ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

নিত্যপণ্যে নিত্য ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১৮ মে ২০১৭

নিত্যপণ্যে নিত্য ভোগান্তি

চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন এমন সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলছে, কিন্তু আয় তো হুট করে বাড়ে না। পণ্যের দাম একবার যদি বাড়ে তা আর সহজে কমে না। কিন্তু শুনতে হয় গতানুগতিক সব অজুহাত। বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে গেছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। এমন কিছু গদবাধা বুলি। এসব কথায় বিশ্বাস রাখা মুশকিল। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। রান্নায় ভোজ্যতেল অপরিহার্য, তেল ছাড়া রান্না হয়ই না। গত চার মাস ধরে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমছে। অথচ বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি বরং বেড়েছে। সব খরচ ধরেই যদি হিসাব করা হয়। এক কেজি সয়াবিনের মূল্য পড়ে ৫৯ টাকা ৩৮ পয়সা। বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেল ১০৫ থেকে ১০৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিনের লিটার ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। প্রায় দিগুণ লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা। কোন কোন কোম্পানির বোতলে এক লিটারের কম থাকে। অথচ এক লিটার বলে বিক্রি করা হয়। দাম নেয়া হয় এক লিটারের। ক্রেতাদের সঙ্গে এ প্রতারণার মানে কি? বলা হলো, পুরাতন স্টক, বেশি দামে কেনা। তাই দাম কমানো যাচ্ছে না। যদি মেনেই নেই এটা সত্যি কথা। তাহলে ক’মাসের স্টক আছে। চার মাসের তেলের স্টক ছিল কি? স্টক শেষ হলে মূল্য কমবে কি? কখনও কমেছে কি? খরচের দিগুণ লাভ করার দরকার কি। এ তো শুধু ভোজ্যতেল। অন্যসব আমদানিনির্ভর পণ্যের বেলায়ও এমনটা ঘটে। কিছু দিনের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা। অথচ বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমেছে। আগে এক কেজি চিনির দাম ছিল ৪৫ সেন্ট। এখন কমে তা হয়েছে ৪০ সেন্ট। ব্যবসায়ীরা স্টকের যে দোহাই দেন, সেটা আদৌ সত্যি কিনা সেটা কি দেখা হয়? দেখার কেউ আছে কি? সরকার যখন একটু কঠোর হয় তখন নিত্যপণ্য উৎপাদনকারীরা সরবারহ কমিয়ে দেন। যার প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে। যে যেভাবে পারে বাড়তি মূল্য নিতে থাকেন। ৬৫ টাকার ছোলা এখন ৮০ টাকা। চালের দাম এক সপ্তাহে কেজিতে ৩-৬ টাকা বেড়েছে। প্রশ্ন হলো কেন? অসাধু ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ তারা কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না। মনে হয় সরকারও এদের কাছে অসহায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজানের অনেক আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এবারও তা শুরু হয়েছে। এক মাস আগেই অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে। অথচ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন- রমজানে পণ্য মূল্যবৃদ্বির কোন সম্ভাবনা নেই। চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য মজুদ আছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কারণ, এমন কোন রমজান আসেনি যে রমজানের পূর্বে নিত্যপণ্যের দাম বাড়েনি। অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত কতটা লম্বা জানি না। এরা সরকারের নির্দেশও মানে না। নিজেরা একত্রিত হয়ে দাম বাড়ায়। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে। কিন্তু এর কি কোন প্রতিকার নেই? জনস্বার্থে কি এভাবে উপিজীত হবে? বর্তমানে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমতির দিকে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবস্থান বেশ ভাল সেটা বেশ কিছুদিন ধরেই। অভিযোগ উঠেছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা ডলারের চেয়ে টাকার মান যেন ভাল না হয় সে জন্য নেপথ্যে তৎপরতা চালান। প্রশ্ন হলো, এই অবস্থা আর কতদিন? ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে কিন্তু জনগণের পকেট কেটে কেন? একটা পণ্যে দিগুণ লাভ করতে হবে কেন? নিত্যপণ্যের বেপরোয়া দামে জনগণ চরম অসন্তুষ্ট। ঢাকা থেকে
×