ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক নানা অজুহাতে ঋণ দেয় না

ঈদে ব্যস্ত জামদানি পল্লীর তাঁতিরা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৪ জুলাই ২০১৬

ঈদে ব্যস্ত জামদানি পল্লীর তাঁতিরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর জামদানি পল্লীর তাঁতিরা। ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ততা বাড়ছে জামদানি পল্লীতে। আর এখানকার তৈরি জামদানি সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকার অভিজাত বিপণিবিতানগুলোয়। অধিক মজুরির আশায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন জামদানি শাড়ির তৈরির তাঁতিরা। দৌলতপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ শেখেন। এরপর। ১৯৮৮ সালে নিজ উদ্যোগে দৌলতপুরে একটি জামদানি শাড়ির তাঁত স্থাপন করে শুরু করেন শাড়ি তৈরির কাজ। চাহিদা থাকায় ও লাভজনক হওয়ায় পরিবারের অন্যদের যুক্ত করেন জামদানি তৈরির কাজে। তাকে অনুসরণ করে অনেকে নিজ নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন তাঁত। এভাবে দৌলতপুর ইউনিয়নে প্রসার হতে থাকে জামদানি শাড়ি তৈরির কার্যক্রম। সরেজমিনে দৌলতপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ওই গ্রামের জামদানি পল্লীতে অর্ধশতাধিক তাঁতে দুই শতাধিক পরিবার জামদানি শাড়ি তৈরির কাজে জড়িত। এখানকার জামদানি কারিগরদের বেশিরভাগ কমবয়সী হলেও শাড়ি তৈরিতে বেশ দক্ষ তারা। সুতার গুণগত মান ও ডিজাইন ভেদে বিভিন্ন দামের শাড়ি তৈরি করে থাকেন এখানকার কারিগররা। প্রতিটি জামদানি শাড়ি ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের মধ্যে তৈরি করা হয়। একসঙ্গে দুজন তাঁতি কাজ করে প্রতিটি শাড়ি তৈরি করেন ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় নিয়ে। এতে তাদের মজুরি খরচ পরে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে ব্যস্ততা বাড়ে এখানকার জামদানি কারিগরদের। চলতি বছর ঈদকে ঘিরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনরাত জামদানি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার জামদানি তাঁতিরা। পাশাপাশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জামদানি পল্লীর নারীরাও। জামদানি শাড়ির কারিগর ফারুক মিয়া বলেন, নিজ বাড়িতে বসে স্বাধীনভাবে শাড়ি তৈরির কাজ করা যায় বলে জামদানি শাড়ি তৈরিতে অনেকে আগ্রহী। জামদানি পল্লীতে কাজ শেখারও সুযোগ রয়েছে। তাই অনেক বেকার যুবকরা কাজ শিখে এখানেই শাড়ি তৈরির কাজে যোগ দিচ্ছে। এতে এলাকার বেকার সমস্যা কমেছে। আরেক কারিগর লিটন মিয়া বলেন, বর্তমান বাজারে এই কাজ করে যে মজুরি পাওয়া যায়, তা খুব একটা বেশি নয়। তাঁত মালিকদের তেমন পুঁজি না থাকায় এবং উপকরণের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আমাদের মজুরি কম। কিন্তু আমাদের লাভ একটাই ছায়াতে বসে বসে কাজ করা যায়। যেকোন সময় নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করা যায়। জামদানি শিল্পীরা জানান, এ জামদানি শাড়ি এ সময় রাজা-বাদশাহ কিংবা জমিদার পরিবারের নারীরা পরতেন। আর এখন পরেন ধনী ও অভিজাত রমণীরা। এ রমণীরা অনেকেই জানেন না তাদের পরিধেয় এই শাড়িটির ভাঁজে-ভাঁজে রয়েছে কত দুঃখ, বেদনা আর বঞ্চনার ইতিহাস। প্রতিটি সুতার ফাঁকে-ফাঁকে রয়েছে শিল্পীদের ঘাম, কষ্ট, বেদনার কাহিনী। তাঁত মালিক দুলাল মিয়া বলেন, আমরা পুঁজির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি তৈরি করতে পারি না। এরপরও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ও ব্যক্তিগতভাবে শৌখিন ক্রেতাদের অর্ডার পাওয়ায় ব্যবসা টিকে আছে। স্বল্পসুদে প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা পাওয়া গেলে স্থানীয়ভাবে বেকার সমস্যা সমাধানসহ এ শিল্পের প্রসার ঘটানো যাবে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের ঋণ দিতে নানা অজুহাত দেখিয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুল হক শরিফ বলেন, এই জামদানি পল্লী নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ জামদানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারীভাবে প্রশিক্ষণ দেয়াসহ প্রয়োজনীয় ঋণ সহযোগিতার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ জামদানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার প্রদান করা হবে। মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই শিল্পটি এখন হুমকির সম্মুখীন। জামদানি শিল্পের কল্যাণে সরকারীভাবে এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই করা যায়নি। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকের মাধ্যমে সহজশর্তে ঋণ সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
×