ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রীয় শোক ও প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৫ জুলাই ২০১৬

রাষ্ট্রীয় শোক ও প্রতিরোধ

সারাদেশে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্তরাঁয় শুক্রবার রাতের শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সঙ্কটের করুণ সমাপ্তি ঘটেছে শনিবার প্রত্যুষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সম্মিলিত বাহিনীর সফল কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে। ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ শেষে তিন বিদেশীসহ ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রেস্তরাঁর ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২০ জনের মৃতদেহ। নিহতদের তলোয়ার দিয়ে জবাই করে ও খুঁচিয়ে নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গীরা, যাদের মধ্যে আছেন নারীও। জঙ্গীদের অতর্কিত বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণে নিহত হন পুলিশের দুই উর্ধতন কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে দুই পুলিশসহ নিহত ২৮, আহত প্রায় ৫০ জন। সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় ছয় জঙ্গী। সন্দেহভাজন এক জঙ্গীকে আটক করা সম্ভব হয় জীবিত অবস্থায়। এসবই সম্ভব হয়েছে সরকার প্রধানের সময়োচিত, দৃঢ়, সাহসী সিদ্ধান্ত ও সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য। অভিযানের সফল সমাপ্তির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করেন দু’দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক। বর্তমান সরকার সব সময়ই ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদসহ যাবতীয় জঙ্গী তৎপরতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। দেশে বেশ কিছুদিন ধরে কয়েক ব্লগার, প্রকাশক-লেখক, ভিন্ন মতের অনুসারীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সাধু-পুরোহিত-সেবায়েত হত্যাকা-ের পর সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বসে থাকেনি। বরং ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গী তৎপরতা প্রতিরোধ করতে যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে সারাদেশে পরিচালিত করেছে চিরুনি অভিযান। তাতে কিছু সংখ্যক জঙ্গী, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী ধরাও পড়েছে। তবে এর বাইরেও যে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী রয়ে গেছে, গুলশানের ঘটনা তারই প্রমাণ। পুলিশের আইজি বলেছেন, গুলশানের ঘটনায় নিহত ছয় জঙ্গী তালিকাভুক্ত পলাতক আসামি এবং তাদের গডফাদারও আছে। সুতরাং সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গী তৎপরতা নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত প্রক্রিয়া হিসেবেই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ বরাবরই ধর্মীয় উদারতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে পারস্পরিক সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতার দেশ হিসেবে সুপরিচিত। মূলত এসব মানবিক মৌলনীতির ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তবে দুঃখজনক হলো, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পরই সামরিক স্বৈরাচার হিসেবে ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতিতে তথাকথিত ধর্মের নামে শুরু হয় অপতৎপরতা। সর্বশেষ স্বাধীনতা-মানবতাবিরোধী একাত্তরের ঘৃণ্য ঘাতকদের বিচার ও মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হলে মৌলবাদীরা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াসহ নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় বাসে বোমা হামলা, পেট্রোলবোমায় দেড় শতাধিক নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারাসহ বিভিন্ন সময়ে ভিন্নমত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যায় মেতে ওঠে তারা। ইতোপূর্বে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলাসহ সর্বশেষ গুলশানে জঙ্গী হামলা- এসবই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মাত্র। জেএমবি, আনসার উল-ইসলাম, হরকাতুল মুজাহিদীন, হিজবুত তাহরীর প্রকারান্তরে শিবির-জামায়াতের সম্প্রসারিত অংশ এবং আইএসআইয়ের মদদপুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, এরা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। গুলশান ঘটনার পরপরই ভারত, জাপান, ইতালি ও অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। এখন দেশের ষোলো কোটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য হবে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বর্তমান সরকারের পাশে দাঁড়ানো। রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি ও কমিউনিটি পুলিশ গঠন করে যাবতীয় সন্ত্রাসের মোকাবেলা করতে হবে। শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই।
×