ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতার কাঁধে হিন্দুত্ববাদের নিঃশ্বাস পড়ছে

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২১ এপ্রিল ২০১৭

পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতার কাঁধে হিন্দুত্ববাদের নিঃশ্বাস পড়ছে

অনলাইন ডেস্ক ॥ দলীয় কাজে বৃহস্পতিবার ওড়িশা গিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গিয়েই তিন চলে যান পুরির জগন্নাথ মন্দিরে। পুজো দেওয়ার পর মমতা ব্যানার্জি বলেন - তিনিই প্রকৃত হিন্দু, আর বিজেপি হিন্দু ধর্মের জন্য 'লজ্জা-অভিশাপ' কারণ তারা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করছে। রাজনীতির জন্য মন্দির দর্শনের তেমন কোনো রেকর্ড নেই মিস ব্যানার্জির। কিন্তু এখন কেন জগন্নাথের মন্দিরে গিয়ে গলা উঁচিয়ে নিজের হিন্দু পরিচয় দিতে উদ্যোগী হলেন তিনি? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে জায়গা করে নিতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তর প্রদেশের মত রাজ্য, যেখানকার ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মুসলিম, সেখানে অভাবনীয় নির্বাচনী সাফল্যের পর পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারেও আরো আশাবাদী হয়েছে তার দল বিজেপি। কলকাতায় রাজনীতির শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিমল শঙ্কর নন্দ বিবিসিকে বলেন, "মমতা ব্যানার্জি এখনও বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয়...পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখনও হিন্দুত্ববাদের প্রভাব সামান্যই। তবে সন্দেহ নেই তার কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলার চেষ্টা করছে বিজেপি।" বিজেপির সেই প্রয়াস খুব অস্পষ্ট নয়। মমতা ব্যানার্জি গতকাল যখন জগন্নাথের মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন, ঠিক তখন তার শহর কলকাতায় বিজেপির শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এক সভায় মমতা ব্যানার্জিকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছিলেন। বিজেপি মন্ত্রী বলেন - 'তিন তালাক নিয়ে মমতা ব্যানার্জি চুপ কেন?' মমতা ব্যানার্জি মুসলিমদের তোষণ করেন- বিজেপি নেতারা বেশ কিছুদিন ধরেই ঠারেঠোরে তা বলার চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার কলকাতায় স্মৃতি ইরানি সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। আগামী সপ্তাহেই তিন দিনের জন্য কলকাতায় আসছেন বিজেপির প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ। এ ধরণের মন্তব্য তখন তার কণ্ঠেও যে শোনা যাবে সন্দেহ নেই। কিন্তু হিন্দুত্ববাদ রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে কতটা কাজ করবে? বিমল শঙ্কর নন্দ বলেন,"দেখুন কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, ভারতে হিন্দুত্ববাদের একটা পূনর্জাগরণ ঘটছে। উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। সেখানকার মুসলমানদের কাছে ভোট না চেয়েও বিজেপির বিপুল বিজয় হয়েছে।" তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রভাব এখনও তেমন নেই তবে পশ্চিমবঙ্গের ৭৫ শতাংশ হিন্দু সেই তত্ত্বে আজ না হলেও একসময় প্রভাবিত হতেই পারে। তার কিছু নমুনাও সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে দেখা গেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে লোকসভার একটি উপনির্বাচনে আশাতীত ফল করেছে বিজেপি। চারগুণ ভোট বাড়িয়ে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপির প্রার্থী। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হিন্দুত্ববাদি রাজনীতি প্রচারে বিজেপি হয়তো সামনের দিনগুলোতে মমতা ব্যানার্জিকে হিন্দু বিদ্বেষী এবং মুসলিম তোষক হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করতে পারে। সেই উদ্বেগ থেকেই কি তার পুরির জগন্নাথ মন্দিরে দর্শন এবং নিজেকে সাচ্চা হিন্দু তকমা দেওয়ার চেষ্টা? তাতে কি কাজ হবে? অধ্যাপক বিমল নন্দ বলেন - ভারতের হিন্দুরা বিজেপিকেই হিন্দুত্ববাদের প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে। সেই জায়গা নেওয়া অন্য কোনো দলের জন্য তেমন সুবিধা হবেনা। সূত্র- বিবিসি বাংলা
×