ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিহতদের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ জুলাই ২০১৬

নিহতদের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশানের রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলায় নিহত ২০ জিম্মির সবাই বিদেশী নাগরিক কি না এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। শনিবার দুপুরের ব্রিফিংয়ে জঙ্গী হামলায় নিহত সবাই বিদেশী বলে জানালেও সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে বলা হয়, এর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশীও থাকতে পারে। নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশী রয়েছেন বলে তাদের পরিবার নিশ্চিত করার প্রেক্ষাপটে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। এর আগে দুপুরে সেনা সদরে সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী জানান, হলি আর্টিজান বেকারিকে কমান্ডো অভিযানে জঙ্গীমুক্ত করার পর ২০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা সবাই বিদেশী এবং রাতেই তাদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয়। দুপুরের পর থেকে স্বজনদের উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, নিহত জিম্মিদের মধ্যে বাংলাদেশীও রয়েছেন। তবে এই হামলায় ঠিক কতজন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন রাত সাড়ে সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর মধ্যেই ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন, ঢাকার একটি আর্ট গ্যালারির সাবেক প্রধান কর্মকর্তা ইশরাত আখন্দ, ল্যাভেন্ডারের মালিকের নাতনী অবিন্তা কবীর এবং আফতাব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ হাসিব খানের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই চারজনই শুক্রবার সন্ধ্যায় কূটনীতিকপাড়া গুলশানে লেকের ধারের ওই রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন এবং সেখানে অন্যদের সঙ্গে আটকা পড়েন। ওই রেস্তরাঁয় তখন বেশ কয়েকজন বিদেশী ছিলেন এবং সকালে কমান্ডো অভিযানে যে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, তার মধ্যে দুইজন শ্রীলঙ্কার ও একজন জাপানের নাগরিক। বাকি সবাই মারা যান। শনিবার বিকেলে তাদের লাশ ওই রেস্তরাঁ থেকে ময়নাতদন্তের জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। নিহত বিদেশীদের মধ্যে তারুষি জৈন নামে এক ভারতীয় তরুণীর মৃত্যুর খবর টুইটার বার্তায় নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। লতিফুর রহমানের মেয়ে সিমিন হোসেনের দুই ছেলের মধ্যে ফারাজ সবার ছোট। ট্রান্সকম কনজ্যুমার প্রডাক্টসের বিপণন কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ তাহনুন ইশতিয়াক রিয়াদ গণমাধ্যমকে বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে ফারাজ ছিল ছোট। ফারাজ ট্রান্সকম গ্রুপে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজও করেছিল। শুক্রবার রাতের খাবার খেতে নিজে গাড়ি চালিয়ে গুলশানের ওই রেস্তরাঁয় ফারাজ গিয়েছিলেন বলে জানান রিয়াদ। নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে জানা যায়, ইশরাত আখন্দ জেডএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনাল ফেজকোর হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি হোটেল ওয়েস্টিন এ্যান্ড রিসোর্টের মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বিজিএমইএ-এর মানবসম্পদ বিভাগের কসনালটেন্টও ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন। ইশরাত আখন্দের মৃত্যুর বিষয়ে নিজের ফেসবুকে চিত্রশিল্পী ও সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী শনিবার বিকেলে লিখেছেন, এই মেঘের ছবিগুলো গত ২৬ জুন তুই তুলেছিলি। তুই আকাশ ভালবাসতি খুব। তাই কি আজ এই মুক্ত আকাশে হারিয়ে গেলি বোন। এই তো সে দিনই না বললি, ‘দেখা হবে আবার কোন মিছিলে... চট্টগ্রামের একটি বুটিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জাইশা কবির সুচনা নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, আমাদের প্রিয় অবিন্তা কবীর আর নেই। দেশের ইতিহাসে নৃশসংতম হামলায় তিনি তা জীবন উৎসর্গ করেছেন। আপনার সবাই তাঁর জন্য দোয়া করুন... এদিকে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কোন জিজ্ঞাসা থাকলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শালের (০১৭৬৯০১২৫২৪) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছে আইএসপিআর।
×