ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কীর্তনখোলা নদীতে লঞ্চ-স্টীমার সংঘর্ষে নিহত-৫

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ৪ জুলাই ২০১৬

কীর্তনখোলা নদীতে লঞ্চ-স্টীমার সংঘর্ষে নিহত-৫

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ কীর্তনখোলা নদীতে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের ঢাকাগামী সুরভি-৭ লঞ্চের সাথে বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জগামী পিএস মাহসুদ স্টীমারের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫ যাত্রী নিহত ও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক। তবে দূর্ঘটনায় অল্পের জন্য জাহাজের সহস্রাধীক যাত্রী প্রানে রক্ষা পেয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার ভোর চারটার দিকে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া এলাকার কীর্তনখোলা নদীতে। দূর্ঘটনাকবলিত পিএস মাহসুদের মাস্টার জয়নাল আবেদীন জানান, স্টীমারটি ঢাকা থেকে চাঁদপুর হয়ে ভায়া বরিশাল থেকে বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে শেষ গন্তব্য করার কথাছিলো। বরিশাল ঘাটে পৌছার পূর্বেই ভোর চারটার দিকে সদর উপজেলার চরবাড়িয়া এলাকায় পৌঁছলে বিপরীতদিন থেকে আসা ঢাকাগামী সুরভী-৭ লঞ্চটি এক টানা হর্ন বাঁজাতে থাকে। তিনি আরও জানান, নৌ-আইন অনুযায়ী একটানা হর্ন দিলে নৌ-যানগুলো যে যার ডান দিক থেকে চলবে। হর্ন অনুযায়ী স্ট্রীমারটি ডান দিকে নিয়ে যাওয়া হলেও সুরভী লঞ্চটি তার দিক পরিবর্তন না করে সরাসরি পিএস মাসুদের মাঝ বরাবর বামপাশের পেডেলসহ ডেকের অংশ ও চারটি স্টাফ কেবিন দুমড়ে মুচরে যায়। এতে ৫ যাত্রী নিহত ও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। দূর্ঘটনায় জাহাজটি চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়লে নদীর ওইস্থানে নোঙর করা হয়। খবর পেয়ে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট, কোষ্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাৎক্ষনিক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত নগরীর কাশিপুর এলাকার কালু (৩০), মোড়লগঞ্জের ফারজানা (১৯), বাগেরহাটের শাকিল সরদার (২১), রুবেল (২২), চাঁদপুরের নুরুল ইসলাম (৫০) সহ অজ্ঞাতনামা ৩৫ বছরের এক নারী ও অজ্ঞাতনামা ৪০ বছরের দুই ব্যক্তিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত ৫জনের মধ্যে নগরীর কাউনিয়া এলাকার জনৈক জামাল উদ্দিনের জন্য তামান্না (১২) ও বাগেরহাট সূতালড়ি গ্রামের আব্দুর রহিমের কন্যা সিমা আকতারের (২০) পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকি তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হতে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বরিশাল বিআইডব্লিউটিসি’র সহকারি মহা-ব্যবস্থাপক আবুল কালাম জানান, ঘটনার পরপরই আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে একে একে স্টীমারের ক্ষতিগ্রস্থ অংশের স্টাফ কেবিন থেকে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তিনি আরও জানান, স্ট্রীমারটিতে ৭’শ যাত্রী ছিলো। দূর্ঘটনার পর আটকে পড়া স্টীমারের যাত্রীদের সরকারী যাত্রীবাহি জাহাজ এমভি মধুমতির সাহায্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। দূর্ঘটনা কবলিত স্টীমারের আহত যাত্রী রুবেল জানান, জাহাজটিতে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী ছিলো। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক এবং বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে রাত তিনটার দিকে বরিশাল আসে সুরভী-৭ লঞ্চটি। ভোররাতে যাত্রী ঘাটে নামিয়ে দিয়ে ফের লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশ্যে খালি রওয়ানা হয়। আর পিএস মাহসুদ নামের স্টীমারটি যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে বাগেরহাটের মোড়রগঞ্জে যাওয়ার কথা ছিলো। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ স্ট্রীমারে উদ্ধার অভিযান শেষে দূর্ঘটনা কবলিত স্টিমার পিএস মাহসুদকে উদ্ধারকারী জাহাজ দূর্বারের মাধ্যমে বরিশাল স্টিমার ঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে। অপরদিকে সুরভী-৭ লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক হোসেন জানান, তারা দুই নারী এবং তিনজন পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। তিনি আরও জানান, রাত থেকে প্রবল বৃস্টিপাত অব্যাহত থাকায় উদ্ধার কাজ অনেকটা বিলম্বিত হয়। সকাল দশটার দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এদিকে দূর্ঘটনার খবর পেয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান, বিএমপি’র পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন, জেলা পুলিশ সুপার এসএম আকতারুজ্জামানসহ জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, কোষ্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে বিশ হাজার ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যয় বাবদ দশ হাজার টাকা হিসেবে সরকারি সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় ও সুস্পষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) আহবায়ক এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সিভিল সার্জন, নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী, বিআইডব্লিউটিসির নির্বাহী প্রকৌশলী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালককে প্রতিনিধি করা হয়েছে।
×