ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চরম অর্থকষ্টে চিকিৎসা বন্ধ মুক্তিযোদ্ধা মান্নানের

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

 চরম অর্থকষ্টে চিকিৎসা বন্ধ মুক্তিযোদ্ধা মান্নানের

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ চিরুলিয়া-বিষ্ণুপুর রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান চৌধুরীর নাম মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই তালিকায় নেই। পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে একাধিক সম্মুুখযুদ্ধে বীরত্মের সঙ্গে অংশ নেয়া বাগেরহাটের পশ্চিম বাসাবাটী গ্রামের মৃত আব্দুল ওহিদ চৌধুরীর ছেলে মান্নান চৌধুরী এখন দরিদ্রতার কশাঘাতে জর্জরিত। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে তার। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় সম্প্রতি তার একটি পা ভেঙ্গে যাওয়ায় চলাচল করতে পারছেন না। অর্থাভাবে চিকিৎসাও বন্ধ। তবুও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইকালে বৃহস্পতিবার তিনি অন্যের সহযোগিতায় অতিকষ্টে সদর উপজেলা প্রাঙ্গণে হাজির হন। তবে পা ভাঙ্গা থাকায় সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে ভবনের দ্বিতীয়তলার নির্দিষ্ট কক্ষে হাজির হতে পারেননি। তখন মান্নান চৌধুরীর পক্ষে সেখানে উপস্থিত ’৭১ রণাঙ্গনের সহযাত্রী বন্ধু মুক্তিযোদ্ধারা আর্জি জানান। কিন্তু যাচাই-বাছাই তালিকায় তার নাম না থাকায় তিনি যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় পড়েননি। এ সময় তার বন্ধু মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা মান্নান চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। দাবির প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শরীফ নজরুল ইসলাম নিজেই উপজেলা পরিষদ ভবনের দ্বিতীয়তলা থেকে নেমে এসে মুক্তিযোদ্ধা মান্নান চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেখানে মান্নান চৌধুরীর সহযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ বেলায়েত হোসেন, লেখক সুশান্ত মজুমদার, খুলনা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডর সেলিম খান পুটু, এ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান নান্না, মানবাধিকার কর্মী তালুকদার আলী আহসান খসরুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা মান্নান চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, ২৩ বছর বয়সে ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই তিনি চিরুলিয়া-বিষ্ণুপুর রণাঙ্গনে রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে যোগ দেন। এখানে প্রশিক্ষণের পর অস্ত্র সংগ্রহের জন্য বাগেরহাট থানা আক্রমণ, কচুয়া থানা আক্রমণ, ডেমা পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ, বাঁশবাড়িয়া-সাড়ে-চারানি যুদ্ধ, বেশরগাতী যুদ্ধ, বিষ্ণুপুর রণক্ষেত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু যুদ্ধের পর জীবন-জীবিকা ও সংসারের ভিড়ে যান। কখনও সনদপত্রের জন্য কোন আবেদন করেননি। তবে দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে বন্ধুদের সহায়তায় তিনি একবার আবেদন করলেও তখন যাচাই-বাছাই না হওয়ার কারণে তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। এখন স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ সাতজনের সংসার নিয়ে তিনি মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। ভেঙ্গে যাওয়া পায়ের চিকিৎসা করানো তো দূরে থাক, ঠিকমতো দু’বেলা খেতে পারছেন না। তার বন্ধু সহযোদ্ধা যুবায়ের নোমা জানান, সম্মুখযুদ্ধে মান্নান চৌধুরী একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন লেখালেখিতে বারবার তার মান উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু নিরক্ষর ও অত্যন্ত সহজ-সরল হওয়ার কারণে তিনি সনদপত্র সংগ্রহ বা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। তিনি বীর এ মুক্তিযোদ্ধার নাম দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দাবি জানান। এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শরীফ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আবেদন না করার কারণে আব্দুল মান্নান চৌধুরীর নাম তালিকায় নেই। তবুও এ ব্যাপারে তিনি যথাসাধ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করেন। বাগেরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার ও যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি সাহিনুল আলম ছানা বলেন, কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে না। এ ব্যাপারে যা করণীয়, তা করা হবে।
×