ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহযোগিতায় ঢাকা-থিম্পু

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২১ এপ্রিল ২০১৭

সহযোগিতায় ঢাকা-থিম্পু

বন্ধুপ্রতিম ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের আবহ অতি পুরনো। বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গেও ভুটান নামটি জড়িয়ে রয়েছে। কারণ একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ভুটানই সর্বপ্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। সঙ্গত কারণে ভুটানের প্রতি বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের কৃতজ্ঞতার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। বলা যায়, এক অকৃত্রিম বন্ধু দেশ ভুটান। যদিও সরাসরি সীমান্ত নেই, তথাপি ভুটানের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক খুবই গভীর। কিন্তু তারপরও ঢাকা-থিম্পু সম্পর্ক বহু বছর গতানুগতিকতার বাইরে যেতে পারেনি। দুই দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের মধ্যে সফর বিনিময়ের সংখ্যা কম নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ দফা সফরে এবার দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীরতর স্থানে নিয়ে গেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অর্থ হলো দেশগুলোর সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে নিজ দেশকে সমৃদ্ধ করার পথ সুগম করা। এই দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক ইতিবাচক উন্নয়নের পথকে এগিয়ে নেবার দিগন্ত খুলে দিয়েছে। দু’দেশের মধ্যে পাঁচ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এতে রয়েছে দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বাংলাদেশের নৌপথ ভুটানকে ব্যবহার করতে দেয়া, কৃষি, সংস্কৃতি ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ। এটা বাস্তব যে, ভুটানের প্রায় শত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েও দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বার্ষিক মোটে তিন কোটি মার্কিন ডলার পার করা যায়নি। বস্তুত ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর ও সম্প্রসারিত করার সুযোগও সামান্য। মূলত কাঁচামাল আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও বেসরকারী পর্যায়ে পর্যটনের ঘেরাটোপের তথা ফাইলবন্দী হয়ে রয়েছে। এবার সেই বন্দী ফাইল খুলেছে। উভয় দেশের মধ্যে নৌপরিবহনবিষয়ক চুক্তি একটি বিশাল সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত নৌপথে ভুটানের প্রবেশাধিকার পাবে। দক্ষিণ এশিয়ার স্থলভূমির দেশ ভুটান বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো ব্যবহার করতে পারবে। কুয়াকাটা ও কক্সবাজারের সঙ্গে ভুটানকে নিয়ে একটি পর্যটন করিডর কিভাবে করা যায় তা খুঁজে দেখতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। ভুটানের জলবিদ্যুত প্রকল্পগুলোতে বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের আলোচনা অনেকদিন ধরেই চলছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, হাইড্রো বিদ্যুতের যে সম্ভাবনা আছে, সেটা একটা গেম চেঞ্জার হতে পারে এই অঞ্চলে। ভুটানে তিন দেশের সহযোগিতায় বিদ্যুত উৎপাদন হবে এবং এটা আঞ্চলিক পর্যায়ে সরবরাহ করবে। ভারতের মধ্য দিয়ে ফাইবার অপটিকসের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটি বাংলাদেশ বিবেচনা করবে। এই অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনা উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে করার প্রস্তাবও রয়েছে। বাংলাদেশ সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাবও দিয়েছেন। বোঝাপড়া ও পারস্পরিক সহযোগিতার আন্তরিক মনোভাব সামগ্রিকভাবেই অত্যন্ত ফলদায়ী হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ানো জরুরী। ভারতের ভেতর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বলয় সক্রিয় করা জরুরী। ভৌগোলিক বাস্তবতাগুলোকে উভয় দেশ পারস্পরিক উপকারের লক্ষ্যে কাজে লাগাবে এমন প্রত্যাশা দু’দেশের জনগণেরই। ঢাকা-থিম্পু সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে এগিয়ে যাবেÑ সেটাই হবে বাস্তব।
×