ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গত বছরে শেয়ার কেনাবেচা কমেছে হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৪ জুলাই ২০১৬

গত বছরে শেয়ার কেনাবেচা কমেছে হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সমন্বয়কে কেন্দ্র করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রায় পুরোটা সময়ই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ প্রত্যাহারের শঙ্কায় ব্যক্তি ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এ সময় সাইডলাইনে চলে যায়। এতে শেয়ারবাজারে সার্বিক লেনদেনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এর বাইরে মার্জিন ঋণ সঙ্কটের আবর্তে ঋণাত্মক ইক্যুইটির কারণেও হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না। এসব কারণে আগের অর্থবছরের চেয়ে সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গত দুই অর্থবছরের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ২৩৪ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। আর সদ্য শেষ হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৪৭ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট কেনাবেচার মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা কম লেনদেন হয়েছে। যদিও সর্বশেষ অর্থবছরে ১৩ কার্যদিবস বেশি লেনদেন হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৪৩২ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা কম। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) দেয়া তথ্যানুুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৬১ হাজার ৯৯৫। অবশ্য এর অধিকাংশ হিসাবেই কোন শেয়ার নেই। এছাড়া এ বিও হিসাবের উল্লেখযোগ্য অংশই শুধু প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) লটারিতে অংশগ্রহণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এদিকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়কে কেন্দ্র করে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, তা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে সমস্যাটির সমাধান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোকে কোন শেয়ার বিক্রি না করেই নির্ধারিত সময়ের আগেই অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের এপ্রিলে অতিরিক্ত বিনিয়োগের (এক্সপোজার) উপাদান হিসাবের ক্ষেত্র পুনর্বিন্যাসসহ কতিপয় অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মূলধন বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হয়। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৮টির শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে। একক ভিত্তিতে বিনিয়োগ ইক্যুইটির ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ থাকলেও নবেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল ৩৪ শতাংশ, যার পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর সহযোগী ৩৩ প্রতিষ্ঠানকে নবেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা মূলধন যোগান দিয়েছে। গত ডিসেম্বরের নির্দেশনা জারির ফলে এ মূলধন আর ব্যাংকের একক হিসেবে গণ্য হবে না। ফলে নবেম্বরের হিসাবে বিনিয়োগ কমে আসে ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর ফলে ৪৮ ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ছয়টি ব্যাংকের সীমা ২৫ শতাংশের বেশি রয়ে যায়। এ অবস্থায় অতিরিক্ত বিনিয়োগ সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ছয়টি ব্যাংকের এক্সপোজারজনিত সমস্যার সমাধান এরই মধ্যে করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে যেসব ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ রয়েছে, তা ২১ জুলাইয়ের মধ্যে নামিয়ে আনার কথা রয়েছে। এ সময়সীমা বাড়াতে বিভিন্ন পক্ষের দাবি করা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও সময়সীমা বাড়ানোর ঘোষণা দেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, সময়সীমা বাড়াতে হলে আইন পরিবর্তন করতে হবে। তাই এক্সপোজারের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে অতিরিক্ত বিনিয়োগজনিত সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। তবে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগজনিত সমস্যার সমাধান হলেও শেয়ারবাজারের লেনদেন পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। গত এপ্রিলে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ বিষয়টি সমাধান হলেও ডিএসইর লেনদেন ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। মূলত মার্জিন ঋণ সঙ্কটই লেনদেন বাড়ানোর পথে প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শেয়ারবাজারে বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার মার্জিন ঋণ রয়েছে। এ ঋণের একটি বড় অংশই নেগেটিভ ইক্যুইটিতে পরিণত হয়েছে।
×