ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে ব্যবসা হারাচ্ছে জিএসকে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৪ জুলাই ২০১৬

বাংলাদেশে ব্যবসা হারাচ্ছে জিএসকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) বাংলাদেশে ব্যবসা হারাচ্ছে। গতবছর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পণ্য বুস্টের মতো হেলথ ফুড ড্রিংক (এইচএফডি) পণ্যের বিক্রয় প্রবৃদ্ধি কমেছে। জিএসকে বাংলাদেশ লিমিটেডের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে জিএসকে বাংলাদেশের কনজিউমার হেলথকেয়ার ব্যবসা কমেছে ১১ শতাংশের বেশি। জানা গেছে, এইচএফডি বা স্বাস্থ্য খাদ্য পানীয় পণ্যের ভোক্তা মূলত ৩ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা। হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এইচএফডি পণ্যের বাজার রয়েছে আনুমানিক ৫৬৭ কোটি টাকার। গত পাঁচ বছরে বার্ষিক ২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে এ বাজার। চলতি বছরও ১০-১৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে বাজারটিতে। তথ্যমতে, জিএসকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য-খাদ্য-পানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আছে হরলিকস, বুস্ট, মালটোভা ও ভিভা। এ চার ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে এ বাজারের ৮৯ শতাংশ। এর মধ্যে হরলিকসের একার দখলে ৭৬ শতাংশ। নানা কারণে গত বছর এসব পণ্যের বাজার খুব একটা ভাল ছিল না, যার প্রভাবে জিএসকে বাংলাদেশের কনজিউমার হেলথকেয়ার ব্যবসা কমেছে ১১.৪০ শতাংশ। বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোক্তা আস্থার ঘাটতি ও অবৈধ আমদানির প্রভাবে কনজিউমার হেলথকেয়ার ব্যবসা কমেছে জিএসকে বাংলাদেশের। অবৈধ আমদানি কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগও নিয়েছে জিএসকে। অবৈধ আমদানি বন্ধে বিশেষ বাণিজ্য প্রণোদনাও দেয়া হয়েছে। জিএসকে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরাম শাকির রহিম বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত জটিলতা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার বৃদ্ধি নিয়ে ২০১৫ সাল ছিল প্রতিষ্ঠানের জন্য চ্যালেঞ্জের। বছরজুড়েই ব্যবসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ওষুধ ব্যবসার কৌশল প্রণয়নের বিষয়ে মনোযোগী ছিল জিএসকে বাংলাদেশ। বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে জিএসকে বাংলাদেশের রেভিনিউ কমেছে ৬.৭৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির রেভিনিউ ছিল ৭১৮ কোটি ৭২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২০১৫ সালে তা নেমে এসেছে ৬৬৯ কোটি ৮৮ লাখ ২৮ হাজার টাকায়। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ রয়েছে, ২০১৪ সালে জিএসকে বাংলাদেশের গ্রস প্রফিট ছিল ২৭১ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ২০১৫ সালে তা কমে হয়েছে ২৬৩ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। কর-পূর্ব মুনাফা ২০১৪ সালে ১১৮ কোটি ২৩ লাখ ৩ হাজার টাকা হলেও ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকায়। জানা যায়, ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ওষুধ আমদানিকারক হিসেবে বাংলাদেশে যাত্রা করে জিএসকে। ১৯৬৭ সালে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে যায়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে হরলিকস উন্মোচন করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) উৎপাদকে পরিণত হয় জিএসকে বাংলাদেশ। ক্রমেই কনজিউমার হেলথ কেয়ার পণ্যে মনোনিবেশ করে জিএসকে। ফলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের ৭০ শতাংশের বেশি রেভিনিউ আসে কনজিউমার হেলথকেয়ার পণ্যের মাধ্যমে। ভারতের পর হরলিকসের দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার বাংলাদেশ। সূত্র জানিয়েছে, ভারতে গত বছর রুপীর অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি পণ্যের দাম কমে যায়। এর প্রভাবে বাংলাদেশে স্থানীয় ট্রেডারদের মাধ্যমে কম দামি হরলিকস আমদানি বেড়ে যায়। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হরলিকস তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়। অবৈধ বাণিজ্য ঠেকাতে সরকারের তরফ থেকেও গ্রহণ করা হয় কঠোর পদক্ষেপ। তারপরও মূল পণ্য হরলিকসের ওপর নির্ভরশীলতা জিএসকে বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, জিএসকে ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। কোম্পানিটির ৮১.৯৮ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকের কাছে, ১৭.০৭ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে এবং ০.৯৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে।
×