুয্দালিফা, আরাফাত। মক্কা মুর্ক্রামায় উপস্থিত হয়ে কা’বা শরীফ সাতবার তওয়াফ করার পর মাকামে ইব্রাহিমে দু’রাকায়াত সালাত আদায় করে যমযম্ কূপের পানি পান করে সাফা-মারওয়া সায়ী করে মাথার চুল কেটে ইহ্্রাম থেকে মুক্ত হন তামাত্তু হজের নিয়মে যাঁরা হজ করেন তাঁরা, আর যাঁরা হজে কিরানের নিয়ত করেন তাঁরা চুল না কেটে ইহ্রাম অবস্থায় থাকেন, ইফ্্রাদের নিয়তকারীরাও ইহ্্রাম অবস্থায় থাকেন। তামাত্তু ওয়ালাগণ ৮ জিলহজ রাতেই ইহ্্রাম বেঁধে আর কিরান ওয়ালাগণ ও ইফ্রাাদ ওয়ালাগণ পূর্বের ইহ্্রাম বাঁধা অবস্থাতেই রওনা হন মক্কা মুর্ক্রামা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিনা বা মুনার দিকে। সেখানে পৌঁছে জোহরের ওয়াক্তে জোহরের সালাত, আছরের ওয়াক্তে আছরের সালাত, মাগরিবের ওয়াক্তে মাগরিবের সালাত, ইশার ওয়াক্তে ইশারের সালাত ও ফজরের ওয়াক্তে ফজরের সালাত আদায় করে ৯ জিলহজ মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরাফাত ময়দানের দিকে রওনা হন। আরাফাত ময়দানে পৌঁছে জোহরের ওয়াক্তে মসজিদে নামিরা থেকে খতিব সাহেব যে খুতবা দেন তা শুনে ওই খতিব অর্থাৎ ইমাম সাহেবের ইমামতিতে জোহরের সালাত, তার পর পরই আছরের সালাত আদায় করেন। এই দুই ওয়াক্তের সালাতই জোহরের ওয়াক্তে আদায় করা হয় কসরের নিয়তে অর্থাৎ চার চার রাকায়াতের স্থলে দুই দুই রাকায়াত করে। তারপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে অবস্থান করতে হয়। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রওনা হতে হয় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত মুয্দালিফার দিকে এবং মুয্দালিফা পৌঁছে মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করতে হয় এবং খোলা আকাশের নিচে মুয্দালিফায় অবস্থানকালে এখান থেকে পশ্চিম দিকে আবার মিনায় গিয়ে শয়তানকে কঙ্কর মারার জন্য কঙ্কর সংগ্রহ করতে হয় অন্তত পক্ষে ৭০টি, ফজরের ওয়াক্তে ফজরের সালাত আদায় করার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পশ্চিমে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিনার উদ্দেশে রওনা হতে হয়, পথিমধ্যে আব্রাহার হস্তিবাহিনীকে আবাবিল পাখি কঙ্কর মেরে যেখানটিতে ধ্বংস করেছিল সেই ওয়াদিউন্নার বা ওয়াদিয়ে মুহাস্সার দ্রুত অতিক্রম করে মিনায় পেঁৗঁছে প্রথমে মক্কা ও মিনার সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত জামরায়ে আকাবায় বা বড় শয়তানকে একটি একটি করে সাতটি কঙ্কর মারতে হয়, তারপর যাঁরা হজে কিরান ও হজে তামাত্তুর নিয়ত করেছিলেন তাদের পশু কোরবানি দিয়ে এবং তারপর মাথার চুল কেটে কিংবা মু-ন করে ইহ্রাম মুক্ত হয়ে ভালভাবে গোসল করে সাধারণ পোশাক পরিধান করতে হয়। হজে ইফ্রাদের নিয়ত যাঁরা করেছিলেন তাঁরা কোরবানি দেয়া ছাড়া অন্যগুলো পালন করেন। তার পর ওই দিন কিংবা পরের দিন মক্কা মুকাররমায় এসে কা’বা শরীফ সাতবার তওয়াফ করে সাফা-মারওয়া সায়ী করে আবার সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনায় ফিরতে হয়। এই তওয়াফকে তওয়াফে ইফাজা বা তওয়াফে জিয়ারত বলা হয়। উল্লেখ্য, হজের ফরজ হচ্ছে তিনটি- ১. ইহ্রাম বাঁধা, ২. ওকুফে আরাফা বা ৯ জিলহজ আরাফাত ময়দানে অবস্থান আর ৩. তওয়াফে জিয়ারত। ১১ জিলহজ মিনায় দুপুরের পরে প্রথমে জামরায়ে সুগরা বা ছোট শয়তানকে একটি একটি করে ৭টি, তারপর জামরায়ে উসতা বা মেঝো শয়তানকে এভাবে ৭টি, তারপর জামরায়ে আকাবা বা বড় শয়তানকে ঐভাবে ৭টি কঙ্কর মারতে হয়। ১২ জিলহজ সূর্য পশ্চিমাংশে ঢলে পড়লে ওই একইভাবে তিনটি শয়তানকে কঙ্কর মেরে মক্কা মুকাররমা ফিরে আসতে হয় আর এরই মধ্য দিয়ে হজ পালিত হয়ে যায়। হজের প্রধান প্রধান হুকুম-আহ্কামের অধিকংশই মিনায়, মুয্দালিফায়, আরাফাতে পালিত হয় নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে। এই তিনটি স্থানের এক ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। আমরা জানি, আল্লাহ্ হযরত আদম আলায়হিস্ সালামকে জান্নাতে সৃষ্টি করেন মাটি, পানি, আগুন, বাতাসের সংমিশ্রণে। আদমের একাকিত্ব দূরীভূত করার জন্য আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ঘুমিয়ে থাকা হযরত আদম (আ)-এর বাঁ পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেন হাওয়া আলায়হাস্ সালামকে। জান্নাতেই আদি মানব-মানবীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। আল্লাহ্ হযরত আদম আলায়হিস্ সালামকে সর্ববিষয়ে জ্ঞান দান করেন এবং ফেরেশ্তাদের চেয়েও অধিক মর্যাদা দান করেন। আদমকে এই মর্যাদা দিয়ে তিনি ফেরেশ্তাদের নির্দেশ দেন আদমকে সম্মান জানাতে সিজ্দা করার মাধ্যমে। সব ফেরেশ্তা আদমকে সিজ্দা করেন, কিন্তু ইবলিস আল্লাহ এই হুকুম পালন করা থেকে বিরত থাকে এই বলে যে, আমি আগুনের সৃষ্টি, আমি কেন মাটির আদমকে সিজ্দা করব। ইবলিস আল্লাহর হুকুম অমান্য করল অহঙ্কারবশে, যে কারণে সে অভিশপ্ত ও বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হলো। [বাকী অংশ আগামী শুক্রবার প্রকাশ করা হবে] লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা)
×