ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আসল ছবি বাকি, ঢাকাকে হুমকি আইএসের

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ৭ জুলাই ২০১৬

 আসল ছবি বাকি, ঢাকাকে হুমকি আইএসের

অনলাইন ডেস্ক ॥ গুলশন হামলা নাকি সিনেমার ট্রেলর। আরও বড় আকারে, আরও বড় মাপের একাধিক জঙ্গি হামলার ঢেউ এবার একের পর এক আছড়ে পড়তে চলেছে বাংলাদেশের বুকে। গুলশন হামলার পাঁচদিনের মাথায় এ ভাবেই বাংলাদেশে হামলা চালানোর হুমকি দিল ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। তাদের দাবি, আর ওই হামলার লক্ষ্যই হল বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করা। যতদিন তা না হবে তত দিন আক্রমণ জারি থাকবে। এরই মধ্যে প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে কয়েক হাজার যুবকের নিখোঁজ থাকার ঘটনাও। এক দিকে তাঁদের খোঁজে তল্লাশি অন্য দিকে ইদের ঠিক মুখে ফের জঙ্গি হামলার বার্তা আসায় নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ প্রশাসনও। গুলশন হামলার দু’দিন আগেই বাংলাদেশ পুলিশ আশঙ্কায় জানিয়েছিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফের বড় মাপের জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে সামনে এসেছে হামলার হুমকি ভিডিওটি। বাংলাদেশের নাগরিক তথা আইএস সদস্য হিসাবে নিজেকে দাবি করে আবু ইশা অল-বেঙ্গলি নামে এক যুবক ভিডিওতে দাবি করেছেন, ‘‘বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটেছে তা কেবল ঝলক মাত্র। এ ধরনের আরও হামলা একের পর এক হতেই থাকবে। যত দিন না আমাদের জয় হয় এবং শরিয়ত আইন বিশ্বে চালু না হয়।’’ আইএসের উপর নজরদারি রাখে এমন একটি সংস্থা ওই ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে জানিয়েছে, ভিডিও-র একেবারে শুরুতে রয়েছে কী ভাবে আইএস প্যারিস, ব্রাসেলস বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওরল্যান্ডোতে হামলা চালিয়ে সাফল্য পেয়েছে আইএস। নিরাপত্তা বিষয়ক ওই সংস্থাটির দাবি, ভিডিওতে জঙ্গিকে সিরিয়ার আইএসের শক্ত ঘাঁটি রাকার রাস্তা থেকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও হুমকি দিয়েছে সে। ভিডিওতে বাংলাদেশের শাসকদের উদ্দেশে ওই জঙ্গির বার্তা-বাংলাদেশের শাসকদের বলতে চাই, অতীতে জেহাদ বা সন্ত্রাসের যে চেহারা ছিল তা আজ বদলে গিয়েছে। এখন যে জেহাদ হচ্ছে তা খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হচ্ছে। খিলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এখন বাংলাদেশও সামিল। এ দেশ এখন খিলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের বৃহত্তর যুদ্ধক্ষেত্রে আওতায় এসে গিয়েছে। সরকারি ভাবে বাংলাদেশ প্রশাসন এখনও সে দেশে আইএসের অস্বিত্বের কথা স্বীকার করে না। গুলশন হামলার পিছনে আইএস যে রয়েছে সেই তথ্য মানতে রাজি হয়নি শেখ হাসিনার প্রশাসন। যদি প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা গহওর রিজভি সংবাদমাধ্যমে জানান, গুলশন হামলার পিছনে কারা রয়েছে সেই তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এই ষড়যন্ত্রের হদিশ পেলে নতুন তথ্য সামনে আসতেই পারে। তবে যে ভাবে রাকার রাস্তায় বাংলায় ওই জঙ্গি বক্তব্য রাখতে দেখা গিয়েছে, তার পর বাংলাদেশ ও আইএসের সম্পর্কের বিষয়টি উড়িয়ে দিতে পারছে না বাংলাদেশ পুলিশও। বাংলাদেশের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল শাহিদুর রহমানের কথায়, ‘’আমরা এই হুমকিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দেখছি। সংশ্লিষ্ট সমস্ত গোয়েন্দাবাহিনীও এক সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করছে।’’ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই তদন্তে সাহায্য করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রশাসনের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, তাতেও গুলশন হামলার সঙ্গে আইএসের যোগাযোগের বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এক দিকে জঙ্গি হামলার হুমকি। অন্য দিকে দেশ থেকে নিখোঁজ হাজারের বেশি যুবক। তারা কোথায়, কী করছে, জানা নেই। যেমনটি জানতেন না জঙ্গি রোহানের বাবা আওয়ামি লিগ নেতা ইমতিয়াজ বাবুল। নিখোঁজ এই ছেলেদের অধিকাংশ সম্পন্ন পরিবারের। বাংলাদেশ প্রশাসন মনে করছে, মাদ্রাসার পরিবর্তে উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেদেরই এখন নিশানা বানাচ্ছে জঙ্গিরা। ইংরেজি ও উচ্চশিক্ষিত যুবকদের মগজধোলাই করে জঙ্গি বানানো হচ্ছে। সেই কারণে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে কারুর ছেলে নিখোঁজ থাকলে দ্রুত তা পুলিশকে জানাতে বলা হচ্ছে। আর যারা ইতিমধ্যেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে তারা কোথায় রয়েছে এ বিষয়ে দেশব্যাপী তদন্তে নামতে চলেছে বাংলাদেশ পুলিশ। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×