ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমরা খুব বিপদে আছি, আমাদের বাঁচাও’

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩ জুলাই ২০১৬

‘আমরা খুব বিপদে আছি, আমাদের বাঁচাও’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমরা খুব বিপদে আছি। আমাদের বাঁচাও। ওরা বলছে, পুলিশ গুলি চালালে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে।’ শুক্রবার রাতে বাবা রেজাউল করিমের কাছে ফোন করে এভাবেই বাঁচার আকুতি জানান গুলশানের ‘হলি আর্টিজান বেকারি’ রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি থাকা প্রকৌশলী হাসনাত করিম। তিনি একা নন, একইসঙ্গে জিম্মি হন তার স্ত্রী ও দুই সন্তানও। রাতভর আটক থাকার পর শনিবার সকালে যৌথবাহিনী কমান্ডো অভিযান চালিয়ে হাসনাত ও তার পরিবারের সদস্যসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। কন্যা সাফার (১৩) জন্মদিন উদযাপন করতে শুক্রবার ইফতারের পর গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের এই রেস্তরাঁতে গিয়েছিলেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী শারমিন পারভীন এবং পুত্র রায়ান (৮)। সকাল আটটার দিকে কমান্ডো অভিযানে হাসনাতের পরিবার উদ্ধার পায় বলে জানান তার বাবা রেজাউল করিম। সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতনীদের জন্য স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সারারাত গুলশানে ছিলেন তিনি। ছেলেকে ফেরত পাওয়ার পর রেজাউল করিম গণমাধ্যম কর্মীদের ছেলের বরাত দিয়ে বলেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশী সবার ধর্ম পরিচয় জানতে চায় এবং কোরআন থেকে সুরা পড়তে বলে। সুরা পড়তে পারায় রাতে খেতেও দেয়া হয় হাসনাতদের। পুত্রবধূ পারভীন হিজাব পরা থাকায় খাতির করা হয়। তবে যারা সুরা পড়তে পারেনি তাদের নির্যাতন করা হয়। হাসনাত ২০ বছর দেশের বাইরে ছিলেন। ইংল্যান্ডে প্রকৌশল পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এমবিএ করেন। দেড় বছর আগে দেশে ফিরে আসেন তিনি। রেস্তরাঁটিতে থাকা বিদেশী কয়েকজনকে রাতেই হত্যা করা হয় বলে হাসনাত তার মাকে জানিয়েছেন। উদ্ধারের পর পরিবারসহ হাসনাতকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মা জানিয়েছেন, কিছু বিষয়ে জানার পর হাসনাতদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এদিকে ‘হলি আর্টিজান বেকারিতে’ হামলার খবর শুনে ওই রেস্তরাঁয় আটকে পড়াদের স্বজনরা রাতেই গুলশানে ছুটে আসেন। এর মধ্যে আটকে পড়াদের কেউ কেউ মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে নিকটাত্মীয়দের কাছে পরিস্থতি ব্যাখ্যা করেন এবং সাহায্য চান। বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষমাণ গোপাল রায় নামের এক তরুণ জানান, রেস্তরাঁয় তার ভাই সমীর রায় ও ভাগনে রিন্টু আটকা পড়েছে। এরা দুজনই সেখানে বাবুর্চির কাজ করেন। গোপাল রায় বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটা থেকে শনিবার সকাল সোয়া ছয়টা পর্যন্ত যোগাযোগ রাখতে পারেন তার ভাই। এরপর থেকে সমীর তার ভাইয়ের মেসেজের আর কোন জবাব দেননি। এদিকে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলেও ভাইয়ের খোঁজ না পাওয়ায় সমীরের বোন পুতুল ও মিতালী কান্নায় ভেঙে পড়েন। বেলা ১১টার দিকে পুতুল জানান, সমীর ও রিন্টু একই সঙ্গে ভেতরে একটি টয়লেটে জিম্মি। হামলাকারীরা তাদের টয়লেটে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে মেসেজ ও ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছিল। কিন্তু সকাল ছয়টার পর থেকে দুজনের কেউই আর মেসেজে সাড়া দিচ্ছেন না। অবশ্য পরে জানা যায়, কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে সকালেই এ দুজনকে উদ্ধার করে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। রাত আটটায় সমীরের ভাই গোপাল জানান, ভাই ও ভাগনে দুজনকেই ফেরত পেয়েছি। দুজনই অক্ষত আছেন। সমীর এর আগে মালয়েশিয়ার একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। দেশে ফিরে তিনি গুলশানের এই রেস্তরাঁটিতে যোগ দেন। একই রেস্তরাঁয় ভাগনে রিন্টুকে নেন সহকারী হিসেবে।
×