ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ শুভেচ্ছায় নতুন সংযোজন- হৃদয়ের কথা বলে...

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৫ জুলাই ২০১৬

ঈদ শুভেচ্ছায় নতুন সংযোজন- হৃদয়ের কথা বলে...

সমুদ্র হক ॥ ঈদের শুভেচ্ছায় পরিবর্তন এসেছে। বড় আসন করে নিয়েছে শোপিস। একটা সময় এই শোপিস উচ্চবিত্তের শোকেসে, বুক সেল্ফে শোভা পেত। এখন শোপিস আদান-প্রদান শুরু হয়েছে শুভেচ্ছা বার্তায়, যা হৃদয়ের কথা বলে। কত ডিজাইনের, কত বাহারি যে শোপিস আছে...। গ্লাস কাট, স্টোন উইথ গ্লাস, ম্যাগনিফাইং রেক্টেঙ্গেল গ্লাস, ট্রায়াঙ্গেল গ্লাস,বার্ড ফ্লাই, ফিশ গ্লাস, লিলিপুট ফ্রগ নামের সঙ্গে হাজারো নাম আছে। চিত্রকলার মতো বানানো হয় শোপিস। কেউ আবার শোপিস কিনে মনগড়া নাম দিয়ে দেয়। টিন-এজাররা মিনি সাইজের শোপিস নিয়ে শিশুবেলার পুতুল খেলার মতো করে। বন্ধুত্ব গাঢ় করতে ঈদের শুভেচ্ছায় শোপিস পুতুলের বিয়ে দিয়ে দেয়। তরুণীরা কমে যায় না। সেল ফোনের ক্যামেরায় শোপিসের ছবি তুলে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ইন বক্সে পাঠিয়ে দেয়। কে কত ধরনের শোপিস কিনল, কারটি ভাল তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। বগুড়ার অভিজাত এলাকা জলেশ্বরিতলায় শহীদ জব্বার সড়ক, রোমেনা আফাজ সড়কের দুই ধারে আধুনিক শোরুম ও শপিংমলে পোশাক অর্নামেন্টস ইমিটেশন ইত্যাদির সঙ্গে শোপিস বড় আসন করে নিয়েছে। বছর কয়েক আগেও এই শোপিস মিলত মেলামাইল, কাঁচের ডিনার সেট, টি সেট ও কাটলারিজের দোকানে। বিক্রি হতো বিচ্ছিন্নভাবে। ঘর সাজানোর জন্যই কেনাকাটা হতো। শোকেসে, বুক সেল্ফে, রেফ্রিজারেটরের ওপর, ডাইনিং টেবিলের শোভা বর্ধন করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে শোপিস। এখন এই শোপিসের আসন ঘরের অনেক জায়গায়। শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে । যেখানে সৌন্দর্য বাড়ানো প্রয়োজন সেখানেই শোপিস। হালে এই শোপিস মানব জীবনের কোন মুহূর্ত টেনে এনে নস্টালজিক করেও দিচ্ছে। ঈদের শুভেচ্ছায় কিভাবে শোপিস আসন করে নিল তার খোঁজখবর করতে জানা গেল- শুভেচ্ছা বিনিময়ের এই ধারা শুরু হয়েছে জন্মদিন ও বিয়ে বার্ষিকী পালনের পথ ধরে। তারপর সংবর্ধনা, ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানেও আসন করে নেয়। দিনে দিনে সকল শুভেচ্চার পালায় এবং উপহারের ডালায় শক্ত আসন করে নেয় শোপিস। ঈদের শুভেচ্ছায় শোপিসের আগমন বেশিদিনের নয়। বগুড়া শহরের একটি অভিজাত শোরুমের সেল্সম্যান জানালেন, দু’বছর ধরে শোপিসের বেচাকেনা বেড়েছে। আগে তারা শোপিস তুলত না। এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শোপিস কর্নার করতে হয়েছে। এই শোপিসের দাম যে খুব বেশি তাও নয়। একশ’ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। পাথর সেটিং শোপিসগুলোর দাম বেশি। ইমিটেশনের গহনা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় কিন্তু শোপিসগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে নয় ধাঁধিয়ে যায়। এমনও শোপিস আছে ঈদের শুভেচ্ছায় যেগুলো ইমোশনাল হয়ে মানব জীবনের হৃদয়ের গভীরের জায়গাটিতে পৌঁছে যায়। শোপিস শিশু-কিশোর-কিশোরী তরুণ-তরুণী এমনকি মধ্য বয়সীরাও কিনছে। ঈদ কার্ডের শুভেচ্ছায় কত ছন্দের কথা লিখে দিতে হয়। পছন্দ করে শোপিস কিনলে লেখার আর প্রয়োজন হয় না। সিগনিফিক্যান্ট শোপিস তা বলে দেয়। এই ক্ষেত্রে প্রণয়ের মানব-মানবীদের কাছে শোপিস মধুময়তার শুভেচ্ছা পৌঁছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী বলল, ঈদ কার্ডে, টেক্সট মেসেজে, ই-মেইলে, ফেসবুকের ইনবক্সে শত শব্দ লিখেও যা বলা যাবে না শোপিস দেখেলে হাজার শব্দের সুপ্ত কথাগুলো বের হয়ে আসে। শোপিস আসে বিশ্বের নানা দেশ থেকে। তবে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, হংকং, মালয়েশিয়ার শোপিসগুলো বেশি চলছে। জাপানের শোপিসের দাম অনেক। ভারত ও চীনের শোপিস আকর্ষণ করে বেশি। একটা সময় ঈদের আগে ঈদকার্ড আদান-প্রদানের চল ছিল। এখনও আছে। তবে এই ঈদকার্ড কম্পিউটারেও ঢুকে পড়েছে। বর্তমান প্রজন্ম তাদের স্মার্ট ফোন ট্যাব ও নেটবুকে গুগলসহ নানা ওয়েবসাইটে গিয়ে এ্যানিমেশনের ঈদকার্ড খুঁজে বের করে ফেস বুক, ম্যাসেঞ্জার হোয়াটস এ্যাপ ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ও স্টেটাস দেয়। এই জায়গাতেও হানা দিয়েছে শোপিস। দৃষ্টিনন্দন শোপিসগুলো ক্যামেরাবন্দী হয়ে চলে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর কম্পিউটারের হার্ডকপির মতো শোপিসও হার্ড কপি হয়ে চলে যাচ্ছে বন্ধুদের কাছে, প্রণয়ের মানুষের কাছে। ঈদের শুভেচ্ছার ডালায় শোপিস দিনে দিনে ভরে যাচ্ছে। কেনাকাটার সঙ্গে বাড়তি টাচ এই শোপিস।
×