ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ রাষ্ট্রীয় শোকের দ্বিতীয় দিন

জঙ্গীরা সবাই জেএমবি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৪ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীরা সবাই জেএমবি

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় রবিবার থেকে বিভিন্ন অফিসে জাতীয় পতাকা অর্ধনির্মিত রাখাসহ দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে বাংলাদেশ। জঙ্গী হামলায় নিহতদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে শ্রদ্ধা নিবেদন, নিহতদের কফিনে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, সর্বস্তরের মানুষের জন্য শ্রদ্ধানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ উন্মুক্ত রাখার কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। এই জঙ্গী হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস) দায় স্বীকার করলেও জঙ্গী হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গীরা আইএস নয়, তারা জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সদস্য বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের উর্ধতন মহল। জঙ্গী হামলার দ্বিতীয় দিনে গুলশানের ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। জঙ্গী হামলার পেছনে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র বিশেষ করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হাত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গুলশানের জঙ্গী হামলায় অংশগ্রহণ করেছে ৭ জঙ্গী, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাইট ইন্টেলিজেন্স ছবি প্রকাশ করেছে ৫ জনের, বাংলাদেশ পুলিশও ৫ জনের নাম প্রকাশ করেছে, তাহলে আর বাকি ২ জঙ্গী কোথায় তাদের নাম, পরিচয়ই বা কী? থান্ডারবোল্ট অপারেশন পরিচালনার সময়ে হলি আর্টিজান বেকারি থেকে জঙ্গী সন্দেহে আটক হওয়া একজনকে গোয়েন্দা হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং ঘটনাস্থলে নিহত জঙ্গীর লাশ সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আনা হয়েছে। নিহত জঙ্গীদের ছবি যুক্তরাষ্ট্রের সাইট ইন্টেলিজেন্সে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক কৌতূহল ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গুলশানের জঙ্গী হামলায় হতাহত, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার, জিম্মি করাসহ জঙ্গী হামলার ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। গুলশানের জঙ্গী হামলার শিকড়ের সন্ধানে মাস্টারমাইন্ড কে বা কারা তার খোঁজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। সরকারের উচ্চপর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। রাষ্ট্রীয় শোক পালন শুরু ॥ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গুলশানের জঙ্গী হামলায় হতাহতের হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক ঘটনায় দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক প্রকাশের প্রথম দিন রবিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন অফিসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে শোক পালন করা হচ্ছে। গত শুক্রবার রাতে গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী জঙ্গী, জিম্মি হন দেশী-বিদেশী অন্তত ৩৩ জন। জিম্মি অবস্থা থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ২০ জনের লাশ পাওয়া যায়, যাদের প্রথম প্রহরেই জবাই করে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানী ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশী, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রেও নাগরিকত্ব ছিল। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে গুলশানে নিহতদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রবি ও সোমবার শোক পালনের বিষয়ে আদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, ‘আর্টিজান বেকারিতে একদল সন্ত্রাসীর হাতে নৃশংসভাবে শাহাদাতবরণকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তা এবং সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নিরীহ দেশী-বিদেশী ব্যক্তিদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ৩ ও ৪ জুলাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শোক পালিত হবে। এর আগে রাতে রেস্তরাঁয় হামলার পরপরই সেখানে আটকেপড়াদের উদ্ধারে গিয়ে হামলাকারীদের বোমা-গুলিতে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দীন। এই