ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুল্ক প্রত্যাহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কমছে না চালের দাম

প্রকাশিত: ০৩:১০, ১৯ মে ২০১৭

শুল্ক প্রত্যাহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কমছে না চালের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কমছে না চালের দাম। উন্নতমানের সরু, মাঝারি মান এবং স্বল্প আয়ের মানুষের মোটা চালের দাম এখন উর্ধমুখী। মিনিকেট ও নাজিরশাইল জাতের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকায়। মাঝারি মানের পাইজাম, লতা, স্বর্ণা, গুটি, বিআর-২৮, বিআর-২৯, হাসকিজাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫২ টাকায় এবং ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মোটাজাতের চায়না ইরি। শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি বাজারে বোরোর নতুন ধানের চালও উঠতে শুরু করেছে। চাহিদার সঙ্গে সরবরবাহ বাড়লেও কমছে না দাম। চালের পাশাপাশি রোজায় বেশি ব্যবহার হয় এমন সব পণ্যও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। সারা মাসের বাজার একবারে না করে স্বাভাবিক নিয়মে কেনাকাটা করলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে ভোক্তাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, রোজা সামনে রেখে ভোক্তারা সারা মাসের বাজার একবারে করে থাকেন। এতে করে ভোগ্যপণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয় এবং বাড়ে জিনিসপত্রের দাম। অথচ চাহিদামতো স্বাভাবিক নিয়মে সপ্তাহে যা লাগবে তা কেনাকাটা করলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিতে পারবে না খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজায় জিনিসপত্রের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ে খুচরা পর্যায়ে। কারণ ভোক্তারা একসঙ্গে সারা মাসের বাজার বিশেষ করে ছোলা, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, খেজুর এবং পেঁয়াজ সংগ্রহ করে থাকেন। এতে করে পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি করে। এর সুযোগ নেয় খুচরা ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর বড় পাইকারি মার্কেট মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পদাক হাজী মোহাম্মদ আলী ভুট্রো জনকণ্ঠকে বলেন, রোজার বাজার একবারে না করে সপ্তায় সপ্তায় করলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে না খুচরা ব্যবসায়ীরা। রোজা আসলে প্রথম সপ্তায় সারা মাসের বাজার ও কেনাকাটা করেন ভোক্তারা। এতে করে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। ভোক্তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এ বছর সব ধরনের পণ্যের আমদানি বেশি এবং আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য কম। তাই কারসাজি না হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই। এদিকে, সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, প্রতিকেজি সরু চাল ৫০-৫৬, মাঝারি মানের চাল ৪৫-৫০ এবং মোটা চাল ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল খোলা ৮২-৮৪, সয়াবিন তেল পাঁচ লিটারের বোতল ৪৯০-৫২০, পামওয়েল ৭০-৭২ এবং পামওয়েল সুপার ৭৪-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিলিটার। মশুর ডাল জাত ও মানভেদে ৭৫-১৩৫, ছোলা ৮৫-৯০, পেঁয়াজ ২০-৩০, রসুন ১৩০-২৪০, চিনি ৬৭-৭০, খেজুর ১২০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি গরু ৪৯০-৫০০, খাসী ৬৫০-৭৫০, মুরগি ব্রয়লার ১৫০-১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়তির দিকে রয়েছে মাছের দাম। এছাড়া শাক-সবজি আগের মতো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, গত বছর আগস্ট মাস থেকে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছিল, কিন্তু এবার তা এখনই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জানুয়ারিতে আমন ধানের চাল বাজারে উঠলেও বাজারের অস্থিরতা কমাতে পারেনি। এখন বোরোর চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। তারপরও চালের দাম কমছে না। দিনাজপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলেও চালের দাম বাড়তি। এখন দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে পুরোদমে বোরো ওঠা শুরু হয়েছে। কিন্তু ঐসব অঞ্চলেও চালের দাম চড়া। গত বছর এই সময়ে ঐসব অঞ্চলে নতুন বোরো ধানের মণ ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, যা এবার ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় উঠেছে। এদিকে অকাল বন্যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের সবকটি হাওর তলিয়ে সেখানকার অর্ধেকের বেশি বোরো বিনষ্ট হয়ে গেছে। তাই হাওরাঞ্চল থেকে বোরো সরবরাহ নেই। ইতোমদ্যে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির জন্য চালের দাম বেড়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। কোনো সংকট হতে দেয়া হবে না। এছাড়া আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, রজমজান শুরু হলে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে থাকে। এদের ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করাসহ যারা কারসাজির সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে এখন জিনিসপত্রের দাম নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। এই বাস্তবতায় দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়া ভাল লক্ষণ নয়। এছাড়া চালের দাম বাড়ার পিছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন চালকল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর এ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। ইতোপূর্বে খাদ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে তারা জানান, অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে চালের দাম বাড়াতে পারে। কাপ্তান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর নতুন বোরো ধানের চাল বাজারে উঠলে দাম কমে যায়। কিন্তু এবার তা হয়নি। উল্টো সবধরনের চালের দাম বেড়েছে। এদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা পণ্যের বাজারে প্রতিকেজি টমেটো কেজি ৫০-৬০ টাকা, সাদা বেগুন ৫০-৬০ টাকা, কালো বেগুন ৬০ টাকা, শশা ৪৫-৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, আলু ১৮-২০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা এবং লেবু হালি প্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক আঁটি প্রতি ১৫ টাকা, লালশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা এবং লাউশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোজা সামনে রেখে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে প্রতিকেজি রুই মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আকার ভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ টাকা, প্রতিটি ইলিশ ১৫০০-২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
×