ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে গেছেন এক লাখ ৭০ হাজার ৬৭২ জন

এ বছর ১০ লাখ কর্মী বিদেশ পাঠানোর টার্গেট সরকারের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ মার্চ ২০১৭

এ বছর ১০ লাখ কর্মী বিদেশ পাঠানোর টার্গেট সরকারের

ফিরোজ মান্না ॥ চলতি বছর জনশক্তি রফতানির হার বেড়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন এক লাখ ৭০ হাজার ৬৭২ জন কর্মী। গত বছরের এ সময়ে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে যান এক লাখ ২৬ হাজার কর্মী। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪৪ হাজারের বেশি কর্মী বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। বিএমইটি বলছে, সৌদি বাজারে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ হওয়ার ফলে এ পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। সৌদিতে বাংলাদেশী দালাল চক্রের উৎপাত বন্ধ হলে কর্মী নিয়োগের হার আরও বাড়বে। এ বছর ১০ লাখ কর্মীর বিদেশে চাকরির টার্গেট নিয়ে কাজ করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি পুরনো শ্রমবাজারে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। বিশেষ করে সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ফলে এ বছরের শুরুতেই জনশক্তি রফতানির পরিমাণ ভাল বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এক লাখ ৭০ হাজার কর্মী বিভিন্ন দেশে নিয়োগ পেয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি কর্মী নিয়োগ হয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। জনশক্তির রফতানির এ হার বজায় থাকলে চলতি বছর ১০ লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে যেতে পারবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর ১০ লাখ কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব হবে। আমরা এ টার্গেট নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করার জন্য কাজ চলছে। জাপান ৬শ’ ডাক্তারসহ পেশাজীবী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কাতারে আলোচনা হচ্ছে, বাজারটি অচিরেই খুলে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি বাজারে বেশি করে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সবকিছু মিলে এবার শ্রমবাজার অনেক ভাল যাবে। প্রথম দুই মাসে প্রায় পৌনে দুই লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। বাকি ১০ মাসে টার্গেটের চেয়ে বেশি কর্মী নিয়োগ হতে পারে। তবে সৌদিতে বাংলাদেশী দালালদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। তাদের কারণে অভিবাসন ব্যয় কমছে না। দালাল চক্র দেশটির বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ভিসা সংগ্রহ করে বাংলাদেশে জনশক্তি রফতানিকারকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। জনশক্তি রফতানিকারকরা ওই ভিসার বিপরীতে কর্মীদের কাছ থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী স্বীকার করে বলেন, ‘ভিসা ট্রেডিং’ বন্ধ করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানির পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও কর্মীদের কাছ থেকে বেশি টাকার বিষয়টি তারাও জানেন। মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি কর্মীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিচ্ছে কি-না বা এক চাকরির কথা বলে অন্য চাকরিতে দিচ্ছে কি-না এসব বিষয় ভালভাবে মনিটর করে যাচ্ছে। এর মধ্যেই কর্মীদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা বেশি টাকা নিচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগবিহীন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানই সৌদিতে কর্মী নিয়োগের সুযোগ পাবে। তারা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত খরচের বাইরে বেশি টাকা নিতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাতিল হবে জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স। সৌদি বাজার উন্মুক্ত হওয়ার সময় উভয় দেশ ভিসা কেনাবেচার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তখন সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে আশ্বস্ত করেছিল- যারা ভিসা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ১৫ বছরের কারাদ-ের বিধান রেখে আইন করবে। কিন্তু সে আইন না হওয়ায় ভিসা কেনাবেচা প্রকাশ্যেই হচ্ছে। এজন্য কর্মীদের সরকার নির্ধারিত খরচের বাইরে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সম্প্রতি বলেন, সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগে সরকার নির্ধারিত খরচের চেয়ে বেশি টাকা নিলে সে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। শুধু লাইসেন্স বাতিলই করা হবে না, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে। দীর্ঘ ছয় বছর পর সম্প্রতি সৌদি আরব সব খাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছে। কোন প্রকার অনিয়মের কারণে বাজার নষ্ট করতে দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। বাজারটি ছয় বছর বন্ধ রাখার পর ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সৌদি আরব। তবে গত দেড় বছর নারী গৃহকর্মীদের পাশাপাশি শুধু গৃহ খাতের কর্মী নিয়োগ করেছে দেশটি। গত বছরের ১১ আগস্ট সব ধরনের কর্মী নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এরপর সৌদি আরবে পুরুষ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রও আসতে শুরু করেছে। আগস্ট থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন দেশটিতে। চলতি বছরের দুই মাসে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দিয়েছে দেশটি।
×