ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫২ হাজার মে.টন আমদানি চাল আসছে শীঘ্রই ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ১৯ জুন ২০১৭

৫২ হাজার মে.টন আমদানি চাল আসছে শীঘ্রই ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চালের বাজারের ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ মোকাবেলায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ৫২ হাজার মেট্রিকটন আমদানি চাল বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, দেশে চালের মজুতে কোন সংকট নাই। হাওড়ের আগাম বন্যা, বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে চালের দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। সরকারীভাবে আরও চাল আমদানি করা হবে। পাশপাশি চাল আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক তুলে নেয়ার বিষয়টিও শীঘ্রই কার্যকর হবে। ফলে চালের দাম কমে যাবে। সোমবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বিষয়ক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মিট দ্য প্রেসে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব, সদস্যসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজেটের ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক নিয়ে জনমনে একটা আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। বাজেট নিয়ে জাতীয় সংসদে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে অবগত আছেন। আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নাই। দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন কোন পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী নেবেন না। মন্ত্রী বলেন, জনগণের টাকায় পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে। এই উন্নয়ন আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। তবে দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর চিন্তা সরকারের নেই। প্রস্তাবিত বিশাল আকারের বাজেট নিয়ে সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরের শুরুতেই হলি আর্টিজানে হামলা হয়। এর কারণে আমাদের একটি বছর নষ্ট হয়েছে। হামলার পর পদ্মাসেতুসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিদেশিরা চলে গিয়েছিল। বিদেশি অর্থছাড়ের পরিমাণ কমে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি এক্সপার্টরা ফিরে এসেছেন। তাই বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। বিদেশী ঋণ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে পড়বে এবং দেশ ঋণের ফাঁদে পড়ে যাবে এমন সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপির অনুপাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম। আমাদের জিডিপির আকার ২৪৯ বিলিয়ন ডলার, বিপরীতে ঋণের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন। এটা খুবই সহনশীল। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলছে দেশে কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ব্যাখা দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ বেশি বেশি হওয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ে, কিন্তু বড় প্রকল্পে কর্মসংস্থান কম হয়। ছোট ছোট প্রকল্পে কর্মসংস্থান বেশি হয়। বর্তমানে ১২ শ’ প্রকল্প চলমান আছে। তাই কর্মসংস্থান একেবারেই হচ্ছে না এটা ঠিক নয়। আবার পদ্মা সেতু হয়ে গেলে এর প্রভাবে কর্মসংস্থান বাড়বে। এটাই বড় প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সুবিধা। বর্তমানের ‘কর্মসংস্থানহীনতা’ তাই সাময়িক। মন্ত্রী বলেন, গত ৫ বছর প্রায় ১ কোটি কর্মসংস্থান হয়েছে। চলতি ৫ বছরে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদে আশা করছি ১ কোটি ২৯ লাখ কর্মসংস্থান হবে। কর্মসংস্থান কমেনি। বিনিয়োগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না এবং প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না। তবে বিনিয়োগ যে কমছে এটা ঠিক নয় বরং বিনিয়োগ বাড়ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে জিডিপির ২৮ দশমিক ৮৯ ভাগ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৯ দশমিক ৬৫ ভাগ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ২৭ ভাগ। আওয়ামীলীগ আমলে গত আট বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ ১ শতাংশও নি¤œমুখী হতে দেখিনি। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, বাজেটের আকার নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। বাজেটের আকার কোন সমস্যা নয়। মুল সমস্যা হচ্ছে, বাজেটে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো হবে কিনা, ব্যাংকে টাকা রাখলে শুল্ক দিতে হবে কিনা, চালের শুল্ক থাকবে কিনা এগুলো মূল সমস্যা। এখন এগুলোই আলোচনা হচ্ছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগে আমাদের অর্থসংস্থানের সমস্যা ছিল, এখন অর্থের সমস্যা নাই। কিন্তু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনো আমরা পিছিয়ে আছি। বাস্তবায়ন দক্ষতা বাড়াতে যা প্রয়োজন সবই করা হচ্ছে। এর সুফলও ভবিষ্যতে মিলবে। আগে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রতি মাসে দেয়া হত। এখন থেকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির তথ্য দেয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি পাবলিক ডকুমেন্ট। এটা আড়াল করার কিছু নাই। কারণ এর সাথে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়টি জড়িত। প্রতি মাসে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এটি করলে ভুল তথ্য এড়ানো যাবে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এডিপির বাস্তবায়ন প্রকৃতপক্ষে বাড়ছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পে বাস্তবায়ন হলেও কিছু বিল বাকি থাকায় বাস্তবায়ন হার কম মনে হতে পারে। কিন্তু বিল দিলেই এ হার বাড়বে। তিনি জানান, আগামীতে আমরা নতুন ভিত্তিবছর ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব করবো। এখন সেটি নিয়ে কাজ চলছে।
×