ঘটনার পরও আলোচনার মাধ্যমে জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও জঙ্গীরা সাড়া না দেয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটায়। নিহত যারা হয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন, ইতালির নয়জন: নাদিয়া বেনেদিত্তো, ভিনসেনজো দ আলেস্ত্রো, ক্লদিও মারিয়া দান্তোনা, সিমোনা মন্টি, মারিয়া রিবোলি, আডেলে পুগলিসি, ক্লদিও চাপেলি, ক্রিস্টিয়ান রোসিস ও মারকো তোনডাট। জাপানের সাতজন: তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো। নিহত সাত জাপানীর মধ্যে ছয়জন মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে ওই ক্যাফেতে ছিলেন আরও একজন, যাকে পরে উদ্ধার করা হয়। ভারতীয় একজন: তারিশি জৈন ও বাংলাদেশী তিনজন: ইশরাত আখন্দ, অবিন্তা কবীর ও ফারাজ হোসেন। বাংলাদেশে নজিরবিহীন এই জঙ্গী হামলার হতাহতের ঘটনায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও কেউ কেউ তাদের প্রোফাইলের ছবিতে কালোব্যাজ রেখে, কারও প্রোফাইল ছবির পুরোটাই ঢেকে গেছে শোকের কালোতেসহ নানাভাবে আসছে শোকের প্রকাশ করা হচ্ছে। জাপান, ইতালি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের পক্ষ থেকেও শোক প্রকাশ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। নিহতদের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন ॥ গুলশানে জঙ্গী হামলায় নিহতদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে শ্রদ্ধা নিবেদনের এই আনুষ্ঠানিকতা হবে। সর্বস্তরের জনগণও সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও সোমবার নিহতদের শ্রদ্ধা জানাবেন। গুলশানে নিহতদের স্মরণে দেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম ও আওয়ামী লীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের উপর আস্থা রাখুন। ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আমরা যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ঠেকাতে জনগণকে সক্রিয় হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা ও যেভাবে যায় জঙ্গীরা ॥ গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, শুক্রবার রাত ৯টার কিছুক্ষণ আগে কয়েক বিদেশীকে বহনকারী একটি গাড়ি দ্রুত এই সড়কের লেক ভিউ ক্লিনিকের গেট দিয়ে ভেতরের দিকে যায়। ঠিক তখনই ওই গাড়ির পেছনে আরও দুটি গাড়ি ঢোকে। পরক্ষণই গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। মনে হয়েছে বিদেশীদের বহনকারী গাড়িটি অনুসরণ করে পেছনের দুটি গাড়ি প্রবেশ করেছে। গোলাগুলি শুরুর পরপরই ওই গাড়ি দুটি বের হয়ে যায় বলে জানান তিনি। হলি আর্টিজান বেকারির মালিকেরই আরেকটি বনেদি রেস্তরাঁ রয়েছে গুলশান ২-এর ১১৩ নম্বর সড়কে; নাম ইজুমি। দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহজাদ মেহেদীসহ কয়েকজন। ঘটনার সময়ে হলি আর্টিজানে ছয় নিরাপত্তাকর্মী ছিল। এক নিরাপত্তাকর্মীর বরাত দিয়ে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, রাত পৌনে ৯টার দিকে বিদেশীদের বহনকারী একটি গাড়ি বেকারি ও হাসপাতাল গেটে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে পেছনে আরও দুটি গাড়ি ঢোকে। ওই গাড়ি দুটি থেকে নেমে কয়েকন যুবক বিদেশীদের বহনকারী গাড়ি চালকের দিকে গুলি চালায়। গাড়ি চালককে গুলি করার পর অস্ত্রধারীদের গুলিতে হলি আর্টিজানের একজন নিরাপত্তাকর্মীও আহত হয়েছেন। গুলশানের ঘটনাস্থল থেকে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোঃ বাচ্চু মিয়া বলেন, তার (রাজ্জাকের) পিঠে গুলি লাগে। বিদেশীদের বহনকারী যে গাড়িটির চালককে গুলি করা হয়েছিল, তার নাম রাজ্জাক। জাপানী এক নাগরিকের গাড়ি চালান তিনি। যুবকরা গাড়ি থেকে নামার পর তাদের বহনকারী গাড়ি দুটি চলে যায় বলে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ১৬ জনকে ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদ ॥ গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জীবিত উদ্ধার করা জিম্মিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার রাতে তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলেও রবিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের ডিবি হেফাজতেই রাখা হয়। এতে স্বজনদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে দুপুর ১টার পর উদ্ধারকৃতদের কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৬ জনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে জীবিত উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগী ১৩ জন, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের দুই স্টাফ ও হামলাকারী সন্দেহে আটক একজন রয়েছেন। হাসনাত করিমসহ আরও তিন ভুক্তভোগীর পরিবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উদ্ধারকৃতদের ডিবি কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভেতরে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও করানো হয়েছে। তবে সারারাত পার হওয়ার পর সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালেও তাদের ডিবি হেফাজতে রাখায় অস্থিরতা বিরাজ করছে স্বজনদের মধ্যে। স্বজনরা ভুক্তভোগীদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ডিবি অফিসের বাইরে উদ্বেগের সঙ্গে প্রতীক্ষা করছেন। গুলশান জঙ্গী হামলাকারীদের ছবি ও পরিচয় ॥ গুলশানের জঙ্গী হামলায় জড়িতদের পাঁচজন চিহ্নিত জঙ্গী বলে জানিয়েছেন পুলিশপ্রধান একেএম শহীদুল হক। তাদের খোঁজা হচ্ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। পুলিশের পক্ষ থেকে এই পাঁচজনের নাম বলা হয়েছে- আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি। তবে যে পাঁচ জঙ্গীর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে চারজনের পরিচয় তুলে ধরেছেন তাদের স্কুল-কলেজ সূত্রে পরিচিতজনরা। তাদের একজন হচ্ছে, নিবরাস ইসলাম। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। সাবেক সহাপাঠীরা শনাক্ত করে তার ছবি ও পরিচয় সামনে এনেছে। নিবরাস ইসলামের এই ছবি ও সাইটের দেয়া ছবি পাশাপাশি দিয়ে শেয়ার করা হচ্ছে ফেসবুকে। সাইটের দেয়া ছবি পাশাপাশি দয়ে তার পরিচয় প্রকাশ করেছেন এক প্রবাসী। নিহত আরেক জঙ্গীর নাম হচ্ছে, মীর সাবিহ মুবাশ্বের। সে স্কলাসটিকার ছাত্র। এ লেভেল পরীক্ষার আগে গত মার্চে মুবাশ্বের নিখোঁজ হয়। তার এক সহপাঠীর বরাত দেয়া সূত্রে এ খবর জানানো হয়েছে। নিহত আরেক জঙ্গীর নাম হচ্ছে, মাহবুব রাজীব। এই নামে আরেকজন ফেসবুকে জঙ্গীর ছবি দিয়েছেন। আরেক নিহত জঙ্গীর নাম রোহান ইমতিয়াজ। এই নামের এই ছেলেও স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র। বাবা-মার সঙ্গে তার ছবির পাশে দেয়া হয়েছে সাইটের ছবি, যেখানে দুই ছবির মধ্যে মিল পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই জঙ্গীর ছবিসহ পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে এইভাবে রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল। তবে ওই জঙ্গী হামলায় জড়িত দাবি করে সাইট ইন্টিলিজেন্স যে পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করেছে সেগুলোর সত্যতা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা যায়নি। এদিকে পুলিশ শনিবার রাতে নিহত পাঁচজনের লাশের ছবি প্রকাশ করেছে। দুই ছবির মধ্যে অন্তত চারজনের চেহারায় মিল ধরা পড়ে। বাকি একজনের ছবি একই ব্যক্তির কিনা, তা স্পষ্ট নয়। সাইট ইন্টেলিজেন্সের টুইটারে ছবি প্রকাশ ॥ শনিবার রাত ১০টার দিকে সাইটের টুইটার এ্যাকাউন্টে ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়। রাইফেল হাতে এই তরুণদের ছবি কখন তোলা, তাও স্পষ্ট নয়। টেররিজম মনিটরের টুইটার এ্যাকাউন্টে একই তরুণদের ছবি দিয়ে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- আবু উমর, আবু সালমা, আবু রহিম, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব। আইএসই এই ছবি প্রকাশ করেছে বলে জঙ্গী হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইটটির পরিচালক রিটা কাটজ তার টুইটার এ্যাকাউন্টে বলেন, ‘বাংলাদেশ হামলায় ৫ হামলাকারীকে চিহ্নিত এবং ছবি প্রকাশ করেছে আইএসআইএস।’ সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই খাবার দোকানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ২০টি লাশ পাওয়া যায়, যাদের গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহতদের অধিকাংশই বিদেশী নাগরিক। সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে কয়েকজনের রক্তাক্ত ছবিও প্রকাশ করে বলা হয়, এরা গুলশানের ক্যাফেতে নিহত হয়েছেন। আইএস বার্তার সন্দেহ ॥ বাংলাদেশে গত দেড় বছরে বেশ কয়েকটি হত্যাকা-ের বিষয়ে আইএসের নামে বার্তা প্রকাশের খবর এলেও সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, দেশীয় জঙ্গীরা অপরাধ করে আন্তর্জাতিক সংগঠনের নাম ভাঁড়াচ্ছে। গুলশানের ঘটনায়ও আইএসের ‘দায় স্বীকারের’ পেছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করছেন পুলিশপ্রধান (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। তিনি বলেন, কোন হামলার ঘটনা ঘটলে আইএস দায় স্বীকার করে। আমেরিকায় হামলার ঘটনা ঘটলেও আইএস দায় স্বীকার করে। আইএসের দায় স্বীকারের লিংক খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। জঙ্গী হামলার ভিডিও প্রকাশ ॥ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ছবি বাংলাদেশ পুলিশ প্রকাশ করার আগেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএস কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে, যাদের হামলাকারী বলে জানায় তারা। পুলিশের এক ঘণ্টা আগেই হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিতর্কিত’ ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’। এর পরই একটি ছবির সঙ্গে ঢাকার এক যুবকের চেহারার মিল পায় তারই ফেসবুকের বন্ধুরা। আইএস প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে হাস্যোজ্জ্বল ওই তরুণ। পেছনে আইএসের পতাকা। এর পর ফেসবুকে অনেকে সাইটে প্রকাশিত ছবির পাশে যুবকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া ছবি পাশাপাশি দিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। ওই ‘সুদর্শন’ তরুণের প্রোফাইল অনুযায়ী তার নাম নিবরাস ইসলাম। ফেসবুকে নিবরাস ইসলাম নিজেকে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এর আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও করেছেন। এর আগে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। জঙ্গীরা বাড়ি থেকে নিখোঁজ ছিল ॥ গুলশান হামলায় অংশ নিয়ে নিহত পাঁচ হামলাকারীই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। এরা সবাই বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ ছিল। বেশ কিছুদিন আগে এরা প্রত্যেকেই বাসা ছেড়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এদের তিনজন রাজধানীর বিভিন্ন নামীদামী স্কুল-কলেজে পড়েছেন বলে তাদেরই বন্ধুরা দাবি করেছেন। তারা চিঠি লিখে বাসা ছেড়েছে বলেও তাদের বন্ধুরা ফেসবুকে দাবি করছেন। এরা গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। এরা হলো- নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মোবাশ্বির ও তাসিন রওনক। তাসিনের বিষয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। যেভাবে নিখোঁজ হয় ॥ মীর সামিহ মোবাশ্বির গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটার দিকে মীর সামিহ মোবাশ্বির কোচিংয়ে যাওয়ার উদ্দেশে গাড়িতে বাসা থেকে বের হয়। যানজট থাকায় কোচিং সেন্টারের আগেই গাড়ি থেকে নেমে যায়। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে গাড়িচালক জুয়েল তাকে কোচিং থেকে আনতে গেলে তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরে মোবাশ্বিরের বাবা মীর এ হায়াত কবীর ওই দিনই গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ১৮৪৮) করেন। পুলিশ তার খোঁজ করতে গিয়ে গুলশান এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পায়, মোবাশ্বির গাড়ি থেকে নামার পর একটি রিক্সা নিয়ে বনানীর ১১ নম্বর সড়কের দিকে চলে যাচ্ছে। নিবরাস ইসলাম ॥ হামলাকারীদের আরেকজন নিবরাস ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। সাবেক সহাপাঠীরা শনাক্ত করে তার ছবি ও পরিচয় সামনে এনেছেন। দ্য এশিয়া ফয়েলসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ নেওয়াজ লিখেছেন, আমি আমার চিন্তাগুলোকে এক জায়গায় করতে চেষ্টা করছি। হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দু’জনকে আমাদের অনেকেই চেনে। কয়েক বছর আগে এদেরই একজনকে (নিবরাস ইসলাম) আমি কাছ থেকেই দেখেছি। এদেরই একজন ফুটবল খেলতে পছন্দ করত, তার আচরণের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিল। এ ছেলেই কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে চেক-ইন দিতে পছন্দ করত। দু’জনকেই গত ফেব্রুয়ারি থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। রোহান ইমতিয়াজ ॥ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটির যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে রোহান ইমতিয়াজ। ফেসবুক দেখে বোঝা যায়, তিনি কিছুদিন ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তিনি ফেসবুকে ছেলের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘প্লিজ কামব্যাক’। রোহান ইমতিয়াজ ও ইমতিয়াজ খান বাবুলের একসঙ্গে ছবি পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ইমতিয়াজ খান বাবুলের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। গুলশান হামলায় জড়িত প্রত্যেকেই চার-পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। কিছুদিন আগে মাদারীপুরে ধরা পড়া জঙ্গী ফাহিম বাড়িতে মেসেজ পাঠিয়েছিল সে বিদেশ যাচ্ছে। তারও কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরে ধরা পড়ে ওই দেশে প্রশিক্ষণ নেয়া বেশ কয়েকজন জঙ্গী। পাকিস্তান বা আফগানিস্তান নয়, জঙ্গীদের অভয়ারণ্য এখন সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার পদমর্যদার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চার হামলাকারীর যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে তা ঠিক আছে।’ পাকিস্তানী ধ্যানধারণা ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্টে উল্লেখ করা হয় যে, সুশিক্ষার অভাব আর দীর্ঘদিনের পাকিস্তানী ধ্যানধারণা লালন করে আসা পরিবারের অনেকেই বিবেচনাবোধ হারিয়েছে। ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত হামলাকারী নিবরাস ইসলামের টাইমলাইনে যে ছবিগুলো দেখা যায়, তাতে তার আধুনিক পোশাক, আত্মীয়দের সঙ্গে সেলফি, সুইমিংপুলে সাঁতারের দৃশ্য অবাক করেছে অনেককেই। রেস্তরাঁয় হামলার সময় জঙ্গীরা জিম্মিদের পবিত্র কোরান থেকে সূরা পাঠ করতে বলা আর হিজাব পরিহিত নারীদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। সেসবের উল্লেখ করে অনেকেই বলেছেন, নিবরাস যাদের সঙ্গে সেলফি তুলেছে তারা তো হিজাব পরিহিত ছিল না। তাহলে তার কেন এ দ্বিচারিতা? এসব প্রশ্ন আর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জঙ্গীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ভয়াবহতা নিয়েই সরব এখন ফেসবুক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘হামলাকারীরা আইএস নয় বরং নিষিদ্ধ ঘোষিত স্থানীয় জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। ফরাসী সংবাদ মাধ্যম এএফপিকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ দাবি করেন তিনি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া খবরটি নিশ্চিত করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (হামলাকারীরা) জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের সদস্য। তাদের সঙ্গে আইএসের কোন সংযোগ নেই। তিনি বলেন, তারা (হামলাকারীরা) সবাই উচ্চশিক্ষিত তরুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে তারা। তাদের কেউ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেনি। তবে তারা কেন চরম ইসলামপন্থী জঙ্গীতে পরিণত হলো এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ‘এটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে’ বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুলিশের আইজি বলেছেন ॥ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেছেন, গুলশানে হামলাকারীরা সবাই জেএমবি সদস্য। তবে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রবিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’পুলিশ কনস্টেবল ও মাইক্রোবাসচালককে দেখার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। আইজিপি বলেন, গুলশানে হামলাকারীরা জেএমবির সদস্য হিসেবে পুলিশের তালিকাভুক্ত। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘হামলার আগাম কোন গোয়েন্দা খবর ছিল না। তবে হামলার পর আমরা খবর পেয়েছি।’ শুক্রবার রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশ কনস্টেবল আলমগীর হোসেন ও প্রদীপ চন্দ্র দাস এবং মাইক্রোবাসচালক আব্দুর রাজ্জাক আহত হন। বর্তমানে তারা ঢামেক হাসপাতালের ১০১নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সিআইডির ক্রাইম ইউনিট ঘটনাস্থলে ॥ রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে আলামত সংগ্রহের জন্য গেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি দল ও গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী ইউনিট। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে তারা ওই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেন। এ সময় সিআইডির পরিদর্শক আবুল হাসান বলেন, ‘আলামত সংগ্রহ করার জন্য রেস্তরাঁয় এসেছি।’ মামলার প্রস্তুতি ॥ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গী হামলায় হতাহত, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য ব্যবহার ও জিম্মি করার ঘটনায় সন্ধ্যা সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কয়েকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। জঙ্গী হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে নেয়া ছাড়াও ইতোমধ্যেই ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে। ছায়া তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। বেকারির শেফ, জঙ্গী নয় ॥ জঙ্গী হামলার ঘটনায় বলা হয়েছে, হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রবেশ করেছে অন্তত সাত জঙ্গী। এর মধ্যে থান্ডারবোল্ট অপারেশনের সময়ে মারা গেছে বলা হয়েছে ছয় জঙ্গী। বাংলাদেশ পুলিশ ও জঙ্গীদের ওয়েবসাইট ইন্টেলিজেন্সে যে ছবি দেয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ আছে পাঁচ জঙ্গীর লাশের ছবি। পুলিশ সদর দফতর থেকে জঙ্গী হিসেবে যে পাঁচজনের লাশের ছবি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের নাম সাইফুল তালুকদার। তিনি জঙ্গী নন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির শেফ বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রেন্টুরেন্টের মালিক সাদাত মেহেদি। সাইফুল তালুকদারের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে। রেস্টুরেন্টে হামলার খবরের সংবাদ টিভিতে দেখে শনিবার তার দুই বোন তাকে খুঁজতে আসেন গুলশানে। আর তার ভায়রা কবির ঢাকায় এসেছেন লাশ নিতে। তিনি জানিয়েছেন, সাইফুল আগে দেশের বাইরে ছিলেন। কয়েক বছর আগে আর্টিজানে শেফের চাকরি নেন তিনি। হলি আর্টিজান বেকারির কর্মচারী নিহত শেফকেও কি জঙ্গী লাশ হিসেবে গণনা করা হয়েছিল? তাছাড়াও আটক হওয়া এক জঙ্গীর কথা বলা হয়েছিল। ওই জঙ্গীর ছবি ও নাম প্রকাশ করেনি জঙ্গীদের ওয়েবসাইট ইন্টেলিজেন্স। এমনকি বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকেও আটক জঙ্গীর সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি । হলি আর্টিজান বেকারির সুনসান নীরবতা ॥ শুক্রবার রাতের জঙ্গী হামলা ও পরে কমান্ডো অপারেশন থান্ডারবোল্টে প্রায় বিধ্বস্ত হলি আর্টিজান বেকারির সামনেও কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে কেবল কয়েক পুলিশ সদস্যকে পাহারায় দেখা যায়। শুক্রবার রাতে ওখানেই বোমার স্পিøন্টারে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন পুলিশের দুই কর্মকর্তা ও আহত হন অনেকেই। বৃষ্টি হওয়ার পরও রক্তের দাগ রয়ে গেছে; কেউ ধুয়ে ফেলারও সাহস করছেন না। ভয়ভীতি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি প্রতিবেশীরা। আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের যাতায়াতে কড়া নিরাপত্তা তল্লাশি হচ্ছে। দু’দিন আগেও যে বেকারি ও আশপাশের এলাকা ছিল প্রাণোচ্ছল মানুষের আনাগোনায় সরব। ওভেন থেকে বের করা গরম রুটি আর বেকারির খাবারের জন্য সকালেই সেখানে হাজির হতেন অনেকে। বিকেলে সবুজ লনে চলত আড্ডা। পোষা প্রাণীদের প্রবেশাধিকার থাকায় অনেকেই শখের প্রাণিটিকে সঙ্গে করে নিয়ে বেকারিতে আসতেন। সবুজ মাঠে খেলত শিশুরাও; সেখানে এখন ছড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ আর সাঁজোয়াযানের চাকার দাগ। বেকারির বাইরের অংশে লেকভিউ ক্লিনিকের পার্কিংয়ে এখনও রাখা পাঁচটি গাড়ি। এর একটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে অভিযানের সময় সাঁজোয়া যানের চাকার নিচে পড়ে। বাকি গাড়ির মালিকদের খবর নেই, দু’দিন ধরে সেগুলো পড়ে আছে সেখানে। পার্কিং এলাকার লোহার ফটক বন্ধ করে ভেতরে-বাইরে পাহারায় পুলিশ। লেকের ওয়াকওয়েতেও পুলিশের পায়চারী। অভিযানের পর বিপদ কেটে গেলেও অনেকেই আর শনিবার ঘর থেকে বের হননি। রবিবার নানা প্রয়োজনে আবার তাদের বের হতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তার মাথায় পুলিশ ব্যারিকেডে পড়তে হচ্ছে নানা প্রশ্নের মুখে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ বাসার বাইরে যাচ্ছেন না। তবে ঈদে যারা বাড়ি ফিরবেন, তাদের না বেরিয়ে উপায় নেই। গুলশান এলাকার বিদেশীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ওই ক্যাফে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেও ছিল পছন্দের গন্তব্য। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেগুলোতে এই বেকারি পুরো প্রাঙ্গণ ভরা থাকত। সবুজ লনে চাদর বিছিয়ে রোদও পোহাতেন অনেকে, ঢাকায় যে দৃশ্য প্রায় বিরল। এখন যেন বিরাজ করছে অনেকটাই কবরের নিস্তব্দতা। স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, গুলশানের একটি রেস্তরাঁয় নৃশংসভাবে হত্যাকা-ের ঘটনায় দু’দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোকের প্রথম দিন রবিবার মুন্সীগঞ্জের সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সরকারী ছুটি সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল থেকেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এমন নির্মমতায় জাতি বিস্মিত। ঘর থেকে বের হতেই শোকের আবহ লক্ষ্য করা যায়।
×