ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুত শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার অনুরোধ ঢাকার ॥ নির্যাতনের কথা অস্বীকার সুচির দূতের

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে রূপরেখা প্রণয়ন করবে ঢাকা-নেপিডো

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে রূপরেখা প্রণয়ন করবে ঢাকা-নেপিডো

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ঢাকা-নেপিডো উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। এই সঙ্কট সমাধানে একটি রূপরেখা তৈরি করবে দুই দেশ। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে দ্রুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। অপরদিকে সীমান্তে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মিয়ানমারের বিশেষ দূতের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে এসব আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে আলোচনার লক্ষ্যে মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন মিয়ানমারের বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিও থিন। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে তারা পৃথক বৈঠক হয়েছে। সাড়ে চার ঘণ্টার এই বৈঠক হয়। মিয়ানমারের বিশেষ প্রতিনিধি পরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রথমে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে মিয়ানমারের বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক হয়। এ সময় মিয়ানমারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান, ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিও মিন্ট থান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন মিয়ানমারের বিশেষ দূত। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরা হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। সঙ্কট সমাধানে উভয় পক্ষ একটি রূপরেখা প্রণয়নেও সম্মত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানও চেয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও তুলে ধরে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমারের বিশেষ দূত রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করেছেন। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তে যারা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে সন্ত্রাসীরাাই নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেন বিশেষ দূত। বৈঠকে মিয়ানমার সীমান্তে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানানো হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমারের কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ কখনোই আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না বলেও জানানো হয়। তবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দীর্ঘ বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব কেউই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পুলিশ চৌকিতে আক্রমণে কয়েক পুলিশ সদস্য নিহত হন। এর তিন মাস পর বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয় মিয়ানমার। আর এই লক্ষ্যেই ঢাকায় বিশেষ দূত হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিও থিনকে পাঠিয়েছে সে দেশের সরকার। গত বছর ২৯ জুন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিল আউং সান সুচির কাছে বিশেষ দূত পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক মিয়ানমারে আউং সান সুচির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রীর একটি চিঠিও হস্তান্তর করেন শহীদুল হক। তিনি সে সময় মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং লায়েং ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি ইউ অং লেইলের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বার্তা পৌঁছে দেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা নোবেলজয়ী সুচির রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় সঙ্কট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েই তার দল এ বছরের শুরুতে ক্ষমতায় আসে। তবে অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে নীরব থাকায় নানা মহল থেকে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সুচির সমালোচনা শুরু হয়। তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও ওঠে। এর আগে ২০১২ সালেও রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। সেবার শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর থেকে দুই সম্প্রদায় রাখাইন অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আলাদাভাবে বসবাস করে আসছিল। মিয়ানমার সীমান্তে সামরিক বাহিনীর অভিযানের পরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বসতভিটা ছেড়ে সীমান্ত পার হয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। এখনও অনেকেই বাংলাদেশে আসার জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করছেন। এ অবস্থার মধ্যেই ঢাকায় বিশেষ দূত পাঠালেন আউং সান সুচি।
×