ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওরাও বাঁচুক, পাখির পাহারায় গ্রামবাসী

প্রকাশিত: ০০:১৯, ৮ আগস্ট ২০১৭

ওরাও বাঁচুক, পাখির পাহারায় গ্রামবাসী

অনলাইন ডেস্ক ॥ গ্রামের মসজিদের এক দিকে বাঁশগাছ, অন্য দিকে তেঁতুল। গাছগুলোর উপরে কাঠকুটো দিয়ে তৈরি একের পর এক বাসা। সেখানেই সপরিবার বাস কাস্তেচরার। তাদের কলতানে মুখর এলাকা। বর্ষার সময় দুবরাজপুরের ফকিরবেড়া গ্রামে গেলে দেখা যাবে ফি বছর একই ছবি। প্রতিটি বাসায় মা কাস্তেচরার সঙ্গে দুই, তিনটি চারটি করে বাচ্চা। পুরুষ পাখিগুলো খাবার নিয়ে আসছে প্রতি মূহূর্তে। আর সপরিবার কাস্তেচরা পাখিগুলোর দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে গোটা গ্রাম। কারণ পাখিগুলোও যে গ্রামেরই সদস্য। গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, বহুকাল থেকে কাস্তচরার দল আশ্রয় নিয়েছে গ্রামটিতে। প্রথম দিকে এতটা নজর না দিলেও বছরের পর বছর পাখিগুলোর সঙ্গে থাকতে থাকতে কেমন যেন মায়া পড়ে গিয়েছে গ্রামবাসীর। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে তাদের দেখভাল। পালা করে পাহারা দেন গ্রামের ছেলে, বুড়ো, মহিলা সকলেই। পাখিদের কেউ অনিষ্ট করলে তাঁকে জরিমানা করেন গ্রামের মানুষ। গ্রামের যুবক শেখ মোজাম্মল হক, শেখ তফিউল বা বৃদ্ধ শেখ ইউসুফরা বলছেন, ‘‘পাখিগুলোর সঙ্গে কেমন আত্মীয়তা হয়ে গিয়েছে। বর্ষা কাস্তেচরার প্রজনন ঋতু। গাছের উপর থেকে বাচ্চা পড়ে গেলে সেগুলি ফের নির্দিষ্ট বাসায় তুলে দেওয়া হয়। বাইরের কেউ এসে পাখি শিকার যাতে না করতে পারে, বা বিরক্ত না করে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি থাকে সকলের।’’ পক্ষী বিশেষজ্ঞরা জানালেন, কাস্তের মতো বাঁকানো ঠোঁটের জন্যই নাম কাস্তেচরা। ঠোঁটই বিশেষত্ব। ইংরাজি নাম ‘হোয়াইট আইবিস’। সাদা, ধবধবে শরীর। মাথা ও গলায় লোম নেই। পায়ের রঙ কালো। জলা জায়গায়, ধান মাঠে এদের চড়তে দেখা যায়। সাপ, গিরগিটি, গুগলি, মাছ এদের খাদ্য। রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা এরা। সাধারণত লোকালয় এড়িয়ে চলে পাখগুলি। অথচ ফকিরবেড়া গ্রামে মানুষের গা ঘেঁষেই থাকে ওরা। বছরভর গ্রামের উঁচু তেঁতুল গাছে থাকলেও দিন ভর খাবার সংগ্রহেই ব্যস্ত থাকে। ফেরে সন্ধ্যায়। বর্ষাকাল এলেই শুরু হয় নতুন প্রজন্মকে স্বাগত জানানোর প্রক্রিয়া। তখনই সারা দিন বাসায় পাখিগুলোর উপস্থিতি। অনেকেই লক্ষ্য করেছেন কাস্তেচরার বাসা পরিবর্তনের কথা। বাশঝাঁড়, আবার কখনও তেঁতুলগাছ। গাছ বদলালেও গ্রাম থেকে কখনও চলে যায়নি ওরা। সেটা কি গ্রামের বাসিন্দাদের ভালবাসার জন্য? বধূ রসিদা বিবি, নিহারা বিবি, খালেদা বিবিরা বলছেন, ‘‘পাখিগুলো বাড়ির পাশে থাকলে সব সময় আঁশটে গন্ধ থাকে। গাছের নীচ নোংরা হয়। কিন্তু, কখনই মনে হয়নি পাখিগুলো এখান থেকে সরে যাক।’’ তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া শেখ মাহিন, চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া শেখ নুরসাদরা বলে, ‘‘বর্ষায় যখন ডিম ফুটে ছোট ছানাগুলো বের হয়, দেখতে বেশ লাগে। রোজ দেখি কত বড় হল ছানাগুলো।’’ পাখিদের সঙ্গে থাকাটা যেন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে ওঁদের। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×